ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
হান্ডিয়াল নিউজ২৪ ডটকম এ জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

বিষাক্ত ও দূষিত পানিতে জীববৈচিত্র্য শঙ্কায়

লবলং খাল দিয়ে বিষাক্ত ও দূষিত পানি নদীতে গড়াচ্ছে

শ্রীপুরে খাল ও বিলের পানি বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। অনেক আগেই মানুষের ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে এই পানি। ফসলেও সেই পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। দিনের পর দিন শিল্প কারখানার নির্গত দূষিত বর্জ্যে পানি ব্যবহারের অযোগ্যতা ক্রমে বাড়ছে। এসব বিষাক্ত রাসায়নিক পানি একত্রিত হয়ে আশপাশের নদী-নালায় পড়ছে। ফলে ধ্বংসের পথে জীববৈচিত্র্য।

সম্প্রতি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকায় লবলং খালে কারখানা ও গৃহস্থালি বর্জ্য ফেলে পানি প্রবাহ বন্ধ এবং পরিবেশ দূষণ সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে আশঙ্কার কথা জানান। তিনি বলেন, শিল্পায়নের যে প্রাইস বা মূল্য এটা স্থানীয় লোকেরা দিচ্ছে। এক সময় সারা বাংলাদেশই দেবে। বাংলাদেশের আয়ের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ এখান থেকে আসে।
শ্রীপুর পৌরসভার গিলার চলা গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, খালের পাশের জমিতে কোে ণে সাড়ে ৫ বিঘা জমি পানির দরে বিক্রি করে দিয়েছি না ফসল না হওয়ায় এবং চাষাবাদ করতে না পারার কার। ছোটবেলায় দেখতাম বাবা এই খাল থেকে মাছ ধরে নিয়ে আসত। তখন মা এই মাছের তরকারি রান্না করলে সারাদিন মাছ দিয়ে ভাত খাইতাম। এখন এই খালে মাছ তো দূরের কথা একটা ব্যাঙও নাই।

স্থানীয় যুবক সবুজ মিয়া বলেন, লবলং খালটি শ্রীপুর থেকে উৎপন্ন হয়ে সদর উপজেলার বানিয়ারচালা, ভবানীপুর হয়ে মির্জাপুরে গিয়ে শালদহ নদীর সঙ্গে মিশেছে। শালদহ নদীতে প্রবাহিত হয়ে বিষাক্ত বর্জ্য তুরাগে গিয়ে পড়ছে। পাশের বানিয়ারচালা গ্রামের যুবক সোহাগ মিয়া বলেন, ১২ বছর আগেও লবণদহ খালের সরু সেতুর ওপর এলাকার মানুষ অবকাশ যাপন করতে যেত। এখন খালে প্রবহমান বিষাক্ত পানি নাকে মুখে লেগে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।

এ খাল দিয়ে ময়মনসিংহের ভালুকা ও গাজীপুরের শ্রীপুর এবং সদর উপজেলার অধিকাংশ কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য প্রবাহিত হয়। ভবানীপুর এলাকার গৃহিণী আমেনা খাতুন বলেন, নাকে মুখে রুমাল দিয়ে রাখতে হয়। বর্ষাকালে কালো পানি কিছুটা বদলায়। ঈদের সময় কারখানা বন্ধ থাকলে পানি কিছুটা সাদা হয়।
ছাত্র শিমূল, জনি ও রাজীব বলেন, বাইরে খেলাধুলা করতে বের হলেই ঝাঁঝাল গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে। কারখানার বিষাক্ত পানির সঙ্গে প্রাকৃতিক পানি মিশে যেতেও সময় লাগে। কারখানার রাসায়নিক পানির বৈশিষ্ট্য এমন যে, বৃষ্টির পানিতে বেড়ে যাওয়া খালের পানি জমির পানির সঙ্গে মিশে যেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগে।

শুষ্ক মৌসুমে রাসায়নিক পানির দুর্গন্ধের তীব্রতা এলাকার বাতাসকেও দূষিত করে তোলে। আগে তিনি নিজেই চাষাবাদ করতেন। বছর দশেক যাবৎ তার জমি বর্গা দিয়েছেন। পানি বিষাক্ততার কারণে তিনি নিজে এখন আর চাষাবাদ করেন না। খালে নেমে যাওয়ার ভয়ে গবাদিপশুগুলো উন্মুক্ত ছেড়ে দিয়ে পালন করতে পারেন না।
শ্রীপুর উপজেলা জাতীয় নদী রক্ষা কমিটির সদস্য খোরশেদ আলম বলেন, লবলং খালের পানি ছিল স্বচ্ছ, খুব সুস্বাদু মাছ পাওয়া যেত, বর্তমানে দখল ও দূষণের কারণে মাছ তো দূরের কথা কোনো জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব নেই। একদিকে দূষণ অন্যদিকে দখল, এ দুই মিলে আজ লবলং খাল বিলুপ্তির পথে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পথে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, পরিবেশের মূল দূষণকারী বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান।

