ঢাকা , বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
হান্ডিয়াল নিউজ২৪ ডটকম এ জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

সাংকটে দেশের চা শিল্প উৎপাদন খরচের চেয়ে নিলাম মূল্য কম

অনাবৃষ্টি, তীব্র রোদে সংকটে পড়েছে সিলেটের চা-বাগানগুলো। অতিরিক্ত গরমে ‘রেড স্পাইডারের আক্রমণের আশঙ্কা করা হচ্ছে। কয়েক দিন আগে বৃষ্টিতে বাগানগুলো কিছুটা চাঙ্গা হয়ে উঠলেও এখন পুড়ছে প্রচণ্ড খরতাপে।

সিলেট আবহাওয়া অফিস জানায়, শুক্রবার সিলেটের তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এ বছরের রেকর্ড। বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বুধবার ছিল ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি।

এদিকে চায়ের নিলাম বাজারে দাম না ওঠায় বাগান মালিকরা এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে পারছেন না জানিয়ে বলেছেন, নিলাম বাজারে প্রতি কেজি চায়ের মূল্য ন্যূনতম ৩০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। বর্তমানে নিলাম মূল্য উৎপাদন খরচের চেয়ে কম। তাই অনেক বাগান মালিক শ্রকিদের মজুরি দিতে পারছেন না। নিনা আফজাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ  ও বালিসিরা হিল টি কো লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল রশিদ চৌধুরীর নেতৃত্বে বাগান মালিকদের প্রতিনিধিদল, চা-শিল্পে বিরাজমান সংকট উত্তরণে গত বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজার ও সিলেটের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী  বরাবর।

অন্যদিকে হবিগঞ্জের বেশ কয়েকটি বাগান সংশ্লিষ্টরা  জানিয়েছেন, তীব্র রোদে অনেক বাগানের পাতা মৃয়মাণ। নালুয়া চা-বাগানের ব্যবস্থাপক ইফতেখার এনাম বলেন, গত বছর যে সময়ে ২৮ হাজার কেজির মতো পাতা সংগ্রহ করা হয়, এ বছর এই সময় মাত্র ৮ হাজার কেজি পাতা সংগ্রহ হয়। খরায় চা উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। গাছের কুঁড়ি শক্ত হয়ে যাওয়ায় পাতা তোলা যাচ্ছে না। চা উৎপাদনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। ‘অতি গরমে চা-বাগানের অবস্থা নাজুক’ বলেন, আমু চা-বাগানের ম্যানেজার জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, গরমে মশা ও অন্যান্য পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়েছে। উৎপাদনও কমেছে।

দেশে ১৬৮টি বাগানের মধ্যে সিলেটেই ১৩৮টি বাগান রয়েছে। গত বছর দেশের ১৭০ বছরের ইতিহাস ভেঙে সারা দেশে ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি চা-উৎপাদন হয়। কিন্তু এ বছর পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। নর্থ সিলেট ভ্যালী বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নোমান হায়দার চৌধুরী বলেন, বর্তমানে শিল্পটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে।

বাগান মালিকরা বলেন, ছোট-বড় প্রায় সব বাগানই কৃষি ব্যাংক থেকে হাইপোথেটিক লোন নিয়ে থাকে। চায়ের নিলাম মূল্য সরাসরি কৃষি ব্যাংকে জমা হয়ে তা পরিশোধ করা হয়। ঋণ পরিশোধের সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে বর্তমানে ১৩ শতাংশ করা হয়েছে। বর্তমান অবস্থায় তা পরিশোধ করা বাগানগুলোর পক্ষে অসম্ভব।

বাগান মালিকদের দাবি, বিশেষ বিবেচনায় ঋণ পরিশোধের সুদের হার ৯ শতাংশ রাখতে হবে। তাছাড়া সহজ শর্তে রুগ্ণ বা গড়ে উঠছে এমন বাগানের জন্য ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করার জন্যও তারা দাবি জানিয়েছেন। চা-শিল্পের বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতি বিবেচনায় বর্তমানে এই শিল্পের ভ্যাট ও ট্যাক্স থেকে সাময়িক অব্যাহতি প্রয়োজন। বাগান মালিকরা বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চা-আমদানির জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। চা-শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমদানির ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করে চা-আমদানি নিরুত্সাহিত করা জরুরি।

