ঢাকা , বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
হান্ডিয়াল নিউজ২৪ ডটকম এ জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

বিষাক্ত মদ কেড়ে নিচ্ছে একের পর এক প্রাণ

  • যশোর প্রতিনিধি
  • আপলোড সময় : ০১:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৩
  • ২৫৫ বার দেখা হয়েছে।

ছবি সংগৃহীত

যশোরে রেকটিফাইড স্পিরিটে তৈরি বিষাক্ত মদ কেড়ে নিচ্ছে একের পর এক প্রাণ। বিষাক্ত এ মদপানে গত তিন বছরে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৯ জনের। সবশেষ মারা গেছেন আরও তিনজন। তবে এসব খবর প্রকাশ্যে এলেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। কিছুদিন তোড়জোড় থাকলেও পরেই তা আবার থিতিয়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, চলতি বছরের ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি, সদর উপজেলার আবাদ কচুয়া গ্রামে রেকটিফাইড স্পিরিটে তৈরি ‘বিষাক্ত মদ’ পানে তিনজনের মৃত্যু হয়।

তারা হলেন, যশোর সদর উপজেলার আবাদ কচুয়া গ্রামের আবু বক্কর মোল্লার ছেলে আবুল কাশেম (৫৫),শাহজাহান আলীর ছেলে জাকির হোসেন (২৯) ও মৃত আবদুল হামিদের ছেলে ইসলাম (৪৫)।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, বুধবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে যশোর সদরের আবাদ কচুয়া গ্রামের একটি বাগানে একই গ্রামের ইসলাম, আবুল কাশেম ও জাকির হোসেন এবং সিতারামপুর গ্রামের বাবলু হোসেন ও রিপন হোসেনসহ আরও দুজন বিষাক্ত মদ পান করেন। অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেন তারা। অবস্থায় অবনতি হলে ইসলামকে ভোরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুপুরের দিকে মারা যায় তিনি। ছাড়পত্র ছাড়াই দ্রুত মরদেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা।

অন্য চারজনও অসুস্থ হয়ে পড়লে শুক্রবার সকালে একে একে যশোর হাসপাতালে ভর্তি হন তারা। এর মধ্যে দুপুরে মারা যান জাকির হোসেন। এরপরই নেশাজাতীয় দ্রব্য পানের বিষয়টি জানাজানি হয়। ঘটনা জানাজানি হলে বাবলু ও রিপন হোসেন হাসপাতাল ছেড়ে বেসরকারি ক্লিনিকে সরে পড়েন। বর্তমানে তারা খুলনায় চিকিৎসাধীন। আর শুক্রবার রাতে মারা যান আবুল কাশেম।

তবে এখানেই শেষ নয়, এর আগে ২০২০ সালের ১৭ জুন যশোরের ঝিকরগাছায় নেশাজাতীয় দ্রব্য পানে রাজাপুর গ্রামের হাবিল গাজী ও নুর ইসলাম খোকা, বর্নি গ্রামের ফারুক হোসেন, হাজিরালী গ্রামের আসমত আলী, পুরন্দরপুর গ্রামের হামিদুর রহমান এবং ঋষিপাড়ার নারায়ণের মৃত্যু হয়।

একই বছরের ২৫ ও ২৬ এপ্রিল নেশাজাতীয় দ্রব্য পানে ১০ জনের মৃত্যু হয়। মারা যান, সদর উপজেলার শেখহাটি কালীতলার শাহিন, শহরের বেজপাড়ার নান্নু, ঝুমঝুমপুর মান্দারতলার ফজলুর রহমান, ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের মনিবাবু ও সাবু, বারান্দি মোল্যাপাড়ার আব্দুর রশিদ, ছাতিয়ানতলার আক্তারুজ্জামান, ঝিকরগাছার কাটাখালী গ্রামের সাহেব আলী, মণিরামপুরের মোহনপুরের মোমিন এবং মোহনপুরের মুক্তার আলী।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তাদের বেশিরভাগ বিষাক্ত মদপানে অসুস্থ হয়ে মারা যান। আর রেকটিফাইড স্পিরিটের সঙ্গে বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে এ মদ তৈরি হয়। যশোরে বেশ কয়েকটি চক্র এর সঙ্গে জড়িত।

