ঢাকা , শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
হান্ডিয়াল নিউজ২৪ ডটকম এ জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

তিন গম্বুজ বিশিষ্ট চাটমোহর ‘শাহী মসজিদ’

শাহী মসজিদ

বাংলার মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের অপূর্ব নিদর্শন ৪৪১ বছরের ঐতিহ্য তিন গম্বুজ বিশিষ্ট চাটমোহর ‘শাহী মসজিদ’। পাবনার চাটমোহর উপজেলা পরিষদ থেকে পশ্চিম দিকে ২০০ গজ দূরেই ঐতিহাসিক চাটমোহর ‘শাহী মসজিদ’।

মসজিদের শিলালিপিতে এর নির্মাতা ও নির্মাণকাল সম্পর্কে লেখা রয়েছে। ফার্সি ভাষায় লিখিত শিলালিপি থেকে জানা যায়, বিশাল এই মসজিদ সুলতান সৈয়দ বংশীয় প্রধান সৈয়দ আবুল ফতে মুহাম্মদ মাসুম খাঁনের সময় নির্মিত।

কাকশাল গোত্রের সন্তান খান মুহাম্মদ ‍তুর্কি খান ৯৮৯ হিজরি তথা ১৫৮১ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি নির্মাণ করেন। শিলালিপি অনুযায়ী অনুমাণ করা হয় মাসুম খাঁন নিজেকে সুলতান ঘোষণা করার কিছুকালের জন্য পাবনায় স্বাধীন সালতানাত প্রতিষ্ঠা করেন এবং চাটমোহরে রাজধানী স্থাপন করেন।

শাহী মসজিদের দেয়ালে থাকা প্রাচীন ভাস্কর্যগুলো মসজিদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক। এ ছাড়া ক্ষুদ্রাকৃতির যে শিলালিপি মসজিদের সামনের ইঁদারার ভেতরের দেয়ালে স্থাপন করা ছিল, তা এখন মসজিদের প্রধান প্রবেশ খিলানে রাখা রয়েছে।

মূল শিলালিপিটি রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। বগুড়ার খেরুয়া মসজিদের সঙ্গে সাদৃশপূর্ণ ছোট ছোট পাতলা জাফরি ইটের সমন্বয়ে নির্মিত চাটমোহর শাহী মসজিদের দৈর্ঘ্য ৪৫ ফুট, প্রস্থ সাড়ে ২২ ফুট ও উচ্চতা ৪৫ ফুট। মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় করেন।

স্থানীয় প্রবীণরা বলেন, এক সময় চাটমোহর ছিল পাবনার অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র। মোঘল ও পাঠানদের অবাধ বিচরণ ছিল এখানে। তখনই তুর্কি খান কাকশাল মসজিদটি নির্মাণ করেন। তবে অনেক বইয়ের পাতায় এটাকে মাসুম কাবলির মসজিদ বলেও উল্লেখ করা হয়।

মসজিদটি যে জাফরি ইটে বানানো তা এখনকার ইটের মতো নয়। এগুলো খানিকটা চিকন হতো। আর ওই ইট দেখেই বোঝা যায় মসজিদটি কোন আমলের।

মসজিদের ভেতর দুটো কাতার দাঁড়াতে পারে। ভেতরে কালিমা তাইয়েবা লিখিত একটি কালো পাথর রয়েছে। বর্তমানে মসজিদটি একটি সংরক্ষিত ইমারত।

একসময় মসজিদটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। ৮০’র দশকে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর মসজিদটির সংস্কার করে। সংস্কারের কয়েকবছর পর মসজিদের তিনটি গম্বুজ ও ছাদ প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। পরে অধিদফতরের অধীনে মসজিদটি আবার সংস্কার করে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

মসজিদটিতে তিনটি প্রবেশপথ। তিনটি দরজার মধ্যে প্রধান প্রবেশপথে উঁচু দরজার ওপরে কালো পাথরের মাঝে খোদাই করা কালেমা শাহাদাৎ লেখা রয়েছে। মূল প্রবেশপথ ছাড়া বাকি দুটি একই ধরনের।

প্রবেশপথের সঙ্গে মিল রেখে পশ্চিম দেয়ালে বানানো হয়েছে তিনটি মিহরাব। সুলতানি রীতিতে মসজিদটির কার্নিশ সামান্য বাঁকানো। খিলানগুলোতে এখনও গোলাপ নকশার চিহ্ন রয়েছে। প্রতিটি খিলান পথেরই দু’পাশে রয়েছে দুটি করে আয়তাকার খোপ নকশা। নকশাগুলো এখন ফাঁকা। তবে ধারণা করা আগে এখানে অলঙ্করণ ছিল।

দেয়ালের মাঝামাঝি অংশে ছাঁচে ঢালা নকশার একটি সারি রয়েছে। যে কারণে মসজিদটিকে বাইরে থেকে দেখতে দ্বিতল বলে মনে হয়। মিহরাবগুলো আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে স্থাপিত। শুরুতে এগুলোতে পোড়ামাটির অলঙ্করণ ছিল। যার কিছু চিহ্ন এখনও খুঁজে পাওয়া যায়। গোলাপ নকশা, পুষ্পলতা এবং জ্যামিতিক নকশার মতো নানা মোটিফ এখানে ব্যবহৃত হয়েছিল।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় হয় এই মসজিদে। এ ছাড়া মসজিদের বাইরে দুটি ঈদের নামাজের জামাতও হয়। এই মসজিদে একজন ইমাম ও একজন মুয়াজ্জিন রয়েছেন। দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের একজন সাইট পরিচালক।

