ঢাকা , শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
হান্ডিয়াল নিউজ২৪ ডটকম এ জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

ভাঙ্গুড়ায় বাউত উৎসবে মাছ ধরতে মানুষের ঢল

চলনবিল অধ্যুষিত পাবনার ভাঙ্গুড়ায় মাছ ধরার বাউত উৎসবে হাজারও মানুষের ঢল নেমেছিল। প্রতিবছরের মতো আজ শনিবার উপজেলার রহুলবিলে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে বাউত উৎসবে মাছ শিকার। মাছ ধরার নানা উপকরণ নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা নানা বয়সী মানুষ অংশ নেয় তাতে। এসময় সৌখিন মৎস্য শিকারীদের এক মিলন মেলায় পরিণত হয় পুরো বিল এলাকা।

জানা যায, নির্ধারিত দিনে ঘোষণা দিয়ে নির্দিষ্ট বিলে মাছ শিকার করা এ অঞ্চলের মানুষের পুরোনো প্রথা। শুধু জেলেরা নয়, সৌখিন মৎস্য শিকারীরা পলো, বাদাই, খেওয়া জাল, কারেন্ট জাল, ঠেলাজাল প্রভৃতি মাছ ধরার ফাঁদ ব্যবহার করে মাছ ধরে থাকেন । আর এসকল মাছ শিকারীকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘বাউত। পূর্বঘোষণা অনুয়ায়ী আজ শনিবার সকাল থেকে উপজেলার রহুল বিলে শুরু হয় বাউত উৎসব।এদিন কাকডাকা ভোর থেকে ভাঙ্গুড়া,ফরিদপুর,চাটমোহরসহ আশপাশের উপজেলার হাজার-হাজার সৌখিন মৎস্য শিকারী বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, সিএনজি, বাস,ট্রাক, নছিমন-করিমন যোগে এসে জমায়েত হয় বিলপাড়ে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে মৎস্য শিকার।এসময় রুই, কাতলা, জাপানি, ষোল, গজার, বোয়াল, মিনার কার্প, টাকি প্রভৃতি মাছ শিকার করেন মৎস্য শিকারীরা । আবার অনেকেই মাছ শিকার করতে না পেরে খালিহাতে বাড়ি ফেরেন।

সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ উপজেলার ঝাঔল গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক জানান, মিনি ট্রাক ভাড়া করে তারা ২৭জন এসেছেন মাছ ধরতে । তারা খরাজাল দিয়ে রুই ও কাতলা মাছ ধরেছেন। তবে আশানুরূপ মাছ ধরতে পারেননি বলেও তিনি জানান।

পার্শ্ববর্তী উল্লাপাড়া উপজেলার দত্তখারুয়া গ্রামের বেলাল হোসেন জানান, ‘মাছ ধরতে পলো নিয়ে বাউত উৎসবে অংশ নেন তিনি । অনেকে মাছ না পেলেও তিনি চারটি শোল মাছ শিকার করতে পেরেছেন।

ভাঙ্গুড়া পৌরশহরের কাউন্টার মাস্টার গোলাম রাব্বী জানান, তারা কয়েক বন্ধু খেয়াজাল নিয়ে রহুলবিলে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। তারা রুই,কাতলা ও বোয়াল মাছ পেয়েছেন।

তবে ফরিদপুর উপজেলার বিএলবাড়ী গ্রামের আলতাব হোসেনসহ বেশ কয়েকজন জানান, রহুলবিলে মাছ ধরার খবর পেয়ে ভোরবেলায় পলো নিয়ে তারা বিলে হাজির হন । কিন্তু মাছ না পেয়ে তাদের খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন,এভাবে মাছ শিকার করায় মাছের বংশ বিস্তারের জন্য ক্ষতিকর। তবে এলাকার মানুষ প্রতিবছর এভাবে মাছ শিকারের মাধ্যমে বাউত উৎসব করে থাকেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, ‘বাউত উৎসব এই এলাকার পুরোনো ঐতিহ্য। প্রতি বছর দূর-দূরান্ত থেকে সৌখিন মানুষ এখানে এসে মৎস্য শিকার করেন। এভাবে মাছ শিকারের কারণে যেন মাছের বংশ বিস্তারে কোন সমস্যার সৃষ্টি না হয় সে দিক খেয়াল রেখেই এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ভাঙ্গুড়ায় বাউত উৎসবে মাছ ধরতে মানুষের ঢল

