জেলার কাজিপুরে একসময় সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে মিষ্টি আলুর চাষ হলেও দাম কমে যাওয়ায় মিষ্টি আলু চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা। অন্যদিকে কম পরিশ্রমে অধিক ফলন ও অধিক লাভের আশায় আলু চাষের জমিতে ভুট্টাসহ অন্যান্য শস্য আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা।
স্থানীয় চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক সময় সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্যে কাজিপুরে সবচেয়ে বেশি জমিতে মিষ্টি আলুর চাষ হলেও বর্তমানে এর চাষ আশঙ্কাজনকহারে কমেছে। মিষ্টি জাতের আলুচাষের জমিতে এখন ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলের চাষ শুরু হয়েছে। এর ফলে কাজিপুরের একসময়ের সমৃদ্ধ এই ফসল চাষের ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।
তারা জানান, তুলনামূলক উৎপাদন খরচ কম এবং প্রায় কোন সার প্রয়োগ ছাড়াই মিষ্টিজাতের আলুর চাষ করতো কৃষকেরা। বিশেষ করে যমুনার চরাঞ্চলসহ বালুময় মাটিতে এর ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা চরাঞ্চলকেই বেছে নিতো আলু চাষের জন্য। নিম্ন আয়ের মানুষেরা চাল ও গমের মতই এই আলু কিনে নিয়ে খেয়ে জীবন ধারণ করতো। উৎপাদন বেশি অথচ দামে চাল গমের তুলনায় অনেক সস্তা ছিলো মিষ্টি আলু। কিন্তু কালক্রমে আলু উৎপাদনের জমিতে কৃষক ভুট্টার চাষ করে অধিক ফলন ও দাম পেতে শুরু করে। বাজারে ভুট্টার চাহিদা বাড়তে থাকলেও মিষ্টি আলুর চাহিদা কমতে থাকে।
পরবর্তীতে শুধুমাত্র পরিবারের চাহিদা মেটাতে বাড়ির উঠোনে বা বাড়ির আশেপাশের অব্যাবহৃত নীচু জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করা হতো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে অবহেলিত মিষ্টি আলুর চাষ একেবারেই কমে গেছে। বাণিজ্যিকভাবে তো বটেই শখের বশেও কেউ তেমন একটা এই আলুর চাষ করে না এখন।
কাজিপুর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে বিগত এক যুগে মিষ্টি জাতের আলুর চাষ কমেছে অনেক। আগে প্রতিটি গ্রামের কৃষকেরাই কম-বেশি মিষ্টি আলুর চাষ করতেন। এখন মিষ্টি আলুর চাষ অনেক গ্রামে একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে।
কৃষি অফিসের তথ্যমতে, গত অর্থবছরেও উপজেলার ১০২ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলুর চাষ হয়েছিলো। এ বছর তা হ্রাস পেয়ে ৮৫ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। অথচ একযুগ আগেও এর পরিমাণ ছিলো প্রায় তিনগুণ।
মাইজবাড়ি চরের আলু চাষী সোহাগ মিয়া বাসসকে বলেন, ‘আমার বাপ-দাদারা আগে দশ বিঘা জমিতে শেখা আলু (মিষ্টি জাতের আলু)র চাষ করতো। এখন ওইসব জমিতে আমরা ভুট্টা লাগাইছি। ভুট্টায় লাভ বেশি। তবে এবছর নিজেদের খাওয়ার জন্য আমি আধা বিঘা জমিতে আলুর চাষ করছি’।
কুনকুনিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুস সোবাহান বলেন, ‘এবার বিশ শতাংশ জমিতে আলু লাগাইছি। এহন তোলা শুরু করছি। বাজারে প্রতিমণ আলু সাড়ে পাঁচ’শ থেকে ছয়’শ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন প্রতি শতাংশে প্রায় দেড় থেকে দুই মণ আলুর ফলন হয়েছে’।
কাজিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বাসসের সাথে আলাপকালে বলেন, লাভ বেশি হওয়ায় কৃষক এখন আলুর জমিতে ভুট্টা ও বাদামের চাষ শুরু করেছে। তবে এখনও কিছু কিছু আলুর চাষ হচ্ছে।