সূত্র মতে, যশোরের হোমিওপ্যাথিক দোকান ও ঢাকার মিডফোর্ড থেকে চক্রটি এ রেকটিফাইড স্পিরিট সংগ্রহ করে। প্রশাসনের অভিযানে মাঝে মধ্যে এ মদ ও রেকটিফাইড স্পিরিটের দু-একটি চালান ধরা পড়লেও সাধারণ সময়ে বেচাকেনা হয় অহরহ। কিন্তু এ মদ যখন বিষাক্ত হয়ে যায়, তখনই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

সূত্র আরও জানিয়েছে, আবাদ কচুয়ায় মাদক সেবনে যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে সেই মদ বিকিকিনির সঙ্গে জড়িত সীতারামপুর গ্রামের মনিরদ্দিনের ছেলে বাবলু এবং একই গ্রামের আনোয়ার মোড়লের ছেলে রিপন হোসেন মোড়ল। তারাও ওই মদপানে অসুস্থ হয়ে গোপনে চিকিৎসাধীন।

ওই ঘটনার পর আবুল কাশেমের মেয়ে নাছরিন খাতুন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন। ওই এলাকার মদ বিক্রেতা বাবুলসহ অজ্ঞাত পরিচয় ৪ থেকে ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক হুমায়ুন কবির খন্দকার বলেন, যশোরে সম্প্রতি যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, তারা রেকটিফাইড স্পিরিটে তৈরি মদপানে মারা গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ঘটনার পরপরই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঘটনার তদন্ত ও অভিযান শুরু করেছে। হোমিওপ্যাথিক ওষুধের দোকানসহ যেসব উৎস থেকে রেকটিফাইড স্পিরিট সংগ্রহের সুযোগ আছে, সেসব জায়গায় অভিযান চালানো হচ্ছে। অনুমোদন ছাড়া কোথাও এ স্পিরিট বিক্রির সুযোগ নেই। বিষয়টি কঠোরভাবে দেখা হবে।

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, আবাদ কচুয়া গ্রামের ঘটনায় অসুস্থরা তথ্য গোপন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হয়। ওই ঘটনায় মৃত আবুল কাশেমের মেয়ের মামলা আমলে নিয়ে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তবে এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, এ বিষাক্ত মদের বেচাকেনা ও তৈরির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

বিষাক্ত মদ কেড়ে নিচ্ছে একের পর এক প্রাণ

আপলোড সময় : ০১:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৩

যশোরে রেকটিফাইড স্পিরিটে তৈরি বিষাক্ত মদ কেড়ে নিচ্ছে একের পর এক প্রাণ। বিষাক্ত এ মদপানে গত তিন বছরে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৯ জনের। সবশেষ মারা গেছেন আরও তিনজন। তবে এসব খবর প্রকাশ্যে এলেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। কিছুদিন তোড়জোড় থাকলেও পরেই তা আবার থিতিয়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, চলতি বছরের ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি, সদর উপজেলার আবাদ কচুয়া গ্রামে রেকটিফাইড স্পিরিটে তৈরি ‘বিষাক্ত মদ’ পানে তিনজনের মৃত্যু হয়।

তারা হলেন, যশোর সদর উপজেলার আবাদ কচুয়া গ্রামের আবু বক্কর মোল্লার ছেলে আবুল কাশেম (৫৫),শাহজাহান আলীর ছেলে জাকির হোসেন (২৯) ও মৃত আবদুল হামিদের ছেলে ইসলাম (৪৫)।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, বুধবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে যশোর সদরের আবাদ কচুয়া গ্রামের একটি বাগানে একই গ্রামের ইসলাম, আবুল কাশেম ও জাকির হোসেন এবং সিতারামপুর গ্রামের বাবলু হোসেন ও রিপন হোসেনসহ আরও দুজন বিষাক্ত মদ পান করেন। অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেন তারা। অবস্থায় অবনতি হলে ইসলামকে ভোরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুপুরের দিকে মারা যায় তিনি। ছাড়পত্র ছাড়াই দ্রুত মরদেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা।

অন্য চারজনও অসুস্থ হয়ে পড়লে শুক্রবার সকালে একে একে যশোর হাসপাতালে ভর্তি হন তারা। এর মধ্যে দুপুরে মারা যান জাকির হোসেন। এরপরই নেশাজাতীয় দ্রব্য পানের বিষয়টি জানাজানি হয়। ঘটনা জানাজানি হলে বাবলু ও রিপন হোসেন হাসপাতাল ছেড়ে বেসরকারি ক্লিনিকে সরে পড়েন। বর্তমানে তারা খুলনায় চিকিৎসাধীন। আর শুক্রবার রাতে মারা যান আবুল কাশেম।

তবে এখানেই শেষ নয়, এর আগে ২০২০ সালের ১৭ জুন যশোরের ঝিকরগাছায় নেশাজাতীয় দ্রব্য পানে রাজাপুর গ্রামের হাবিল গাজী ও নুর ইসলাম খোকা, বর্নি গ্রামের ফারুক হোসেন, হাজিরালী গ্রামের আসমত আলী, পুরন্দরপুর গ্রামের হামিদুর রহমান এবং ঋষিপাড়ার নারায়ণের মৃত্যু হয়।

একই বছরের ২৫ ও ২৬ এপ্রিল নেশাজাতীয় দ্রব্য পানে ১০ জনের মৃত্যু হয়। মারা যান, সদর উপজেলার শেখহাটি কালীতলার শাহিন, শহরের বেজপাড়ার নান্নু, ঝুমঝুমপুর মান্দারতলার ফজলুর রহমান, ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের মনিবাবু ও সাবু, বারান্দি মোল্যাপাড়ার আব্দুর রশিদ, ছাতিয়ানতলার আক্তারুজ্জামান, ঝিকরগাছার কাটাখালী গ্রামের সাহেব আলী, মণিরামপুরের মোহনপুরের মোমিন এবং মোহনপুরের মুক্তার আলী।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তাদের বেশিরভাগ বিষাক্ত মদপানে অসুস্থ হয়ে মারা যান। আর রেকটিফাইড স্পিরিটের সঙ্গে বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে এ মদ তৈরি হয়। যশোরে বেশ কয়েকটি চক্র এর সঙ্গে জড়িত।

সূত্র মতে, যশোরের হোমিওপ্যাথিক দোকান ও ঢাকার মিডফোর্ড থেকে চক্রটি এ রেকটিফাইড স্পিরিট সংগ্রহ করে। প্রশাসনের অভিযানে মাঝে মধ্যে এ মদ ও রেকটিফাইড স্পিরিটের দু-একটি চালান ধরা পড়লেও সাধারণ সময়ে বেচাকেনা হয় অহরহ। কিন্তু এ মদ যখন বিষাক্ত হয়ে যায়, তখনই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

সূত্র আরও জানিয়েছে, আবাদ কচুয়ায় মাদক সেবনে যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে সেই মদ বিকিকিনির সঙ্গে জড়িত সীতারামপুর গ্রামের মনিরদ্দিনের ছেলে বাবলু এবং একই গ্রামের আনোয়ার মোড়লের ছেলে রিপন হোসেন মোড়ল। তারাও ওই মদপানে অসুস্থ হয়ে গোপনে চিকিৎসাধীন।

ওই ঘটনার পর আবুল কাশেমের মেয়ে নাছরিন খাতুন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন। ওই এলাকার মদ বিক্রেতা বাবুলসহ অজ্ঞাত পরিচয় ৪ থেকে ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক হুমায়ুন কবির খন্দকার বলেন, যশোরে সম্প্রতি যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, তারা রেকটিফাইড স্পিরিটে তৈরি মদপানে মারা গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ঘটনার পরপরই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঘটনার তদন্ত ও অভিযান শুরু করেছে। হোমিওপ্যাথিক ওষুধের দোকানসহ যেসব উৎস থেকে রেকটিফাইড স্পিরিট সংগ্রহের সুযোগ আছে, সেসব জায়গায় অভিযান চালানো হচ্ছে। অনুমোদন ছাড়া কোথাও এ স্পিরিট বিক্রির সুযোগ নেই। বিষয়টি কঠোরভাবে দেখা হবে।

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, আবাদ কচুয়া গ্রামের ঘটনায় অসুস্থরা তথ্য গোপন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হয়। ওই ঘটনায় মৃত আবুল কাশেমের মেয়ের মামলা আমলে নিয়ে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তবে এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, এ বিষাক্ত মদের বেচাকেনা ও তৈরির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।