ঢাকা , রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
হান্ডিয়াল নিউজ২৪ ডটকম এ জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

৩০ বছরে ত্রিশ ইঞ্চি উচ্চতা নিয়ে ভালো নেই রিসাত

  • ফেনী প্রতিনিধি
  • আপলোড সময় : ১২:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৩
  • ২১৫ বার দেখা হয়েছে।

ফেনীর জাকের হোসেন রিসাত। জন্ম ১৯৯১ সালে। জন্মের সময় অন্য আর দশটি সাধারণ শিশুর মতোই ছিলেন রিসাত। বয়স বাড়লেও শারীরিকভাবে আর বাড়েননি। ৩০ বছরে বয়সে তার উচ্চতা ত্রিশ ইঞ্চি। এই অবস্থায় রোগশোক আর অভাব-অনটনে দিন পার করছে বাবা হারা রিসাত। এ যুবককে দেশের ক্ষুদ্রমানবের স্বীকৃতি দেওয়া যায় কী না, তা খতিয়ে দেখছে জেলা প্রশাসন।

পরিবার সূত্র জানায়, রিসাতের এখনো একমাত্র ভরসা তার মা নুর হাবা। তিনি ছেলেকে গোসল, খাওয়া থেকে শুরু করে পোশাক পরিয়ে দেওয়াসহ যাবতীয় কাজ করে দিতে হয়। তবে মাঝে মাঝে এলাকার লোকজনের সহযোগিতায় স্থানীয় দোকানে গিয়ে কিছু সময় কাটান তিনি। রিসাত একটু একটু করে কথা বলতে পারেন। তার নাম বলতে পারেন। স্থানীয়দের দেওয়া কিছু টাকা-পয়সা আর প্রতিবন্ধী ভাতায় কাটে রিশাতের জীবন।

জানা গেছে, পরশুরাম উপজেলায় সর্বমোট ১০ জন ছোট আকৃতির মানুষের নাম উঠে আসলেও আকৃতির দিক থেকে সব থেকে ছোট মানুষ হিসেবে রিসাত সবার ওপরে।

পরশুরামের চন্দনা গ্রামের দিনমজুর মো. মোরশেদ খোন্দকারের দুই ছেলে, এক মেয়ে। বড় ছেলে আজিম উদ্দিন বিয়ে করে আলাদা হয়ে যান। মোরশেদ খোন্দকারের দ্বিতীয় সন্তান জাকির হোসেন রিশাত। জন্মের পর থেকে বয়স বাড়লেও শারীরিক গঠনে বেড়ে ওঠেননি তিনি। মাস ছয়েক আগে রিসাতের বাবা মারা যান। পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় এখন বেশ অসহায় হয়ে পড়েছেন রিসাত ও তার মা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুর রহিম বলেন, উচ্চতার সঙ্গে ওজনও কম রিশাতের। জন্মের পর থেকে এই মানুষটাকে কম ভুগতে হয়নি। একজন স্বাভাবিক মানুষ যা করতে পারে, তা করতে পারে না সে। শিশুকালে স্কুলেও গিয়েছিল। কিন্তু স্কুলে সহপাঠীদের নানা মন্তব্য শুনতেন বলে পড়াশোনা আর করা হয়নি তার। বর্তমানে তার শেষ অবলম্বন মা। প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও তা দিয়ে চলছে না তাদের। তাই অভাব-অনটনে মায়ের সঙ্গে অনেকটা মানবেতর জীবন পার করছে রিসাত।

রিসাদের মা নুর হাবা বলেন, শারীরিক দুর্বলতার কারণে সারাবছর ছেলের চিকিৎসা করাতে হয়। তাছাড়া পরিবারের আয়-রোজগার করার মতো কেউ না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছি।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন বলেন, রিশাত প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। তার বয়স ৩২ হলেও আকৃতির দিক থেকে এখনো শিশুর মতো।

পরশুরাম পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেল বলেন, সম্ভবত রিশাত ফেনী জেলার মধ্যে সবচেয়ে ছোট আকৃতির মানুষ। উচ্চতার দিক থেকে তিনি এখনো শিশুর মতো। বিষয়টি এর আগে আমাদের জানা ছিল না। পরবর্তীকালে তাকে সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে সহযোগিতা দেওয়া হবে।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দা শামসাদ বেগম বলেন, বিষয়টি আমি আপনাদের কাছে শুনলাম। রিসাতকে পরবর্তীকালে সবধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।

ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান বলেন, এ যুবককে দেশের ক্ষুদ্রমানব হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যায় কী না, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি তাকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

৩০ বছরে ত্রিশ ইঞ্চি উচ্চতা নিয়ে ভালো নেই রিসাত

আপলোড সময় : ১২:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৩

ফেনীর জাকের হোসেন রিসাত। জন্ম ১৯৯১ সালে। জন্মের সময় অন্য আর দশটি সাধারণ শিশুর মতোই ছিলেন রিসাত। বয়স বাড়লেও শারীরিকভাবে আর বাড়েননি। ৩০ বছরে বয়সে তার উচ্চতা ত্রিশ ইঞ্চি। এই অবস্থায় রোগশোক আর অভাব-অনটনে দিন পার করছে বাবা হারা রিসাত। এ যুবককে দেশের ক্ষুদ্রমানবের স্বীকৃতি দেওয়া যায় কী না, তা খতিয়ে দেখছে জেলা প্রশাসন।

পরিবার সূত্র জানায়, রিসাতের এখনো একমাত্র ভরসা তার মা নুর হাবা। তিনি ছেলেকে গোসল, খাওয়া থেকে শুরু করে পোশাক পরিয়ে দেওয়াসহ যাবতীয় কাজ করে দিতে হয়। তবে মাঝে মাঝে এলাকার লোকজনের সহযোগিতায় স্থানীয় দোকানে গিয়ে কিছু সময় কাটান তিনি। রিসাত একটু একটু করে কথা বলতে পারেন। তার নাম বলতে পারেন। স্থানীয়দের দেওয়া কিছু টাকা-পয়সা আর প্রতিবন্ধী ভাতায় কাটে রিশাতের জীবন।

জানা গেছে, পরশুরাম উপজেলায় সর্বমোট ১০ জন ছোট আকৃতির মানুষের নাম উঠে আসলেও আকৃতির দিক থেকে সব থেকে ছোট মানুষ হিসেবে রিসাত সবার ওপরে।

পরশুরামের চন্দনা গ্রামের দিনমজুর মো. মোরশেদ খোন্দকারের দুই ছেলে, এক মেয়ে। বড় ছেলে আজিম উদ্দিন বিয়ে করে আলাদা হয়ে যান। মোরশেদ খোন্দকারের দ্বিতীয় সন্তান জাকির হোসেন রিশাত। জন্মের পর থেকে বয়স বাড়লেও শারীরিক গঠনে বেড়ে ওঠেননি তিনি। মাস ছয়েক আগে রিসাতের বাবা মারা যান। পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় এখন বেশ অসহায় হয়ে পড়েছেন রিসাত ও তার মা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুর রহিম বলেন, উচ্চতার সঙ্গে ওজনও কম রিশাতের। জন্মের পর থেকে এই মানুষটাকে কম ভুগতে হয়নি। একজন স্বাভাবিক মানুষ যা করতে পারে, তা করতে পারে না সে। শিশুকালে স্কুলেও গিয়েছিল। কিন্তু স্কুলে সহপাঠীদের নানা মন্তব্য শুনতেন বলে পড়াশোনা আর করা হয়নি তার। বর্তমানে তার শেষ অবলম্বন মা। প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও তা দিয়ে চলছে না তাদের। তাই অভাব-অনটনে মায়ের সঙ্গে অনেকটা মানবেতর জীবন পার করছে রিসাত।

রিসাদের মা নুর হাবা বলেন, শারীরিক দুর্বলতার কারণে সারাবছর ছেলের চিকিৎসা করাতে হয়। তাছাড়া পরিবারের আয়-রোজগার করার মতো কেউ না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছি।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন বলেন, রিশাত প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। তার বয়স ৩২ হলেও আকৃতির দিক থেকে এখনো শিশুর মতো।

পরশুরাম পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেল বলেন, সম্ভবত রিশাত ফেনী জেলার মধ্যে সবচেয়ে ছোট আকৃতির মানুষ। উচ্চতার দিক থেকে তিনি এখনো শিশুর মতো। বিষয়টি এর আগে আমাদের জানা ছিল না। পরবর্তীকালে তাকে সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে সহযোগিতা দেওয়া হবে।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দা শামসাদ বেগম বলেন, বিষয়টি আমি আপনাদের কাছে শুনলাম। রিসাতকে পরবর্তীকালে সবধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।

ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান বলেন, এ যুবককে দেশের ক্ষুদ্রমানব হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যায় কী না, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি তাকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।