ঢাকা , বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
হান্ডিয়াল নিউজ২৪ ডটকম এ জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

বিএনপি করায় মুক্তিযোদ্ধার নাম কেটে দেন মন্ত্রী মোজাম্মেল

বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা দেখিয়ে তালিকা থেকে মুক্তিযোদ্ধার নাম কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে। মন্ত্রীর এলাকা গাজীপুরের পূবাইলের খিলগাঁও গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রউফ সরকার (গেজেট-৫৮২৮) এই আক্রোশের স্বীকার হন। পরে হাইকোর্টের আদেশে ওই মুক্তিযোদ্ধার সনদ ও ভাতা বহাল রাখা হয়।

জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ সরকারের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সালাউদ্দিন সরকারের জমি নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়। রাজনৈতিক সুবিধা নিতে আওয়ামী লীগের ঐ নেতা তৎকালীন মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মোজাম্মেল হকের পরামর্শে ঐ আওয়ামী লীগ ২০২১ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রউফ সরকারের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন দাখিল করেন। আবেদনে বলা হয় মো. আব্দুর রউফ সরকার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জামুকায় একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় সভাপতিত্ব করেন তৎকালীন মন্ত্রী মোজাম্মেল হক।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ সরকার। ছবি : সংগৃহীত

সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মো আব্দুর রউফ সরকারের কোন বক্তব্য না শুনেই একতরফা ভাবে তার গেজেট বাতিলের সুপারিশ করা হয়। ঐ সভায় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রউফ সরকারসহ আরও অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিলের সুপারিশ করা হয়। পরে গেজেট বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রউফ সরকার। সেই রিটের শুনানি গ্রহণ করে আদালত মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়কে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রউফ সরকারের মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বহাল রাখতে এবং তার নিয়মিত ভাতা প্রদান করতে নির্দেশ দেন।

নথিপত্র ঘেটে দেখা যায়, ১৯৭২ সালে হাবিবুল্লাহ বাহার স্বাক্ষরিত গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা সনদধারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রউফ সরকার ২০০৬ সালে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাইবাছাই কমিটিতে আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষ্য, সনদ, দলিল দস্তাবেজ যাচাইবাছাই শেষে তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে ২০১৩ সালে তৎকালীন গাজীপুর জেলা প্রশাসক এক চিঠিতে মো. আব্দুর রউফ সরকারকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য জামুকা ও মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রদান করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে মো. আব্দুর রউফ সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেট ভুক্ত হন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত তিনি নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে যাচ্ছেন।

তৎকালীন মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক পলাতক থাকলেও তার দোসর সালাউদ্দিন সরকার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রউফ সরকারকে ‘ভুয়া’ আক্ষায়িত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রউফ সরকার বলেন, আমি একাত্তরে ৩নং সেক্টরে ১১১ নং গেরিলা ইউনিটে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। সালাউদ্দিন সরকারের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধ থাকায় তার বিরুদ্ধে আমি একাধিক মামলা দায়ের করি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সালাউদ্দিন সরকার আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করছেন।

তিনি আরও বলেন সালাউদ্দিন সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র হত্যা মামলার আসামি।

এ বিষয়ে সালাউদ্দিন সরকার বলেন, জমিসংক্রান্ত বিরোধের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের আবেদন করার কোন সম্পর্ক নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জামুকা তার গেজেট বাতিল করেছে। তবে উচ্চ আদালতের আদেশের বিষয়টি উল্লেখ করা হলে তিনি উত্তর এড়িয়ে যান।

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

বিএনপি করায় মুক্তিযোদ্ধার নাম কেটে দেন মন্ত্রী মোজাম্মেল

আপলোড সময় : ১০:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫

বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা দেখিয়ে তালিকা থেকে মুক্তিযোদ্ধার নাম কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে। মন্ত্রীর এলাকা গাজীপুরের পূবাইলের খিলগাঁও গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রউফ সরকার (গেজেট-৫৮২৮) এই আক্রোশের স্বীকার হন। পরে হাইকোর্টের আদেশে ওই মুক্তিযোদ্ধার সনদ ও ভাতা বহাল রাখা হয়।

জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ সরকারের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সালাউদ্দিন সরকারের জমি নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়। রাজনৈতিক সুবিধা নিতে আওয়ামী লীগের ঐ নেতা তৎকালীন মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মোজাম্মেল হকের পরামর্শে ঐ আওয়ামী লীগ ২০২১ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রউফ সরকারের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন দাখিল করেন। আবেদনে বলা হয় মো. আব্দুর রউফ সরকার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জামুকায় একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় সভাপতিত্ব করেন তৎকালীন মন্ত্রী মোজাম্মেল হক।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ সরকার। ছবি : সংগৃহীত

সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মো আব্দুর রউফ সরকারের কোন বক্তব্য না শুনেই একতরফা ভাবে তার গেজেট বাতিলের সুপারিশ করা হয়। ঐ সভায় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রউফ সরকারসহ আরও অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিলের সুপারিশ করা হয়। পরে গেজেট বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রউফ সরকার। সেই রিটের শুনানি গ্রহণ করে আদালত মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়কে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রউফ সরকারের মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বহাল রাখতে এবং তার নিয়মিত ভাতা প্রদান করতে নির্দেশ দেন।

নথিপত্র ঘেটে দেখা যায়, ১৯৭২ সালে হাবিবুল্লাহ বাহার স্বাক্ষরিত গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা সনদধারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রউফ সরকার ২০০৬ সালে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাইবাছাই কমিটিতে আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষ্য, সনদ, দলিল দস্তাবেজ যাচাইবাছাই শেষে তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে ২০১৩ সালে তৎকালীন গাজীপুর জেলা প্রশাসক এক চিঠিতে মো. আব্দুর রউফ সরকারকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য জামুকা ও মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রদান করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে মো. আব্দুর রউফ সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেট ভুক্ত হন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত তিনি নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে যাচ্ছেন।

তৎকালীন মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক পলাতক থাকলেও তার দোসর সালাউদ্দিন সরকার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রউফ সরকারকে ‘ভুয়া’ আক্ষায়িত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রউফ সরকার বলেন, আমি একাত্তরে ৩নং সেক্টরে ১১১ নং গেরিলা ইউনিটে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। সালাউদ্দিন সরকারের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধ থাকায় তার বিরুদ্ধে আমি একাধিক মামলা দায়ের করি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সালাউদ্দিন সরকার আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করছেন।

তিনি আরও বলেন সালাউদ্দিন সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র হত্যা মামলার আসামি।

এ বিষয়ে সালাউদ্দিন সরকার বলেন, জমিসংক্রান্ত বিরোধের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের আবেদন করার কোন সম্পর্ক নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জামুকা তার গেজেট বাতিল করেছে। তবে উচ্চ আদালতের আদেশের বিষয়টি উল্লেখ করা হলে তিনি উত্তর এড়িয়ে যান।