ঢাকা , শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
জরুরি সংবাদকর্মী আবশ্যক। সবাইকে হান্ডিয়াল নিউজ২৪ পরিবারের পক্ষ থেকে পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা।

পাবনায় ঋণের দায়ে জেলে যাওয়া ১২ কৃষকের জামিন মঞ্জুর

মাত্র ২৫ হাজার টাকা ঋণ খেলাপির দায়ে জেলে যাওয়া পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ১২ কৃষকের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই সঙ্গে এই মামলায় বাকি ২৫ জনকে আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

আজ রোববার পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট  আদালত-২ এর বিচারক মো. শামসুজ্জামান এই আদেশ দেন।

জামিনপ্রাপ্তরা হলেন- উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের ভাড়ইমারি গ্রামের শুকুর প্রামানিকের ছেলে আলম প্রামাণিক (৫০), মনি মন্ডলের ছেলে মাহাতাব মন্ডল (৪৫), মৃত কোরবান আলীর ছেলে কিতাব আলী (৫০), হারেজ মিয়ার ছেলে হান্নান মিয়া (৪৩), মৃত আবুল হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ মজনু (৪০) ও মৃত আখের উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ আতিয়ার রহমান (৫০), মৃত সোবহান মন্ডলের ছেলে আব্দুল গণি মন্ডল (৫০), কামাল প্রামানিকের ছেলে শামীম হোসেন (৪৫), মৃত আয়েজ উদ্দিনের ছেলে সামাদ প্রামানিক (৪৩), মৃত সামির উদ্দিনের ছেলে নূর বক্স (৪৫), রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ আকরাম (৪৬) ও লালু খাঁর ছেলে মোহাম্মদ রজব আলী (৪০)।

বাকি ২৫ জনকে আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তারা একই দিনে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করবেন বলে জানা গেছে।

আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান সুমন, অ্যাডভোকেট মইনুল ইসলাম মোহন ও অ্যাডভোকেট কাজী সাজ্জাদ ইকবাল লিটন।

এর আগে ৩৭ কৃষকের বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত পুলিশ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে। শুক্রবার দুপুরে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।

ঈশ্বরদী থানা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক নামে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে  তাঁরা ২৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ নিয়েছিলেন। এই ঋণের বিপরীতে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরবর্তীতে আদালত ৩৭ জন ঋণ গ্রহীতা কৃষকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে।

এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের অধিকাংশই প্রান্তিক কৃষক। ২০২১ সালে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পরবর্তীতে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভিত্তিতেই ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের অনেকেই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, তাঁদের ঋণের টাকা পরিশোধ আছে। মামলার বিষয়টি তাঁরা জানতেন না। কেন মামলা হলো তাঁরা তা জানেন না।

এদিকে, দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপির সময় মাত্র ২৫ হাজার টাকার জন্য ১২ প্রান্তিক কৃষক জেলে যাওয়ার ঘটনায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। পাবনা জেলা শহরের এলএমবি মার্কেটে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের কার্যালয় বলে জানা গেছে। তবে এ  প্রসঙ্গে জানতে শুক্রবার দুপুরে ওই কার্যালয়ে গিয়ে তা বন্ধ পাওয়া গেছে।

মামলার বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষক সোসাইটির সভাপতি জাতীয় স্বর্ণ পদকপ্রাপ্ত কৃষক সিদ্দিকুর রহমান কুল ময়েজ বলেন, ‘সারা দেশের মানুষের জন্য যারা খাদ্য উৎপাদন করে, তাদেরকে ঋণের দায়ে জেলে যেতে হবে এটা কৃষকের জন্য অপমানজনক। সারা দেশের কৃষক নানা সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছে। সরকার আমাদের সহযোগিতা না করলে না খেয়ে থাকতে হবে। তাই দেশের আর কোনো কৃষককে যেন এইভাবে হয়রানি না করা হয়।

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

পাবনায় ঋণের দায়ে জেলে যাওয়া ১২ কৃষকের জামিন মঞ্জুর

আপলোড সময় : ০৪:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২২

মাত্র ২৫ হাজার টাকা ঋণ খেলাপির দায়ে জেলে যাওয়া পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ১২ কৃষকের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই সঙ্গে এই মামলায় বাকি ২৫ জনকে আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

আজ রোববার পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট  আদালত-২ এর বিচারক মো. শামসুজ্জামান এই আদেশ দেন।

জামিনপ্রাপ্তরা হলেন- উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের ভাড়ইমারি গ্রামের শুকুর প্রামানিকের ছেলে আলম প্রামাণিক (৫০), মনি মন্ডলের ছেলে মাহাতাব মন্ডল (৪৫), মৃত কোরবান আলীর ছেলে কিতাব আলী (৫০), হারেজ মিয়ার ছেলে হান্নান মিয়া (৪৩), মৃত আবুল হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ মজনু (৪০) ও মৃত আখের উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ আতিয়ার রহমান (৫০), মৃত সোবহান মন্ডলের ছেলে আব্দুল গণি মন্ডল (৫০), কামাল প্রামানিকের ছেলে শামীম হোসেন (৪৫), মৃত আয়েজ উদ্দিনের ছেলে সামাদ প্রামানিক (৪৩), মৃত সামির উদ্দিনের ছেলে নূর বক্স (৪৫), রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ আকরাম (৪৬) ও লালু খাঁর ছেলে মোহাম্মদ রজব আলী (৪০)।

বাকি ২৫ জনকে আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তারা একই দিনে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করবেন বলে জানা গেছে।

আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান সুমন, অ্যাডভোকেট মইনুল ইসলাম মোহন ও অ্যাডভোকেট কাজী সাজ্জাদ ইকবাল লিটন।

এর আগে ৩৭ কৃষকের বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত পুলিশ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে। শুক্রবার দুপুরে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।

ঈশ্বরদী থানা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক নামে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে  তাঁরা ২৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ নিয়েছিলেন। এই ঋণের বিপরীতে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরবর্তীতে আদালত ৩৭ জন ঋণ গ্রহীতা কৃষকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে।

এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের অধিকাংশই প্রান্তিক কৃষক। ২০২১ সালে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পরবর্তীতে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভিত্তিতেই ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের অনেকেই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, তাঁদের ঋণের টাকা পরিশোধ আছে। মামলার বিষয়টি তাঁরা জানতেন না। কেন মামলা হলো তাঁরা তা জানেন না।

এদিকে, দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপির সময় মাত্র ২৫ হাজার টাকার জন্য ১২ প্রান্তিক কৃষক জেলে যাওয়ার ঘটনায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। পাবনা জেলা শহরের এলএমবি মার্কেটে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের কার্যালয় বলে জানা গেছে। তবে এ  প্রসঙ্গে জানতে শুক্রবার দুপুরে ওই কার্যালয়ে গিয়ে তা বন্ধ পাওয়া গেছে।

মামলার বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষক সোসাইটির সভাপতি জাতীয় স্বর্ণ পদকপ্রাপ্ত কৃষক সিদ্দিকুর রহমান কুল ময়েজ বলেন, ‘সারা দেশের মানুষের জন্য যারা খাদ্য উৎপাদন করে, তাদেরকে ঋণের দায়ে জেলে যেতে হবে এটা কৃষকের জন্য অপমানজনক। সারা দেশের কৃষক নানা সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছে। সরকার আমাদের সহযোগিতা না করলে না খেয়ে থাকতে হবে। তাই দেশের আর কোনো কৃষককে যেন এইভাবে হয়রানি না করা হয়।