পাবনার চাটমোহর উপজেলার জার্জিস মোড় থেকে মান্নানগরের আঞ্চলিক মহাসড়কটি কয়েক বছর ধরে বেহাল অবস্থায় ছিল। দীর্ঘদিনের ভোগান্তির পর সংস্কার কাজ শুরু হওয়ায় এই সড়কের চলাচলকারীরা একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। কিন্তু সেই স্বস্তি বেশিদিন টেকেনি। সংস্কার কাজ এখন অভিশাপে পরিণত হয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর লাপাত্তা হয়েছেন ঠিকাদার,ফলে বন্ধ রয়েছে সংস্কার কাজ। এতে দুর্ভোগের শেষ নেই সাধারণ মানুষের। সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবিতে এলাকাবাসীর উদ্যোগে মানববন্ধনও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জানা গেছে,২০২৪ সালের ১১ জুন তুর্ণা এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড নামের সিরাজগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এই সড়কটি সংস্কারের কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। ১৮ কিলোমিটারের এই সড়ক সংস্কারের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ কোটি ৪২ লাখ ৬১ হাজার টাকা। কাজ সমাপ্ত করার শেষ সময় ১০ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু সড়কে ১২ কিলোমিটার পাথর ফেলেই লাপাত্তা ঠিকাদার।
ঠিকাদার আজাদুর রহমানের বিরুদ্ধে এর আগেও অনেক কাজ শেষ না করেই যোগসাজশে কোটি কোটি টাকার বিল তোলার অভিযোগে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।
সরজমিন দেখা যায়,১৮ কিলোমিটার সড়কের ১২ কিলোমিটারের পুরনো কার্পেটিং উঠিয়ে নতুন করে পাথর দেয়া হয়েছে। সেই পাথর এখন উঠে চলাচলের বাধা সৃষ্টি করছে। বাকি ৬ কিলোমিটার ব্যস্ততম এই সড়কে হাঁটু সমান বালু হয়েছে। বালি আর ধুলামাখা পথ দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলছে মালবাহী পরিবহনসহ যাত্রীবহনকারী ছোট বড় গণপরিবহন।
সড়কের পাশের সকল গাছপালা ইতিমধ্যেই নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরবাড়িগুলো ধুলায় ঢাকা পড়েছে। সড়কের ধুলার কারণে একদিকে যেমন যান চলাচলের বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগতভাবে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে স্থানীয় মানুষদের।
স্থানীয় বাসিন্দা,পথচারী ও গাড়ির চালকরা জানান,এই সড়কটি জেলার অন্যতম ব্যস্ততম আঞ্চলিক মহাসড়ক। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে হাজার হাজার গাড়ি চলাচল করতো। কিন্তু এখন যে অবস্থা তাতে বালুর মধ্যে পড়ে অনেক গাড়ি আটকা পড়ে। অনেকে আহত হয়েছেন। পরিচ্ছন্ন পোশাকে একবার এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করলেই সেটি আর ব্যবহার উপযোগী থাকছে না। মাথা ঢেকে আর মুখে মাস্ক পরেও চলাচল করা যায় না। এখনই যে অবস্থা তাতে সামনে বর্ষার সময় আসলে এই সড়ক দিয়ে কোনো মতেই আর চলাচল করা যাবে না।
ঠিকাদারের গাফিলতির কথা স্বীকার করলেন সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর,পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুর আহমেদ। তিনি বলেন,‘এখানে ঠিকাদারের গাফিলতি আছে। আমরা ইতিমধ্যেই একাধিকবার তাকে সতর্ক করেছি এবং নোটিশ দিয়েছি।
ইতিমধ্যেই তার চুক্তি বাতিল করার জন্য বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি দিয়েছি। এখন দেখা যাক তার বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কি ব্যবস্থা নেয়।’ এ ব্যাপারে যোগাযোগ করেও লাপাত্তা হওয়ায় ঠিকাদার আজাদুর রহমানের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।