
দেশের সংবাদপত্র খুললেই এখন ধর্ষণের খবর চোখে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রতিদিন নতুন নতুন ঘটনার তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই ঘটনা কি আকস্মিকভাবে বেড়ে গেছে, নাকি এতদিন এসব লুকিয়ে রাখা হতো? যদি লুকিয়েই রাখা হতো, তাহলে কেন? আর যদি ধর্ষণের ঘটনা সত্যিই বেড়ে গিয়ে থাকে, তাহলে এর পেছনের কারণ কী?
১. অপরাধের সংখ্যা না কি প্রচারের বিস্তার?
একটি বিষয় স্পষ্ট, ধর্ষণ কখনোই নতুন কোনো সমস্যা ছিল না। এটি সমাজের অন্ধকার কোণেই রয়ে গেছে বছরের পর বছর। আগে পত্রিকায় এসব খবর খুব বেশি জায়গা পেত না, পরিবার বা সমাজ অনেক ক্ষেত্রেই ঘটনাগুলো চেপে রাখত, ভুক্তভোগীর পরিবার সামাজিক লজ্জার ভয়ে মুখ খুলতে চাইত না।
কিন্তু এখন সমাজ বদলেছে। ভুক্তভোগীরা সাহস করে এগিয়ে আসছেন, সংবাদমাধ্যমগুলোও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করছে। ফলে হয়তো অপরাধের সংখ্যা নয়, বরং অপরাধের দৃশ্যমানতা বেড়েছে।
২. বিচারহীনতার সংস্কৃতি: অপরাধীর ভয় কিসের?
দেশে ধর্ষণের ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কমই হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব, টাকার জোর কিংবা দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। ফলে ধর্ষণ যেন এক ‘শাস্তিহীন অপরাধ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে।
যখন একজন ধর্ষক দেখে যে তার আগে বহু অপরাধী শাস্তি ছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছে, তখন তার মধ্যেও ভয় কাজ করে না। তাই অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
৩. সমাজের নৈতিক অবক্ষয় ও প্রযুক্তির অপব্যবহার
একটি সমাজের নৈতিক মানদণ্ড যত নিচে নামে, সেখানে অপরাধ তত বাড়ে। আজকাল অনলাইন পর্নোগ্রাফির সহজলভ্যতা, অশ্লীল ভিডিওর বিস্তার, সামাজিক অনুশাসনের অভাব ও পারিবারিক বন্ধনের দুর্বলতা তরুণদের মধ্যে বিকৃত যৌন মানসিকতা গড়ে তুলছে।
শিশুরা এখন ছোটবেলা থেকেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে অশ্লীল কনটেন্টের সংস্পর্শে আসছে। ফলে তারা বিপথে যাচ্ছে, ভুল ধারণা নিয়ে বড় হচ্ছে, যা পরবর্তী সময়ে নারীর প্রতি সহিংস আচরণে রূপ নেয়।
৪. নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ও দোষারোপের প্রবণতা
আমাদের সমাজে এখনো নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়নি। ধর্ষণের পরও অনেক সময় ভুক্তভোগীকেই দোষারোপ করা হয়—সে কেন রাতে বাইরে গিয়েছিল, কেন ওই পোশাক পরেছিল, কেন প্রতিবাদ করল না! এই মনোভাব অপরাধীদের আরও সাহসী করে তোলে।
উপায় কী?
১. দ্রুত ও কঠোর বিচার নিশ্চিত করতে হবে: ধর্ষণের বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি না হলে অপরাধ কমবে না।
2. নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে: রাত-বেরাতে চলাফেরার জন্য নারীদের দোষারোপ না করে, তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
3. শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি: শিশুদের ছোটবেলা থেকেই সম্মানের শিক্ষায় বড় করতে হবে, যাতে তারা নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়।
4. পরিবার ও সমাজের ভূমিকা: বাবা-মায়ের উচিত সন্তানের নৈতিক শিক্ষা নিশ্চিত করা, তাদের বিকৃত কনটেন্টের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখা।
ধর্ষণ বন্ধ করতে চাইলে শুধু আইন নয়, মানসিকতার পরিবর্তনও জরুরি। আমাদের সবাইকে সোচ্চার হতে হবে, নাহলে এই ভয়াবহতা থামবে না।