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

তিন গম্বুজ বিশিষ্ট চাটমোহর ‘শাহী মসজিদ’

আপলোড সময় : ১১:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ নভেম্বর ২০২৩

বাংলার মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের অপূর্ব নিদর্শন ৪৪১ বছরের ঐতিহ্য তিন গম্বুজ বিশিষ্ট চাটমোহর ‘শাহী মসজিদ’। পাবনার চাটমোহর উপজেলা পরিষদ থেকে পশ্চিম দিকে ২০০ গজ দূরেই ঐতিহাসিক চাটমোহর ‘শাহী মসজিদ’।

মসজিদের শিলালিপিতে এর নির্মাতা ও নির্মাণকাল সম্পর্কে লেখা রয়েছে। ফার্সি ভাষায় লিখিত শিলালিপি থেকে জানা যায়, বিশাল এই মসজিদ সুলতান সৈয়দ বংশীয় প্রধান সৈয়দ আবুল ফতে মুহাম্মদ মাসুম খাঁনের সময় নির্মিত।

কাকশাল গোত্রের সন্তান খান মুহাম্মদ ‍তুর্কি খান ৯৮৯ হিজরি তথা ১৫৮১ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি নির্মাণ করেন। শিলালিপি অনুযায়ী অনুমাণ করা হয় মাসুম খাঁন নিজেকে সুলতান ঘোষণা করার কিছুকালের জন্য পাবনায় স্বাধীন সালতানাত প্রতিষ্ঠা করেন এবং চাটমোহরে রাজধানী স্থাপন করেন।

শাহী মসজিদের দেয়ালে থাকা প্রাচীন ভাস্কর্যগুলো মসজিদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক। এ ছাড়া ক্ষুদ্রাকৃতির যে শিলালিপি মসজিদের সামনের ইঁদারার ভেতরের দেয়ালে স্থাপন করা ছিল, তা এখন মসজিদের প্রধান প্রবেশ খিলানে রাখা রয়েছে।

মূল শিলালিপিটি রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। বগুড়ার খেরুয়া মসজিদের সঙ্গে সাদৃশপূর্ণ ছোট ছোট পাতলা জাফরি ইটের সমন্বয়ে নির্মিত চাটমোহর শাহী মসজিদের দৈর্ঘ্য ৪৫ ফুট, প্রস্থ সাড়ে ২২ ফুট ও উচ্চতা ৪৫ ফুট। মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় করেন।

স্থানীয় প্রবীণরা বলেন, এক সময় চাটমোহর ছিল পাবনার অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র। মোঘল ও পাঠানদের অবাধ বিচরণ ছিল এখানে। তখনই তুর্কি খান কাকশাল মসজিদটি নির্মাণ করেন। তবে অনেক বইয়ের পাতায় এটাকে মাসুম কাবলির মসজিদ বলেও উল্লেখ করা হয়।

মসজিদটি যে জাফরি ইটে বানানো তা এখনকার ইটের মতো নয়। এগুলো খানিকটা চিকন হতো। আর ওই ইট দেখেই বোঝা যায় মসজিদটি কোন আমলের।

মসজিদের ভেতর দুটো কাতার দাঁড়াতে পারে। ভেতরে কালিমা তাইয়েবা লিখিত একটি কালো পাথর রয়েছে। বর্তমানে মসজিদটি একটি সংরক্ষিত ইমারত।

একসময় মসজিদটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। ৮০’র দশকে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর মসজিদটির সংস্কার করে। সংস্কারের কয়েকবছর পর মসজিদের তিনটি গম্বুজ ও ছাদ প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। পরে অধিদফতরের অধীনে মসজিদটি আবার সংস্কার করে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

মসজিদটিতে তিনটি প্রবেশপথ। তিনটি দরজার মধ্যে প্রধান প্রবেশপথে উঁচু দরজার ওপরে কালো পাথরের মাঝে খোদাই করা কালেমা শাহাদাৎ লেখা রয়েছে। মূল প্রবেশপথ ছাড়া বাকি দুটি একই ধরনের।

প্রবেশপথের সঙ্গে মিল রেখে পশ্চিম দেয়ালে বানানো হয়েছে তিনটি মিহরাব। সুলতানি রীতিতে মসজিদটির কার্নিশ সামান্য বাঁকানো। খিলানগুলোতে এখনও গোলাপ নকশার চিহ্ন রয়েছে। প্রতিটি খিলান পথেরই দু’পাশে রয়েছে দুটি করে আয়তাকার খোপ নকশা। নকশাগুলো এখন ফাঁকা। তবে ধারণা করা আগে এখানে অলঙ্করণ ছিল।

দেয়ালের মাঝামাঝি অংশে ছাঁচে ঢালা নকশার একটি সারি রয়েছে। যে কারণে মসজিদটিকে বাইরে থেকে দেখতে দ্বিতল বলে মনে হয়। মিহরাবগুলো আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে স্থাপিত। শুরুতে এগুলোতে পোড়ামাটির অলঙ্করণ ছিল। যার কিছু চিহ্ন এখনও খুঁজে পাওয়া যায়। গোলাপ নকশা, পুষ্পলতা এবং জ্যামিতিক নকশার মতো নানা মোটিফ এখানে ব্যবহৃত হয়েছিল।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় হয় এই মসজিদে। এ ছাড়া মসজিদের বাইরে দুটি ঈদের নামাজের জামাতও হয়। এই মসজিদে একজন ইমাম ও একজন মুয়াজ্জিন রয়েছেন। দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের একজন সাইট পরিচালক।