বোরো প্রধান জেলা সুনামগঞ্জ। হাওর বেষ্টিত বোরো প্রধান এ জেলায় ভুট্টা চাষ করা হয়েছে ৮২৩ হেক্টর জমিতে। গত বছর জেলার ৬১১ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছিল। যার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ হাজার মেট্রিক টন ভুট্টা। ধানের চেয়ে অধিক ফলন হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে ভুট্টা চাষে।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছেন, এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন পাওয়া যাবে।
কৃষকরা জানান, ভুট্টা চাষে কম খরচ, কম পরিশ্রম আর ধানের চেয়ে কম সময়ে ফসল গোলায় যায় এবং এটি অত্যন্ত লাভজনক একটি ফসল। প্রতিত বিঘা জমি থেকে চলতি মৌসুমে গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ মণ ভুট্টা ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও ভুট্টা চাষ করলে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। যার কারণে প্রতি বছরই ভুট্টা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬১১ হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে ভুট্টা। ভুট্টা পোল্ট্রিফিড, গোখাদ্য, রুটি, বিস্কুট তৈরিতে ব্যবহার করা হয় এবং ভুট্টার গাছ শুকিয়ে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ধর্মপাশা, তাহিরপুর, ছাতক, সদর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারা বাজার, জগন্নাথপুর, দিরাই, জামালগঞ্জ, শাল্লা ও শান্তিগঞ্জ উপজেলায় বেশী ভুট্টাচাষ করা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আরো জানায়, জেলার ধর্মপাশা উপজেলায় এবছর ভুট্টা চাষাবাদ হয়েছে ৬৫ হেক্টর,তাহিরপুর উপজেলায় ৬৫ হেক্টর,ছাতক উপজেলায় ৩০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ২৬০ হেক্টর,বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ৯৫ হেক্টর, দোয়ারা বাজার উপজেলায় ২৫ হেক্টর, দিরাই উপজেলায় ১৭ হেক্টর, জামালগঞ্জ উপজেলায় ১৫০ হেক্টর, শাল্লা উপজেলায় ৩৫ হেক্টর, জগন্নাথপুর উপজেলায় ৬৫ হেক্টর এবং শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ১৬ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জ জেলায় ভুট্টার বাম্পার ফলন এবং দামও ভালো পাওয়ার আশা করছেন কৃষকরা।
জেলার ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইর রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের গোলকপুর গ্রামের ভুট্টা চাষী জাহাঙ্গীর আলম বাসসকে জানান, এ বছর তিনি ৮ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। গত বছর তিনি ৩ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করে সফলতা পেয়ে এবছর ৮বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। তিনি আরও জানান, ওই ৩ বিঘা জমিতে ১০৫ মণ ভুট্টা হয়েছে। প্রতিমণ ভুট্টা সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছেন। ফলে এ বছর ৮ বিঘা জমিতে ভুট্টা বপন করেছেন।
জাহাঙ্গীর বাসসকে জানান, এর আগে বোরো ধান চাষ করতেন। ভুট্টা চাষে ধানের চেয়ে লাভ বেশি। চৈত্র মাসের শেষ দিকে ভুট্টা কাটা হবে। ভুট্টা চাষে কৃষি বিভাগ বীজ ও সার দিয়ে সহযোগিতা করেছে। আগামীতে আরও বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ করবেন বলেও জানান তিনি।
জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার রামপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল্লাহ আল মামুন বাসসকে জানান, গত বছর ১৭ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছিলেন। ফলন ভাল হওয়ায় এবছর তিনি ২৫ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। তিনি জানান, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারি মাঝামাঝিতে ভুট্টা বপন করেছেন। এপ্রিল এক হাজার থেকে এক হাজার দুইশত টাকা মণ ভুট্টা বিক্রি করা হয়। প্রতি বিঘাতে ৩৫ থেকে ৪০ মণ ভুট্টা উৎপাদন হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মোস্তফা ইকবাল আজাদ বাসসকে জানান, জেলায় ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ভুট্টা বপন শুরু হয়ে চলে জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত। সংগ্রহ শুরু হয় এপ্রিলের শুরু থেকে পুরো এপ্রিল মাস পর্যন্ত।
তিনি আরও জানান, ভুট্টা বপনের সাড়ে ৪ মাসের মধ্যে সংগ্রহ করতে পারেন কৃষকরা। যা বোরো ধানের চেয়ে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ দিন আগে ভুট্টা সংগ্রহ করা যায় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেকটা এড়ানো যায়।