ঢাকা , মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
হান্ডিয়াল নিউজ২৪ ডটকম এ জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

মরুর ফল সাম্মাম চাষে সফল ব্যাংক কর্মকর্তা

জেলায় মরু অঞ্চলের ফল সাম্মাম চাষ করে সফল একজন কৃষি উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান জুয়েল (৪৫)। তিনি মরু অঞ্চলের সাম্মাম ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে সাড়া ফেলেছেন। তিনি পেশায় পটুয়াখালীর ব্যাংক কর্মকর্তা। দেশের আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এ ফল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন জুয়েল।

মরু অঞ্চলের এ ফলের বীজ ঢাকা থেকে সংগ্রহ করে ৫ বিঘা জমিতে দুই জাতের সাম্মাম চাষ করেছেন তিনি। এবার প্রায় ৫ টন ফল উৎপাদনের আশা করছেন ব্যাংক কর্মকর্তা জুয়েল। ইন্টারনেটে সাম্মাম চাষের ভিডিও দেখে ও জেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় সাম্মাম চাষে উৎসাহিত হয়েছেন তিনি।

পটুয়াখালী শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে আউলিয়াপুরে দোয়াস মাটিতে মরু অঞ্চলের ফল ‘সাম্মাম’ ফল চাষ করে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন পটুয়াখালী শহরের রুস্তুমমৃধা এলাকার ব্যাংক কর্মকর্তা জুয়েল। শত ব্যস্ততার মাঝেও অবসর সময়ে সাম্মাম চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন তিনি।

মিষ্টি জাতের ফল সাম্মাম ইতোমধ্যে এলাকার মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এক জাতের সাম্মামের বাইরের অংশ সবুজ আর ভেতরে লাল। আরেক জাতের সাম্মামের বাইরের অংশ হলুদ আর ভেতরে লাল। তবে দুটি ফলই খেতে মিষ্টি, সুস্বাদু ও সুগন্ধযুক্ত। দেড় মাসের মধ্যেই গাছে ফল আসতে শুরু করে। তিন মাসের মধ্যেই পরিপক্ব হয় সাম্মাম। এ ফলটি জমির মাটির মধ্যে ও মাচা তৈরি করে চাষ করা যায়।

এ ফল মানুষের শরীরের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ রাখে। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন রয়েছে, যা কমলার চেয়ে ২০ ভাগ বেশি। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সিও আছে এ ফলে। আরো আছে পটাশিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যালেনিয়াম প্রভৃতি।

সরেজমিনে দেখা যায়, এলাকাবাসী ও দর্শনার্থীরা অনেকেই নতুন জাতের রসাল ফলটি কিনতে ও চাষ দেখতে দূরদুরান্ত থেকে এসে ভিড় করছেন তার বাগানে। অনেকেই আগ্রহী হচ্ছে সাম্মাম চাষ করতে। জুয়েলের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন অসংখ্য বেকার যুব সমাজ। এতে জেলায় সাম্মাম চাষে ভবিষ্যতে ঘটবে বিপ্লব।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসসকে কামরুজ্জামান জুয়েল বলেন, ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজের প্রতি ছিলো আমার আলাদা একটি শখ আর এ শখ থেকেই অবসরে কৃষি কাজ করেছি । এটাতে আমার ভালো লাগা কাজ করে। আমি মনে করি, আমি একজন সফল সফল কৃষক।

সফল উদ্যেক্তা জুয়েল বলেন, সাম্মাম ফলের তেমন একটা রোগবালাই নেই, আর এ ফল গাছের সঠিক চাষাবাদ এবং নিয়মিত ফুলের পরাগায়ন হলে একেকটি গাছ থেকে বেশ কয়েকটি ফল উৎপাদন করা সম্ভব। একেকটি সাম্মাম ফল দেড় থেকে দুই কেজির উপরে হয়। প্রতি কেজি সম্মাম ফল পাইকারি ১৫০ এবং খুচরা ১৭০ টাকায় বিক্রি করছি।

আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখছি উনি এ ফলটি চাষ করে যাচ্ছে। আমারও ইচ্ছা আছে আগামীতে চাষ করব। সেজন্য প্রতিদিন তার ফার্মে এসে সাম্মাম চাষ করার বিষয় জানতে চাই এবং শিখছি। আমিও এ মরুর রসালো ফলটি চাষ শুরু করবো।

একই ইউনিয়নের কামাল উদ্দিন বলেন, সাম্মাম ফলটি দেখতে সুন্দর এবং রসালো। এ ফলটির দিনদিন চাহিদা বাড়ছে। তাই আমিও এ ফলটি চাষের আগ্রহী। ইতোমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাথে কথা বলছি আশা করছি আগামীতে জমি প্রস্তুত করে বীজ রোপণ করব।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জালাল বলেন, সাম্মাম চাষে শুরু থেকেই আমরা সার্বিকভাবে জুয়েলকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। কীভাবে চাষ করবে কোন সময় কী করতে হবে। কখন ফল কাটবে এভাবে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করি তিনি ভালো করবেন।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: নজরুল ইসলাম জানান, কেউ যদি সাম্মাম চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করে আমরা তাকে সহযোগিতা করব। সাম্মাম একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর ও লাভজনক ফল।

