ঢাকা , রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
হান্ডিয়াল নিউজ২৪ ডটকম এ জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

সিরাজগঞ্জে জনপ্রিয় হচ্ছে ফুল চাষ

  • হান্ডিয়াল নিউজ
  • আপলোড সময় : ১১:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ নভেম্বর ২০২৩
  • ১৭১ বার দেখা হয়েছে।

সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার চরগুয়াগাতী গ্রামে গেলে দেখা যায় রাস্তার ঢালে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন জাতের ফুল। কোথাও কোথাও আবার জমিতে প্রথাগত ফসলের বদলে লাগানো হয়েছে ফুলের চারা। স্থানীয়রা বলছে, শুধু চরগুয়াগাতী নয়, পুরো সিরাজগঞ্জেই এখন বাণিজ্যিক ফুল চাষ বাড়ছে। তবে এর পুরোটাই ব্যক্তিগত উদ্যোগে। এ জেলায় ফুল চাষের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য চাষীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জে ব্যাপক আকারে না হলেও জেলার কিছু স্থানে বিশেষ করে সদর, উল্লাপাড়া ও কাজীপুর উপজেলায় কৃষকরা নিজ উদ্যোগে ফুল চাষ করছেন। বর্তমানে জেলায় শতাধিক ফুলচাষী আছেন। লাভবান হওয়ায় তারা কয়েক বছর ধরে ফুল চাষ করে আসছেন। রবিশস্য ও ধান আবাদ করে যা লাভ হয়, ফুলে লাভ তার চেয়ে বেশি। তাছাড়া ফুল উৎপাদনে সময় ও খরচ অনেক কম লাগে। এ কারণে অন্য কৃষকদের মধ্যেও ফুল চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

স্থানীয় ফুলচাষীরা জানান, নিজ উদ্যোগে বাগান গড়ে তারা গোলাপ, গাঁদা, ডালিয়া, সূর্যমুখী, হাসনাহেনা, গন্ধরাজ, জবা, চন্দ্রমল্লিকা, গ্লাডিওলাসসহ নানা জাতের ফুল উৎপাদন করছেন। বাজারে এসব ফুলের ভালো চাহিদা আছে। ফুলের বাগান দেখতে নিয়মিত দর্শনার্থীরা আসছেন। এতে বাগানেই অল্পবিস্তর ফুল বিক্রি হয়।

চরগুয়াগাতীর ফুলচাষীদের একজন ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে বীজ এনে এবার আড়াই বিঘা জমিতে তিনি ফুল চাষ  করেছেন। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। তবে এরই মধ্যে প্রায় ১ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছেন। এখনো জমিতে যে পরিমাণ ফুল রয়েছে, তাতে কমপক্ষে আরো ১ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছেন তিনি।

ইদ্রিস আলী আরো বলেন, চরগুয়াগাতীতে কাঠমালতি, গ্লাডিওলাস, ডালিয়া, জিপসি, আলমেন্দা, গাঁদা, সূর্যমুখী, বেলী, রজনীগন্ধা, গোলাপসহ প্রায় ১৫ রকম বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ হচ্ছে। জমির পাশাপাশি কাঁচা-পাকা রাস্তার ঢালেও ফুলের চাষ হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে প্রায় ৩০ জন চাষী ফুল চাষের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এখানকার উৎপাদিত ফুল রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।

কাজীপুর উপজেলার একডালা গ্রামের আমিনুল ইসলাম জানান, গত বছর নার্সারিতে লোকসান হওয়ায় বাগানের একটি অংশে ফুল চাষ করেন। এতে ভালো লাভ হওয়ায় এবার নার্সারি বাদ দিয়ে ১০ বিঘা জমিতে গোলাপ, গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ করছেন। ফুল চাষ সম্পর্কে জানার জন্য যশোরে গিয়ে অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে ধান বা অন্যান্য ফসল আবাদ করে বছরে ২০-২৫ হাজার টাকার উপরে লাভ করা যায় না। কিন্তু একই পরিমাণ জমিতে ফুল চাষ করে খরচ বাদে কমপক্ষে ১ লাখ টাকা অনায়াসে লাভ করা যায়।

