ঢাকা , বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
হান্ডিয়াল নিউজ২৪ ডটকম এ জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

বিজ্ঞানীদের অদ্ভুত আবিষ্কার, বানরেরাও অপহরণ করে!

কিডন্যাপার বানর! শুনতে অবাক লাগলেও এমন ঘটনার প্রমাণ মিলেছে উত্তর আমেরিকার দেশ পানামার এক দ্বীপে। হাওলার প্রজাতির বেশ কয়েকটি বানর ছানাকে অপহরণ করে নিয়ে যেতে দেখা গেছে ক্যাপুচিন জাতের বানরকে। সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে সে দৃশ্য। কিন্তু কেনো এমন আচরণ? এখনও বুঝে উঠতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।

স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এমন আচরণে হতবাক একদল গবেষক। সোমবার (১৯ মে) কারেন্ট বায়োলজি নামের এক সাময়িকীতে এ-সংক্রান্ত গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে।

তাতে বলা হয়েছে, ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দ্বীপের বিভিন্ন অংশে ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। সেসব ক্যামেরায় অন্তত ১১টি হাওলার বানরের বাচ্চা ক্যাপুচিন বানরদের হাতে অপহৃত হওয়ার ঘটনা ধরা পড়েছে।

জার্মানির দ্য ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউট অব অ্যানিমেল বিহেভিয়ারের গবেষক জো গোল্ডসবরো বলেছেন, এটি খুবই চমকপ্রদ আবিষ্কার। প্রাণীজগতে আমরা এ রকম কিছু আগে দেখিনি।

ক্যাপুচিন প্রজাতির বানরের আকার পোষা বিড়ালের মতো, এরা দীর্ঘজীবী ও চালাক। এ প্রজাতির বানরেরা একে অপরের কাছ থেকে নতুন নতুন আচরণ শেখে। এমনকি, পানামায় ক্যাপুচিন বানরদের একটি দল শক্ত আবরণযুক্ত খাবার, যেমন: বাদাম ও সামুদ্রিক খাবার ভাঙার জন্য পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করতে শিখে গেছে বলে জানান গবেষকরা।

ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউট ও স্মিথসোনিয়ান ট্রপিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকরা ক্যাপুচিন বানরের হাতিয়ার ব্যবহার প্রত্যক্ষ করতে ৮০টিরও বেশি ক্যামেরা স্থাপন করেছিলেন। তবে, ২০২২ সালের প্রথম দিকে প্রথমবারের মতো ক্যাপুচিন বানরের সঙ্গে হাউলার বানরের বাচ্চাকে দেখে তারা অবাক হয়ে যান।

ভিডিও ফুটেজে গবেষকরা দেখেছেন, ক্যাপুচিন বানরেরা তাদের পিঠে বাচ্চা ও হাতে পাথরের হাতিয়ার নিয়ে হাঁটছে। এ সময় তারা চেঁচামেচি ও একটু পরপরই হাতে থাকা পাথরে আঘাত করে শব্দ করছিল। তবে সেসব ফুটেজে অপহরণের মুহূর্তগুলো ধারণ করা সম্ভব হয়নি।

হাওলার বানরেরা দিনের বেশিরভাগ সময়ই গাছে কাটায়। সেখানেই অপহরণের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। ম্যাক্স প্ল্যাংক ও স্মিথসোনিয়ানের সহ-লেখক মার্গারেট ক্রোফুট বলেছেন, এই বিষয়ে আমাদের ধারণা খুবই সীমিত।

গবেষকরা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাচ্চা হাওলার বানরগুলো মারা গেছে। সাধারণত, হাওলার বানরশিশুরা তাদের মায়েদের দুধ খায়। ভিডিওতে আসা সব বাচ্চা কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস বয়সী। দুধ ছাড়ানোর মতো বয়স এগুলোর হয়নি। সম্ভবত মায়ের দুধ না পাওয়ার কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গবেষক ক্রোফুট বলেন, আমার আশাবাদী মন বলছে, কিছু বাচ্চা পালিয়ে তাদের মায়ের কাছে গেছে, যদিও এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

কেন ক্যাপুচিন বানরেরা এমন আচরণ করছে— এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন গবেষকরা। গবেষক দলটি প্রাথমিকভাবে ধারণা করেন, ক্যাপুচিন বানররা হয়তো শিকার করা কিংবা সহিংসতার প্রবণতা থেকে এমন আচরণ করছে।

তবে গবেষণায় দেখা গেছে, অপহরণের পর ক্যাপুচিন বানরের বাচ্চাগুলোর প্রতি কোনো ধরনের আক্রমণাত্মক আচরণে করেনি, উল্টো বাচ্চাগুলোকে আদর-যত্ন করছিল।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এটি একধরনের আচরণগত বিভ্রান্তি হতে পারে। এটির সূত্রপাত হয়তো কোনো এক ক্যাপুচিনের মাতৃত্বের ভুল প্রবৃত্তি কারণে। পরে এটি অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।

এটিকে বন্যপ্রাণীর বিরল সামাজিক ও আচরণগত ঘটনা বলে আখ্যায়িত করেছেন ফ্রান্সের সিএনআরএস ইনস্টিটিউট ফর কগনিটিভ সায়েন্সেসের গবেষক ক্যাথেরিন ক্রকফোর্ড।

 

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

বিজ্ঞানীদের অদ্ভুত আবিষ্কার, বানরেরাও অপহরণ করে!