 

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

বিতর্কে জর্জরিত ফরিদপুর উপজেলা বিএনপি কমিটি ৯ দিনের মাথায় বাতিল

বিষাক্ত ও দূষিত পানিতে জীববৈচিত্র্য শঙ্কায়

আপলোড সময় : ১২:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৩

শ্রীপুরে খাল ও বিলের পানি বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। অনেক আগেই মানুষের ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে এই পানি। ফসলেও সেই পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। দিনের পর দিন শিল্প কারখানার নির্গত দূষিত বর্জ্যে পানি ব্যবহারের অযোগ্যতা ক্রমে বাড়ছে। এসব বিষাক্ত রাসায়নিক পানি একত্রিত হয়ে আশপাশের নদী-নালায় পড়ছে। ফলে ধ্বংসের পথে জীববৈচিত্র্য।

সম্প্রতি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকায় লবলং খালে কারখানা ও গৃহস্থালি বর্জ্য ফেলে পানি প্রবাহ বন্ধ এবং পরিবেশ দূষণ সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে আশঙ্কার কথা জানান। তিনি বলেন, শিল্পায়নের যে প্রাইস বা মূল্য এটা স্থানীয় লোকেরা দিচ্ছে। এক সময় সারা বাংলাদেশই দেবে। বাংলাদেশের আয়ের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ এখান থেকে আসে।
শ্রীপুর পৌরসভার গিলার চলা গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, খালের পাশের জমিতে কোে ণে সাড়ে ৫ বিঘা জমি পানির দরে বিক্রি করে দিয়েছি না ফসল না হওয়ায় এবং চাষাবাদ করতে না পারার কার। ছোটবেলায় দেখতাম বাবা এই খাল থেকে মাছ ধরে নিয়ে আসত। তখন মা এই মাছের তরকারি রান্না করলে সারাদিন মাছ দিয়ে ভাত খাইতাম। এখন এই খালে মাছ তো দূরের কথা একটা ব্যাঙও নাই।

স্থানীয় যুবক সবুজ মিয়া বলেন, লবলং খালটি শ্রীপুর থেকে উৎপন্ন হয়ে সদর উপজেলার বানিয়ারচালা, ভবানীপুর হয়ে মির্জাপুরে গিয়ে শালদহ নদীর সঙ্গে মিশেছে। শালদহ নদীতে প্রবাহিত হয়ে বিষাক্ত বর্জ্য তুরাগে গিয়ে পড়ছে। পাশের বানিয়ারচালা গ্রামের যুবক সোহাগ মিয়া বলেন, ১২ বছর আগেও লবণদহ খালের সরু সেতুর ওপর এলাকার মানুষ অবকাশ যাপন করতে যেত। এখন খালে প্রবহমান বিষাক্ত পানি নাকে মুখে লেগে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।

এ খাল দিয়ে ময়মনসিংহের ভালুকা ও গাজীপুরের শ্রীপুর এবং সদর উপজেলার অধিকাংশ কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য প্রবাহিত হয়। ভবানীপুর এলাকার গৃহিণী আমেনা খাতুন বলেন, নাকে মুখে রুমাল দিয়ে রাখতে হয়। বর্ষাকালে কালো পানি কিছুটা বদলায়। ঈদের সময় কারখানা বন্ধ থাকলে পানি কিছুটা সাদা হয়।
ছাত্র শিমূল, জনি ও রাজীব বলেন, বাইরে খেলাধুলা করতে বের হলেই ঝাঁঝাল গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে। কারখানার বিষাক্ত পানির সঙ্গে প্রাকৃতিক পানি মিশে যেতেও সময় লাগে। কারখানার রাসায়নিক পানির বৈশিষ্ট্য এমন যে, বৃষ্টির পানিতে বেড়ে যাওয়া খালের পানি জমির পানির সঙ্গে মিশে যেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগে।

শুষ্ক মৌসুমে রাসায়নিক পানির দুর্গন্ধের তীব্রতা এলাকার বাতাসকেও দূষিত করে তোলে। আগে তিনি নিজেই চাষাবাদ করতেন। বছর দশেক যাবৎ তার জমি বর্গা দিয়েছেন। পানি বিষাক্ততার কারণে তিনি নিজে এখন আর চাষাবাদ করেন না। খালে নেমে যাওয়ার ভয়ে গবাদিপশুগুলো উন্মুক্ত ছেড়ে দিয়ে পালন করতে পারেন না।
শ্রীপুর উপজেলা জাতীয় নদী রক্ষা কমিটির সদস্য খোরশেদ আলম বলেন, লবলং খালের পানি ছিল স্বচ্ছ, খুব সুস্বাদু মাছ পাওয়া যেত, বর্তমানে দখল ও দূষণের কারণে মাছ তো দূরের কথা কোনো জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব নেই। একদিকে দূষণ অন্যদিকে দখল, এ দুই মিলে আজ লবলং খাল বিলুপ্তির পথে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পথে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, পরিবেশের মূল দূষণকারী বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান।