ঢাকা , বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
হান্ডিয়াল নিউজ২৪ ডটকম এ জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

পাবনার চাটমোহরে আগাম বন্যায় ডুবে গেছে ধান

পাবনার চাটমোহর উপজেলার নিম্ন অঞ্চলে আগাম বন্যায় ডুবে গেছে ধান। এতে করে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। ১২শ টাকাও মিলছেনা কৃষি শ্রমিক। মাঠেই নষ্ট হচ্ছে ধান। নৌকা কলাগাছ দিয়ে তৈরি ভুড় এমনকি  পলিথেনের নৌকা বানিয়ে পানি থেকে  ধান পরিবহণ করা হয়। প্রতিদিনই বাড়ছে বন্যার পানি জানিয়েছেন কৃষক। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গুমানী, চিকনাই ও হান্ডিয়াল কাটা নদীসহ উপজেলার বিভিন্ন বিলে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে ফসলি মাঠ ও বিল। পানিতে উপজেলার নিন্ম অঞ্চলের প্রায় ২ হাজার বিঘা জমির পাকা বোরো ধান ডুবে গেছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান কৃষকরা।

সরজমিনে সোমবার (৯জুন) হান্ডিয়ালের সিদ্ধিনগর, পাকপাড়া, নবীন, নলডাঙ্গা, স্থল ও দরাপপুর এলাকার মাঠে দেখা গেছে কৃষক পানির মধ্যেই পাকা বোরো ধান কেটে তুলছেন। বন্যার পানি থেকে ফসল রক্ষায় স্থানীয় কৃষকেরা প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। গত কয়েকদিন ধরে এ অঞ্চলে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সারা বছরের খাওয়ার ধান ডুবে যাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। শ্রমিকের অভাবে কৃষক নিজেরাই পানিতে ডুবে থাকা ধান কেটে তোলার চেষ্টা করছেন। ধানের বাম্পার ফলনেও কৃষকের মুখে হাসি কেড়ে নিয়েছে আগাম বন্যা।

সিদ্ধিনগর গ্রামের কৃষক সুলতান হোসেন বলেন, ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। হঠাৎ বিলে পানি এসে জমি তলিয়ে গেছে। ধানকাটার ভরা মৌসুমে চড়া মজুরি দিয়েও মিলছে না শ্রমিক। এতে মাঠেই নষ্ট হচ্ছে ধান।

একই এলাকার কৃষক মোতালেব হোসেন ও আক্তার হোসেন বলেন, বিলে পানি বৃদ্ধিতে নৌকা সংকটে পড়েছে কৃষক। অভিনব কৌশলে পলিথিনের নৌকা বানিয়ে ধান কেটে বিল পাড়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। এ এলাকায় অর্ধেকেরও বেশি জমির ধান এখনো পানিতে তলিয়ে রছেয়ে।

কয়েকজন চাষি বলেন, বন্যার পানি ও বৃষ্টিপাতে জমি ডুবে ধানের ক্ষতি হচ্ছে। চোখের সামনে পাকা ও আধাপাকা ধান পানিতে ডুবে ফসলহানি ঘটছে। ধানকাটা শ্রমিকের অভাবে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কোন উপায় নাই।

প্রতি বিঘা জমিতে ধান কাটতে শ্রমিক লাগছে ৮ থেকে ১০ জন। প্রতি শ্রমিকের মজুরি ১২শ থেকে ১৪শ টাকা দিতে হচ্ছে। এক বিঘার ধান কেটে বাড়ি আনতে ও মাড়াই ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। এছাড়াও চারা বোনা, ধান রোপণ, সার, কীটনাশক, নিড়ানি ও পানি সেচ খরচা তো রয়েছেই। পানিতে পড়া ধান বিঘা প্রতি ১৫মন উৎপাদন হচ্ছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। পানিতে ডুবা খড় নষ্ট হচ্ছে তা বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। কৃষকের প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৫ হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে কৃষকরা জানান।

ধানকাটা শ্রমিকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, সব জিনিসের দাম বেশি, তাই মজুরিও বেশি। তাছাড়া পানির মধ্যে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়। শরীর খারাপ হচ্ছে, মজুরি বেশি না নিলে কাজ করা সম্ভবনা।

চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, চাটমোহর উপজেলায় এ মৌসুমে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে নিচু জমির পরিমাণ ২ হাজার ২শ হেক্টর। ধানের ফলন খুব ভাল হয়েছে। হঠাৎ বন্যার পানি বৃদ্ধির কারণে পাকা-আধাপাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছে কৃষক।  কৃষি অফিস থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করছি।

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

পাবনার চাটমোহরে আগাম বন্যায় ডুবে গেছে ধান

আপলোড সময় : ০৮:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫

পাবনার চাটমোহর উপজেলার নিম্ন অঞ্চলে আগাম বন্যায় ডুবে গেছে ধান। এতে করে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। ১২শ টাকাও মিলছেনা কৃষি শ্রমিক। মাঠেই নষ্ট হচ্ছে ধান। নৌকা কলাগাছ দিয়ে তৈরি ভুড় এমনকি  পলিথেনের নৌকা বানিয়ে পানি থেকে  ধান পরিবহণ করা হয়। প্রতিদিনই বাড়ছে বন্যার পানি জানিয়েছেন কৃষক। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গুমানী, চিকনাই ও হান্ডিয়াল কাটা নদীসহ উপজেলার বিভিন্ন বিলে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে ফসলি মাঠ ও বিল। পানিতে উপজেলার নিন্ম অঞ্চলের প্রায় ২ হাজার বিঘা জমির পাকা বোরো ধান ডুবে গেছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান কৃষকরা।

সরজমিনে সোমবার (৯জুন) হান্ডিয়ালের সিদ্ধিনগর, পাকপাড়া, নবীন, নলডাঙ্গা, স্থল ও দরাপপুর এলাকার মাঠে দেখা গেছে কৃষক পানির মধ্যেই পাকা বোরো ধান কেটে তুলছেন। বন্যার পানি থেকে ফসল রক্ষায় স্থানীয় কৃষকেরা প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। গত কয়েকদিন ধরে এ অঞ্চলে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সারা বছরের খাওয়ার ধান ডুবে যাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। শ্রমিকের অভাবে কৃষক নিজেরাই পানিতে ডুবে থাকা ধান কেটে তোলার চেষ্টা করছেন। ধানের বাম্পার ফলনেও কৃষকের মুখে হাসি কেড়ে নিয়েছে আগাম বন্যা।

সিদ্ধিনগর গ্রামের কৃষক সুলতান হোসেন বলেন, ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। হঠাৎ বিলে পানি এসে জমি তলিয়ে গেছে। ধানকাটার ভরা মৌসুমে চড়া মজুরি দিয়েও মিলছে না শ্রমিক। এতে মাঠেই নষ্ট হচ্ছে ধান।

একই এলাকার কৃষক মোতালেব হোসেন ও আক্তার হোসেন বলেন, বিলে পানি বৃদ্ধিতে নৌকা সংকটে পড়েছে কৃষক। অভিনব কৌশলে পলিথিনের নৌকা বানিয়ে ধান কেটে বিল পাড়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। এ এলাকায় অর্ধেকেরও বেশি জমির ধান এখনো পানিতে তলিয়ে রছেয়ে।

কয়েকজন চাষি বলেন, বন্যার পানি ও বৃষ্টিপাতে জমি ডুবে ধানের ক্ষতি হচ্ছে। চোখের সামনে পাকা ও আধাপাকা ধান পানিতে ডুবে ফসলহানি ঘটছে। ধানকাটা শ্রমিকের অভাবে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কোন উপায় নাই।

প্রতি বিঘা জমিতে ধান কাটতে শ্রমিক লাগছে ৮ থেকে ১০ জন। প্রতি শ্রমিকের মজুরি ১২শ থেকে ১৪শ টাকা দিতে হচ্ছে। এক বিঘার ধান কেটে বাড়ি আনতে ও মাড়াই ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। এছাড়াও চারা বোনা, ধান রোপণ, সার, কীটনাশক, নিড়ানি ও পানি সেচ খরচা তো রয়েছেই। পানিতে পড়া ধান বিঘা প্রতি ১৫মন উৎপাদন হচ্ছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। পানিতে ডুবা খড় নষ্ট হচ্ছে তা বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। কৃষকের প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৫ হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে কৃষকরা জানান।

ধানকাটা শ্রমিকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, সব জিনিসের দাম বেশি, তাই মজুরিও বেশি। তাছাড়া পানির মধ্যে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়। শরীর খারাপ হচ্ছে, মজুরি বেশি না নিলে কাজ করা সম্ভবনা।

চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, চাটমোহর উপজেলায় এ মৌসুমে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে নিচু জমির পরিমাণ ২ হাজার ২শ হেক্টর। ধানের ফলন খুব ভাল হয়েছে। হঠাৎ বন্যার পানি বৃদ্ধির কারণে পাকা-আধাপাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছে কৃষক।  কৃষি অফিস থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করছি।