আপলোড সময় : ১০:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২২

চলনবিল অধ্যুষিত পাবনার ভাঙ্গুড়ায় মাছ ধরার বাউত উৎসবে হাজারও মানুষের ঢল নেমেছিল। প্রতিবছরের মতো আজ শনিবার উপজেলার রহুলবিলে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে বাউত উৎসবে মাছ শিকার। মাছ ধরার নানা উপকরণ নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা নানা বয়সী মানুষ অংশ নেয় তাতে। এসময় সৌখিন মৎস্য শিকারীদের এক মিলন মেলায় পরিণত হয় পুরো বিল এলাকা।

জানা যায, নির্ধারিত দিনে ঘোষণা দিয়ে নির্দিষ্ট বিলে মাছ শিকার করা এ অঞ্চলের মানুষের পুরোনো প্রথা। শুধু জেলেরা নয়, সৌখিন মৎস্য শিকারীরা পলো, বাদাই, খেওয়া জাল, কারেন্ট জাল, ঠেলাজাল প্রভৃতি মাছ ধরার ফাঁদ ব্যবহার করে মাছ ধরে থাকেন । আর এসকল মাছ শিকারীকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘বাউত। পূর্বঘোষণা অনুয়ায়ী আজ শনিবার সকাল থেকে উপজেলার রহুল বিলে শুরু হয় বাউত উৎসব।এদিন কাকডাকা ভোর থেকে ভাঙ্গুড়া,ফরিদপুর,চাটমোহরসহ আশপাশের উপজেলার হাজার-হাজার সৌখিন মৎস্য শিকারী বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, সিএনজি, বাস,ট্রাক, নছিমন-করিমন যোগে এসে জমায়েত হয় বিলপাড়ে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে মৎস্য শিকার।এসময় রুই, কাতলা, জাপানি, ষোল, গজার, বোয়াল, মিনার কার্প, টাকি প্রভৃতি মাছ শিকার করেন মৎস্য শিকারীরা । আবার অনেকেই মাছ শিকার করতে না পেরে খালিহাতে বাড়ি ফেরেন।

সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ উপজেলার ঝাঔল গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক জানান, মিনি ট্রাক ভাড়া করে তারা ২৭জন এসেছেন মাছ ধরতে । তারা খরাজাল দিয়ে রুই ও কাতলা মাছ ধরেছেন। তবে আশানুরূপ মাছ ধরতে পারেননি বলেও তিনি জানান।

পার্শ্ববর্তী উল্লাপাড়া উপজেলার দত্তখারুয়া গ্রামের বেলাল হোসেন জানান, ‘মাছ ধরতে পলো নিয়ে বাউত উৎসবে অংশ নেন তিনি । অনেকে মাছ না পেলেও তিনি চারটি শোল মাছ শিকার করতে পেরেছেন।

ভাঙ্গুড়া পৌরশহরের কাউন্টার মাস্টার গোলাম রাব্বী জানান, তারা কয়েক বন্ধু খেয়াজাল নিয়ে রহুলবিলে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। তারা রুই,কাতলা ও বোয়াল মাছ পেয়েছেন।

তবে ফরিদপুর উপজেলার বিএলবাড়ী গ্রামের আলতাব হোসেনসহ বেশ কয়েকজন জানান, রহুলবিলে মাছ ধরার খবর পেয়ে ভোরবেলায় পলো নিয়ে তারা বিলে হাজির হন । কিন্তু মাছ না পেয়ে তাদের খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন,এভাবে মাছ শিকার করায় মাছের বংশ বিস্তারের জন্য ক্ষতিকর। তবে এলাকার মানুষ প্রতিবছর এভাবে মাছ শিকারের মাধ্যমে বাউত উৎসব করে থাকেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, ‘বাউত উৎসব এই এলাকার পুরোনো ঐতিহ্য। প্রতি বছর দূর-দূরান্ত থেকে সৌখিন মানুষ এখানে এসে মৎস্য শিকার করেন। এভাবে মাছ শিকারের কারণে যেন মাছের বংশ বিস্তারে কোন সমস্যার সৃষ্টি না হয় সে দিক খেয়াল রেখেই এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হবে।