তিনি জানান, প্রতি বছরই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, ঈদ, পূজা, পহেলা ফাল্গুন এবং বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষসহ বিশেষ বিশেষ দিনগুলোয় ফুলের চাহিদা বেড়ে যায়। এ সময় দামও বাড়ে। ফুল চাষ করে এখন বছরে প্রায় ২০ লাখ টাকা আয় হচ্ছে বলে জানান তিনি।

একই গ্রামের রাজু নামের আরেক ফুলচাষী বলেন, আমিনুলকে দেখে আমিও প্রায় চার বিঘা জমিতে গোলাপ, গাঁদা, গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করছি। এতে ভালো লাভও হচ্ছে।

উল্লাপাড়া উপজেলা উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কৃষি কর্মকর্তা আজমল হক জানান, উপজেলার চরগুয়াগাতী গ্রামে কয়েক বছর ধরেই ফুল চাষ হচ্ছে। এখন ফুল চাষের পরিধি আরো বেড়েছে।

তিনি আরো বলেন, ফুল চাষের কারণে নারীদেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। কৃষি অফিসের একটি টিম নিয়মিত মাঠে কাজ করছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাবিবুল হক বলেন, সিরাজগঞ্জে সেভাবে ফুল চাষ হচ্ছে না। তবে সদর, উল্লাপাড়া ও কাজীপুর উপজেলায় কিছু কৃষক নিজ উদ্যোগে ফুল চাষ করছেন। এতে ফলন যেমন ভালো হচ্ছে, তেমনি কৃষক দামও পাচ্ছেন। যার ফলে জেলায় ফুল চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা ফুল ও ফলচাষীদের নিবন্ধন করাচ্ছি। এরই মধ্যে জেলায় ৬৫ জন চাষী নিবন্ধিত হয়েছেন। অন্যদেরও পর্যায়ক্রমে নিবন্ধন করা হবে। কৃষকদের ফুল চাষের ব্যাপারে বিভিন্ন পরামর্শও দেয়া হচ্ছে। ফুল চাষের আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে চাষীদের হর্টিকালচার সেন্টারে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য তালিকা করা হচ্ছে। চাষীদের প্রশিক্ষিত করতে পারলে জেলায় ফুলের চাষ ও উৎপাদন বাড়বে।

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

সিরাজগঞ্জে জনপ্রিয় হচ্ছে ফুল চাষ

আপলোড সময় : ১১:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ নভেম্বর ২০২৩

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার চরগুয়াগাতী গ্রামে গেলে দেখা যায় রাস্তার ঢালে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন জাতের ফুল। কোথাও কোথাও আবার জমিতে প্রথাগত ফসলের বদলে লাগানো হয়েছে ফুলের চারা। স্থানীয়রা বলছে, শুধু চরগুয়াগাতী নয়, পুরো সিরাজগঞ্জেই এখন বাণিজ্যিক ফুল চাষ বাড়ছে। তবে এর পুরোটাই ব্যক্তিগত উদ্যোগে। এ জেলায় ফুল চাষের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য চাষীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জে ব্যাপক আকারে না হলেও জেলার কিছু স্থানে বিশেষ করে সদর, উল্লাপাড়া ও কাজীপুর উপজেলায় কৃষকরা নিজ উদ্যোগে ফুল চাষ করছেন। বর্তমানে জেলায় শতাধিক ফুলচাষী আছেন। লাভবান হওয়ায় তারা কয়েক বছর ধরে ফুল চাষ করে আসছেন। রবিশস্য ও ধান আবাদ করে যা লাভ হয়, ফুলে লাভ তার চেয়ে বেশি। তাছাড়া ফুল উৎপাদনে সময় ও খরচ অনেক কম লাগে। এ কারণে অন্য কৃষকদের মধ্যেও ফুল চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

স্থানীয় ফুলচাষীরা জানান, নিজ উদ্যোগে বাগান গড়ে তারা গোলাপ, গাঁদা, ডালিয়া, সূর্যমুখী, হাসনাহেনা, গন্ধরাজ, জবা, চন্দ্রমল্লিকা, গ্লাডিওলাসসহ নানা জাতের ফুল উৎপাদন করছেন। বাজারে এসব ফুলের ভালো চাহিদা আছে। ফুলের বাগান দেখতে নিয়মিত দর্শনার্থীরা আসছেন। এতে বাগানেই অল্পবিস্তর ফুল বিক্রি হয়।

চরগুয়াগাতীর ফুলচাষীদের একজন ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে বীজ এনে এবার আড়াই বিঘা জমিতে তিনি ফুল চাষ  করেছেন। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। তবে এরই মধ্যে প্রায় ১ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছেন। এখনো জমিতে যে পরিমাণ ফুল রয়েছে, তাতে কমপক্ষে আরো ১ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছেন তিনি।

ইদ্রিস আলী আরো বলেন, চরগুয়াগাতীতে কাঠমালতি, গ্লাডিওলাস, ডালিয়া, জিপসি, আলমেন্দা, গাঁদা, সূর্যমুখী, বেলী, রজনীগন্ধা, গোলাপসহ প্রায় ১৫ রকম বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ হচ্ছে। জমির পাশাপাশি কাঁচা-পাকা রাস্তার ঢালেও ফুলের চাষ হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে প্রায় ৩০ জন চাষী ফুল চাষের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এখানকার উৎপাদিত ফুল রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।

কাজীপুর উপজেলার একডালা গ্রামের আমিনুল ইসলাম জানান, গত বছর নার্সারিতে লোকসান হওয়ায় বাগানের একটি অংশে ফুল চাষ করেন। এতে ভালো লাভ হওয়ায় এবার নার্সারি বাদ দিয়ে ১০ বিঘা জমিতে গোলাপ, গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ করছেন। ফুল চাষ সম্পর্কে জানার জন্য যশোরে গিয়ে অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে ধান বা অন্যান্য ফসল আবাদ করে বছরে ২০-২৫ হাজার টাকার উপরে লাভ করা যায় না। কিন্তু একই পরিমাণ জমিতে ফুল চাষ করে খরচ বাদে কমপক্ষে ১ লাখ টাকা অনায়াসে লাভ করা যায়।

তিনি জানান, প্রতি বছরই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, ঈদ, পূজা, পহেলা ফাল্গুন এবং বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষসহ বিশেষ বিশেষ দিনগুলোয় ফুলের চাহিদা বেড়ে যায়। এ সময় দামও বাড়ে। ফুল চাষ করে এখন বছরে প্রায় ২০ লাখ টাকা আয় হচ্ছে বলে জানান তিনি।

একই গ্রামের রাজু নামের আরেক ফুলচাষী বলেন, আমিনুলকে দেখে আমিও প্রায় চার বিঘা জমিতে গোলাপ, গাঁদা, গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করছি। এতে ভালো লাভও হচ্ছে।

উল্লাপাড়া উপজেলা উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কৃষি কর্মকর্তা আজমল হক জানান, উপজেলার চরগুয়াগাতী গ্রামে কয়েক বছর ধরেই ফুল চাষ হচ্ছে। এখন ফুল চাষের পরিধি আরো বেড়েছে।

তিনি আরো বলেন, ফুল চাষের কারণে নারীদেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। কৃষি অফিসের একটি টিম নিয়মিত মাঠে কাজ করছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাবিবুল হক বলেন, সিরাজগঞ্জে সেভাবে ফুল চাষ হচ্ছে না। তবে সদর, উল্লাপাড়া ও কাজীপুর উপজেলায় কিছু কৃষক নিজ উদ্যোগে ফুল চাষ করছেন। এতে ফলন যেমন ভালো হচ্ছে, তেমনি কৃষক দামও পাচ্ছেন। যার ফলে জেলায় ফুল চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা ফুল ও ফলচাষীদের নিবন্ধন করাচ্ছি। এরই মধ্যে জেলায় ৬৫ জন চাষী নিবন্ধিত হয়েছেন। অন্যদেরও পর্যায়ক্রমে নিবন্ধন করা হবে। কৃষকদের ফুল চাষের ব্যাপারে বিভিন্ন পরামর্শও দেয়া হচ্ছে। ফুল চাষের আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে চাষীদের হর্টিকালচার সেন্টারে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য তালিকা করা হচ্ছে। চাষীদের প্রশিক্ষিত করতে পারলে জেলায় ফুলের চাষ ও উৎপাদন বাড়বে।