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

মরুর ফল সাম্মাম চাষে সফল ব্যাংক কর্মকর্তা

আপলোড সময় : ১২:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫

জেলায় মরু অঞ্চলের ফল সাম্মাম চাষ করে সফল একজন কৃষি উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান জুয়েল (৪৫)। তিনি মরু অঞ্চলের সাম্মাম ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে সাড়া ফেলেছেন। তিনি পেশায় পটুয়াখালীর ব্যাংক কর্মকর্তা। দেশের আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এ ফল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন জুয়েল।

মরু অঞ্চলের এ ফলের বীজ ঢাকা থেকে সংগ্রহ করে ৫ বিঘা জমিতে দুই জাতের সাম্মাম চাষ করেছেন তিনি। এবার প্রায় ৫ টন ফল উৎপাদনের আশা করছেন ব্যাংক কর্মকর্তা জুয়েল। ইন্টারনেটে সাম্মাম চাষের ভিডিও দেখে ও জেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় সাম্মাম চাষে উৎসাহিত হয়েছেন তিনি।

পটুয়াখালী শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে আউলিয়াপুরে দোয়াস মাটিতে মরু অঞ্চলের ফল ‘সাম্মাম’ ফল চাষ করে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন পটুয়াখালী শহরের রুস্তুমমৃধা এলাকার ব্যাংক কর্মকর্তা জুয়েল। শত ব্যস্ততার মাঝেও অবসর সময়ে সাম্মাম চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন তিনি।

মিষ্টি জাতের ফল সাম্মাম ইতোমধ্যে এলাকার মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এক জাতের সাম্মামের বাইরের অংশ সবুজ আর ভেতরে লাল। আরেক জাতের সাম্মামের বাইরের অংশ হলুদ আর ভেতরে লাল। তবে দুটি ফলই খেতে মিষ্টি, সুস্বাদু ও সুগন্ধযুক্ত। দেড় মাসের মধ্যেই গাছে ফল আসতে শুরু করে। তিন মাসের মধ্যেই পরিপক্ব হয় সাম্মাম। এ ফলটি জমির মাটির মধ্যে ও মাচা তৈরি করে চাষ করা যায়।

এ ফল মানুষের শরীরের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ রাখে। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন রয়েছে, যা কমলার চেয়ে ২০ ভাগ বেশি। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সিও আছে এ ফলে। আরো আছে পটাশিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যালেনিয়াম প্রভৃতি।

সরেজমিনে দেখা যায়, এলাকাবাসী ও দর্শনার্থীরা অনেকেই নতুন জাতের রসাল ফলটি কিনতে ও চাষ দেখতে দূরদুরান্ত থেকে এসে ভিড় করছেন তার বাগানে। অনেকেই আগ্রহী হচ্ছে সাম্মাম চাষ করতে। জুয়েলের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন অসংখ্য বেকার যুব সমাজ। এতে জেলায় সাম্মাম চাষে ভবিষ্যতে ঘটবে বিপ্লব।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসসকে কামরুজ্জামান জুয়েল বলেন, ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজের প্রতি ছিলো আমার আলাদা একটি শখ আর এ শখ থেকেই অবসরে কৃষি কাজ করেছি । এটাতে আমার ভালো লাগা কাজ করে। আমি মনে করি, আমি একজন সফল সফল কৃষক।

সফল উদ্যেক্তা জুয়েল বলেন, সাম্মাম ফলের তেমন একটা রোগবালাই নেই, আর এ ফল গাছের সঠিক চাষাবাদ এবং নিয়মিত ফুলের পরাগায়ন হলে একেকটি গাছ থেকে বেশ কয়েকটি ফল উৎপাদন করা সম্ভব। একেকটি সাম্মাম ফল দেড় থেকে দুই কেজির উপরে হয়। প্রতি কেজি সম্মাম ফল পাইকারি ১৫০ এবং খুচরা ১৭০ টাকায় বিক্রি করছি।

আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখছি উনি এ ফলটি চাষ করে যাচ্ছে। আমারও ইচ্ছা আছে আগামীতে চাষ করব। সেজন্য প্রতিদিন তার ফার্মে এসে সাম্মাম চাষ করার বিষয় জানতে চাই এবং শিখছি। আমিও এ মরুর রসালো ফলটি চাষ শুরু করবো।

একই ইউনিয়নের কামাল উদ্দিন বলেন, সাম্মাম ফলটি দেখতে সুন্দর এবং রসালো। এ ফলটির দিনদিন চাহিদা বাড়ছে। তাই আমিও এ ফলটি চাষের আগ্রহী। ইতোমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাথে কথা বলছি আশা করছি আগামীতে জমি প্রস্তুত করে বীজ রোপণ করব।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জালাল বলেন, সাম্মাম চাষে শুরু থেকেই আমরা সার্বিকভাবে জুয়েলকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। কীভাবে চাষ করবে কোন সময় কী করতে হবে। কখন ফল কাটবে এভাবে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করি তিনি ভালো করবেন।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: নজরুল ইসলাম জানান, কেউ যদি সাম্মাম চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করে আমরা তাকে সহযোগিতা করব। সাম্মাম একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর ও লাভজনক ফল।