আপলোড সময় : ০৪:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫

কিডন্যাপার বানর! শুনতে অবাক লাগলেও এমন ঘটনার প্রমাণ মিলেছে উত্তর আমেরিকার দেশ পানামার এক দ্বীপে। হাওলার প্রজাতির বেশ কয়েকটি বানর ছানাকে অপহরণ করে নিয়ে যেতে দেখা গেছে ক্যাপুচিন জাতের বানরকে। সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে সে দৃশ্য। কিন্তু কেনো এমন আচরণ? এখনও বুঝে উঠতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।

স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এমন আচরণে হতবাক একদল গবেষক। সোমবার (১৯ মে) কারেন্ট বায়োলজি নামের এক সাময়িকীতে এ-সংক্রান্ত গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে।

তাতে বলা হয়েছে, ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দ্বীপের বিভিন্ন অংশে ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। সেসব ক্যামেরায় অন্তত ১১টি হাওলার বানরের বাচ্চা ক্যাপুচিন বানরদের হাতে অপহৃত হওয়ার ঘটনা ধরা পড়েছে।

জার্মানির দ্য ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউট অব অ্যানিমেল বিহেভিয়ারের গবেষক জো গোল্ডসবরো বলেছেন, এটি খুবই চমকপ্রদ আবিষ্কার। প্রাণীজগতে আমরা এ রকম কিছু আগে দেখিনি।

ক্যাপুচিন প্রজাতির বানরের আকার পোষা বিড়ালের মতো, এরা দীর্ঘজীবী ও চালাক। এ প্রজাতির বানরেরা একে অপরের কাছ থেকে নতুন নতুন আচরণ শেখে। এমনকি, পানামায় ক্যাপুচিন বানরদের একটি দল শক্ত আবরণযুক্ত খাবার, যেমন: বাদাম ও সামুদ্রিক খাবার ভাঙার জন্য পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করতে শিখে গেছে বলে জানান গবেষকরা।

ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউট ও স্মিথসোনিয়ান ট্রপিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকরা ক্যাপুচিন বানরের হাতিয়ার ব্যবহার প্রত্যক্ষ করতে ৮০টিরও বেশি ক্যামেরা স্থাপন করেছিলেন। তবে, ২০২২ সালের প্রথম দিকে প্রথমবারের মতো ক্যাপুচিন বানরের সঙ্গে হাউলার বানরের বাচ্চাকে দেখে তারা অবাক হয়ে যান।

ভিডিও ফুটেজে গবেষকরা দেখেছেন, ক্যাপুচিন বানরেরা তাদের পিঠে বাচ্চা ও হাতে পাথরের হাতিয়ার নিয়ে হাঁটছে। এ সময় তারা চেঁচামেচি ও একটু পরপরই হাতে থাকা পাথরে আঘাত করে শব্দ করছিল। তবে সেসব ফুটেজে অপহরণের মুহূর্তগুলো ধারণ করা সম্ভব হয়নি।

হাওলার বানরেরা দিনের বেশিরভাগ সময়ই গাছে কাটায়। সেখানেই অপহরণের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। ম্যাক্স প্ল্যাংক ও স্মিথসোনিয়ানের সহ-লেখক মার্গারেট ক্রোফুট বলেছেন, এই বিষয়ে আমাদের ধারণা খুবই সীমিত।

গবেষকরা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাচ্চা হাওলার বানরগুলো মারা গেছে। সাধারণত, হাওলার বানরশিশুরা তাদের মায়েদের দুধ খায়। ভিডিওতে আসা সব বাচ্চা কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস বয়সী। দুধ ছাড়ানোর মতো বয়স এগুলোর হয়নি। সম্ভবত মায়ের দুধ না পাওয়ার কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গবেষক ক্রোফুট বলেন, আমার আশাবাদী মন বলছে, কিছু বাচ্চা পালিয়ে তাদের মায়ের কাছে গেছে, যদিও এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

কেন ক্যাপুচিন বানরেরা এমন আচরণ করছে— এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন গবেষকরা। গবেষক দলটি প্রাথমিকভাবে ধারণা করেন, ক্যাপুচিন বানররা হয়তো শিকার করা কিংবা সহিংসতার প্রবণতা থেকে এমন আচরণ করছে।

তবে গবেষণায় দেখা গেছে, অপহরণের পর ক্যাপুচিন বানরের বাচ্চাগুলোর প্রতি কোনো ধরনের আক্রমণাত্মক আচরণে করেনি, উল্টো বাচ্চাগুলোকে আদর-যত্ন করছিল।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এটি একধরনের আচরণগত বিভ্রান্তি হতে পারে। এটির সূত্রপাত হয়তো কোনো এক ক্যাপুচিনের মাতৃত্বের ভুল প্রবৃত্তি কারণে। পরে এটি অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।

এটিকে বন্যপ্রাণীর বিরল সামাজিক ও আচরণগত ঘটনা বলে আখ্যায়িত করেছেন ফ্রান্সের সিএনআরএস ইনস্টিটিউট ফর কগনিটিভ সায়েন্সেসের গবেষক ক্যাথেরিন ক্রকফোর্ড।