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

সাংকটে দেশের চা শিল্প উৎপাদন খরচের চেয়ে নিলাম মূল্য কম

আপলোড সময় : ০৩:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মে ২০২৪

অনাবৃষ্টি, তীব্র রোদে সংকটে পড়েছে সিলেটের চা-বাগানগুলো। অতিরিক্ত গরমে ‘রেড স্পাইডারের আক্রমণের আশঙ্কা করা হচ্ছে। কয়েক দিন আগে বৃষ্টিতে বাগানগুলো কিছুটা চাঙ্গা হয়ে উঠলেও এখন পুড়ছে প্রচণ্ড খরতাপে।

সিলেট আবহাওয়া অফিস জানায়, শুক্রবার সিলেটের তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এ বছরের রেকর্ড। বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বুধবার ছিল ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি।

এদিকে চায়ের নিলাম বাজারে দাম না ওঠায় বাগান মালিকরা এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে পারছেন না জানিয়ে বলেছেন, নিলাম বাজারে প্রতি কেজি চায়ের মূল্য ন্যূনতম ৩০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। বর্তমানে নিলাম মূল্য উৎপাদন খরচের চেয়ে কম। তাই অনেক বাগান মালিক শ্রকিদের মজুরি দিতে পারছেন না। নিনা আফজাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ  ও বালিসিরা হিল টি কো লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল রশিদ চৌধুরীর নেতৃত্বে বাগান মালিকদের প্রতিনিধিদল, চা-শিল্পে বিরাজমান সংকট উত্তরণে গত বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজার ও সিলেটের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী  বরাবর।

অন্যদিকে হবিগঞ্জের বেশ কয়েকটি বাগান সংশ্লিষ্টরা  জানিয়েছেন, তীব্র রোদে অনেক বাগানের পাতা মৃয়মাণ। নালুয়া চা-বাগানের ব্যবস্থাপক ইফতেখার এনাম বলেন, গত বছর যে সময়ে ২৮ হাজার কেজির মতো পাতা সংগ্রহ করা হয়, এ বছর এই সময় মাত্র ৮ হাজার কেজি পাতা সংগ্রহ হয়। খরায় চা উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। গাছের কুঁড়ি শক্ত হয়ে যাওয়ায় পাতা তোলা যাচ্ছে না। চা উৎপাদনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। ‘অতি গরমে চা-বাগানের অবস্থা নাজুক’ বলেন, আমু চা-বাগানের ম্যানেজার জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, গরমে মশা ও অন্যান্য পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়েছে। উৎপাদনও কমেছে।

দেশে ১৬৮টি বাগানের মধ্যে সিলেটেই ১৩৮টি বাগান রয়েছে। গত বছর দেশের ১৭০ বছরের ইতিহাস ভেঙে সারা দেশে ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি চা-উৎপাদন হয়। কিন্তু এ বছর পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। নর্থ সিলেট ভ্যালী বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নোমান হায়দার চৌধুরী বলেন, বর্তমানে শিল্পটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে।

বাগান মালিকরা বলেন, ছোট-বড় প্রায় সব বাগানই কৃষি ব্যাংক থেকে হাইপোথেটিক লোন নিয়ে থাকে। চায়ের নিলাম মূল্য সরাসরি কৃষি ব্যাংকে জমা হয়ে তা পরিশোধ করা হয়। ঋণ পরিশোধের সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে বর্তমানে ১৩ শতাংশ করা হয়েছে। বর্তমান অবস্থায় তা পরিশোধ করা বাগানগুলোর পক্ষে অসম্ভব।

বাগান মালিকদের দাবি, বিশেষ বিবেচনায় ঋণ পরিশোধের সুদের হার ৯ শতাংশ রাখতে হবে। তাছাড়া সহজ শর্তে রুগ্ণ বা গড়ে উঠছে এমন বাগানের জন্য ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করার জন্যও তারা দাবি জানিয়েছেন। চা-শিল্পের বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতি বিবেচনায় বর্তমানে এই শিল্পের ভ্যাট ও ট্যাক্স থেকে সাময়িক অব্যাহতি প্রয়োজন। বাগান মালিকরা বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চা-আমদানির জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। চা-শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমদানির ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করে চা-আমদানি নিরুত্সাহিত করা জরুরি।