ঢাকা , বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
হান্ডিয়াল নিউজ২৪ ডটকম এ জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

স্কুলের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর বিদায়ে যে সম্মান জানালেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুলের পরিচ্ছন্নতাকর্মী সন্তোষ লাল। ৩৫ বছরের কর্মজীবন শেষে ষাটোর্ধ্ব পরিচ্ছন্নতাকর্মীর বিদায়ের দিনটি পরিণত হয়েছিল আবেগঘন মিলনমেলায়। সাবেক– বর্তমান শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সহকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে রাজকীয়ভাবে বিদায় নেন ফুলসজ্জিত গাড়িতে করে। বিদায়ের সময় স্কুলের স্কাউট শিক্ষার্থীরা দেন বিদায়ী গার্ড অব অনার।

রোববার (২২ জুন) তার বিদায় উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে সন্তোষ লালের গলায় ফুলের মালা, হাতে উপহারের ব্যাগ তোলে দেন সবাই।

স্কুল সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৩ সালে মা সুন্দরী রানীর হাত ধরে মাত্র ৯-১০ বছর বয়সে এ বিদ্যালয়ে আসেন সন্তোষ লাল। পরে বাবা কানু লালও যোগ দেন পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে। সেই উত্তরাধিকার সূত্রে সন্তোষ ও তার স্ত্রী সনজু রানী দীর্ঘ বছর ধরে স্কুলের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিন মেয়ের জনক সন্তোষ লাল বর্তমানে ফেনী পৌরসভার সুলতানপুরে বসবাস করছেন।

এদিন তার বিদায়কে ঘিরে আয়োজকরা একটি প্রাইভেটকার ফুল দিয়ে সুসজ্জিত করেন। বিদায় সংবর্ধনায় ফুলের মালা পরিয়ে নগদ প্রায় ৪ লাখ টাকা ও বিভিন্ন উপহার সামগ্রী হাতে তুলে দেন তারা। পরে তাকে ফুল সুসজ্জিত প্রাইভেটকারে বসিয়ে রাজকীয় সম্মানে পৌঁছে দেন বাড়িতে।

সন্তোষ লাল কালবেলাকে বলেন, স্কুলের এমন আয়োজনে অনেক আনন্দিত। পাশাপাশি স্কুল ছেড়ে যাওয়াতে খারাপ লাগছে। আমার মতো একজন মানুষকে এভাবে সবাই সম্মান জানিয়ে বিদায় দেবে এটি কখনো ভাবিনি। এখন শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। দীর্ঘদিন এ বিদ্যালয়ে ছিলাম, অনেক স্মৃতি রয়েছে। সেগুলো আঁকড়ে ধরে বাকি জীবন কাটিয়ে দেব।

ফেনী সেন্ট্রাল স্কুলের বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল কালবেলাকে বলেন, সন্তোষ দার পরিবারও এ বিদ্যালয়ের জন্য কাজ করে গিয়েছেন। সেন্ট্রাল উচ্চ বিদ্যালয় তাদের আজীবন স্মরণ করবে। এমন একজন মানুষকে এমন আয়োজনে বিদায় দিতে পেরে ভালো লাগছে।

ফেনী সেন্ট্রাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন তসলিম বলেন, বিদ্যালয়ের সাবেক বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ আয়োজনে অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি বর্তমান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির পক্ষ থেকে সন্তোষ লালকে উপহার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া স্কুলের প্রভাতী ও দিবা শাখার শিক্ষার্থী এবং সাবেক সেন্ট্রালিয়ানরাও নগদ অর্থ উপহার দিয়েছেন। তার মতো এমন নিবেদিত মানুষকে আমরা বিদায় দিতে পেরেছি এটিই সবচেয়ে বেশি আনন্দের।

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

স্কুলের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর বিদায়ে যে সম্মান জানালেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

আপলোড সময় : ০৮:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুলের পরিচ্ছন্নতাকর্মী সন্তোষ লাল। ৩৫ বছরের কর্মজীবন শেষে ষাটোর্ধ্ব পরিচ্ছন্নতাকর্মীর বিদায়ের দিনটি পরিণত হয়েছিল আবেগঘন মিলনমেলায়। সাবেক– বর্তমান শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সহকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে রাজকীয়ভাবে বিদায় নেন ফুলসজ্জিত গাড়িতে করে। বিদায়ের সময় স্কুলের স্কাউট শিক্ষার্থীরা দেন বিদায়ী গার্ড অব অনার।

রোববার (২২ জুন) তার বিদায় উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে সন্তোষ লালের গলায় ফুলের মালা, হাতে উপহারের ব্যাগ তোলে দেন সবাই।

স্কুল সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৩ সালে মা সুন্দরী রানীর হাত ধরে মাত্র ৯-১০ বছর বয়সে এ বিদ্যালয়ে আসেন সন্তোষ লাল। পরে বাবা কানু লালও যোগ দেন পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে। সেই উত্তরাধিকার সূত্রে সন্তোষ ও তার স্ত্রী সনজু রানী দীর্ঘ বছর ধরে স্কুলের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিন মেয়ের জনক সন্তোষ লাল বর্তমানে ফেনী পৌরসভার সুলতানপুরে বসবাস করছেন।

এদিন তার বিদায়কে ঘিরে আয়োজকরা একটি প্রাইভেটকার ফুল দিয়ে সুসজ্জিত করেন। বিদায় সংবর্ধনায় ফুলের মালা পরিয়ে নগদ প্রায় ৪ লাখ টাকা ও বিভিন্ন উপহার সামগ্রী হাতে তুলে দেন তারা। পরে তাকে ফুল সুসজ্জিত প্রাইভেটকারে বসিয়ে রাজকীয় সম্মানে পৌঁছে দেন বাড়িতে।

সন্তোষ লাল কালবেলাকে বলেন, স্কুলের এমন আয়োজনে অনেক আনন্দিত। পাশাপাশি স্কুল ছেড়ে যাওয়াতে খারাপ লাগছে। আমার মতো একজন মানুষকে এভাবে সবাই সম্মান জানিয়ে বিদায় দেবে এটি কখনো ভাবিনি। এখন শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। দীর্ঘদিন এ বিদ্যালয়ে ছিলাম, অনেক স্মৃতি রয়েছে। সেগুলো আঁকড়ে ধরে বাকি জীবন কাটিয়ে দেব।

ফেনী সেন্ট্রাল স্কুলের বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল কালবেলাকে বলেন, সন্তোষ দার পরিবারও এ বিদ্যালয়ের জন্য কাজ করে গিয়েছেন। সেন্ট্রাল উচ্চ বিদ্যালয় তাদের আজীবন স্মরণ করবে। এমন একজন মানুষকে এমন আয়োজনে বিদায় দিতে পেরে ভালো লাগছে।

ফেনী সেন্ট্রাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন তসলিম বলেন, বিদ্যালয়ের সাবেক বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ আয়োজনে অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি বর্তমান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির পক্ষ থেকে সন্তোষ লালকে উপহার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া স্কুলের প্রভাতী ও দিবা শাখার শিক্ষার্থী এবং সাবেক সেন্ট্রালিয়ানরাও নগদ অর্থ উপহার দিয়েছেন। তার মতো এমন নিবেদিত মানুষকে আমরা বিদায় দিতে পেরেছি এটিই সবচেয়ে বেশি আনন্দের।