ঢাকা , শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
হান্ডিয়াল নিউজ২৪ ডটকম এ জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

তাড়াশে জমেছে ঐতিহ্যবাহী তিনশ বছরের দইয়ের মেলা

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে জমেছে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী তিন”শ” বছরের দইয়ের মেলা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজা উপলক্ষে দিনব্যাপী দইয়ের মেলা ঘিরে উপজেলা জুড়ে সাজ সাজ রব পড়ে যাচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে বিভিন্ন এলাকার নামীদামি ঘোষদের দই আনার মধ্য দিয়ে প্রায় তিনশ’ শ বছরের ঐতিহ্যবাহী তাড়াশের দই মেলার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।
আজ বুধবার সকাল থেকে শুরু হওয়া দিনব্যাপী এ মেলায় দইয়ের পাশাপাশি ঝুড়ি, মুড়ি মুড়কি, চিড়া, বাতাসা, কদমাসহ রসনাবিলাসী নানা ধরনের খাবার বিক্রি হয়।
ঐতিহ্যবাহী চলনবিলের তাড়াশে দই মেলা নিয়ে রয়েছে নানা গল্প-কাহিনী।
প্রায় তিনশ শ’ বছর আগে তাড়াশের তৎকালীন জমিদার পরম বৈঞ্চব বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর প্রথম দই মেলার প্রচলন করেছিলেন। জনশ্রুতি আছে তৎকালীন পরম বৈঞ্চব জমিদার রাজা রায় বাহাদুর দই ও মিষ্টান্ন পছন্দ করতেন। এ ছাড়া জমিদার বাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নে এ অঞ্চলে ঘোষদের তৈরি দই পরিবেশন করা হতো। আর সে থেকেই জমিদার বাড়ির সম্মুখে রশিক রায় মন্দিরের মাঠে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী দই মেলা বসতো। প্রতি বছর শীত মৌসুমের মাঘ মাসে শ্রী পঞ্চমী তিথিতে দই মেলায় বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর থেকে ঘোষেরা দই এনে মেলায় পসরা বসিয়ে বিকিকিনি করতেন।

কথিত আছে সবচেয়ে ভালো সুস্বাদু দই তৈরিকারক ঘোষকে জমিদারের পক্ষ থেকে উপঢৌকন প্রদান করার রেওয়াজ ছিল। তবে জমিদার আমল থেকে শুরু হওয়া তাড়াশের দইয়ের মেলা এখনো মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে উৎসব আমেজে বসার বার্ষিক রেওয়াজ এখনো আছে।

দইয়ের মেলায় আসা এ অঞ্চলের দইয়ের স্বাদের কারণে নামেরও ভিন্নতা রয়েছে। যেমন- ক্ষীরসা দই, শাহী দই, শেরপুরের দই, বগুড়ার দই, টক দই, শ্রীপুরী দই এ রকম হরেক নামে দামের হেরফেরে বিক্রি হয় দই। বিশেষ করে বগুড়ার শেরপুর, চান্দাইকোনা, শ্রীপুর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশের দই প্রচুর বেচাকেনা হয়।

মেলায় দই বিক্রি করতে আশা আনন্দ ঘোষের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুধের দাম, জ্বালানী, শ্রমিক খরচ, দই পাত্রের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দইয়ের দামও বেড়েছে। তবে মেলা এক দিনব্যাপী হলেও চাহিদা থাকার কারণে কোনো ঘোষের দই অবিক্রিত থাকে না। যার কারণে মেলার আগেই ঘোষেরা দই তৈরীতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

দই মেলা নিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক তপন গোস্বামী নয়াদিগন্তকে বলেন, ‘খাঁটি দুধের সম্ভার খ্যাত সিরাজগঞ্জবাসী প্রাচীন আমল হতেই রসনা বিলাসী আর অতিথি পরায়ণ। দইয়ের মেলাটি জেলার আদি ঐতিহ্যের অংশ।’সরস্বতী পূজা উপলক্ষে এ মেলার আয়োজন করা হলেও এখানে হিন্দু মুসলিম সব শ্রেনি পেশার মানুষ আসেন।

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

তাড়াশে জমেছে ঐতিহ্যবাহী তিনশ বছরের দইয়ের মেলা

আপলোড সময় : ০১:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে জমেছে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী তিন”শ” বছরের দইয়ের মেলা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজা উপলক্ষে দিনব্যাপী দইয়ের মেলা ঘিরে উপজেলা জুড়ে সাজ সাজ রব পড়ে যাচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে বিভিন্ন এলাকার নামীদামি ঘোষদের দই আনার মধ্য দিয়ে প্রায় তিনশ’ শ বছরের ঐতিহ্যবাহী তাড়াশের দই মেলার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।
আজ বুধবার সকাল থেকে শুরু হওয়া দিনব্যাপী এ মেলায় দইয়ের পাশাপাশি ঝুড়ি, মুড়ি মুড়কি, চিড়া, বাতাসা, কদমাসহ রসনাবিলাসী নানা ধরনের খাবার বিক্রি হয়।
ঐতিহ্যবাহী চলনবিলের তাড়াশে দই মেলা নিয়ে রয়েছে নানা গল্প-কাহিনী।
প্রায় তিনশ শ’ বছর আগে তাড়াশের তৎকালীন জমিদার পরম বৈঞ্চব বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর প্রথম দই মেলার প্রচলন করেছিলেন। জনশ্রুতি আছে তৎকালীন পরম বৈঞ্চব জমিদার রাজা রায় বাহাদুর দই ও মিষ্টান্ন পছন্দ করতেন। এ ছাড়া জমিদার বাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নে এ অঞ্চলে ঘোষদের তৈরি দই পরিবেশন করা হতো। আর সে থেকেই জমিদার বাড়ির সম্মুখে রশিক রায় মন্দিরের মাঠে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী দই মেলা বসতো। প্রতি বছর শীত মৌসুমের মাঘ মাসে শ্রী পঞ্চমী তিথিতে দই মেলায় বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর থেকে ঘোষেরা দই এনে মেলায় পসরা বসিয়ে বিকিকিনি করতেন।

কথিত আছে সবচেয়ে ভালো সুস্বাদু দই তৈরিকারক ঘোষকে জমিদারের পক্ষ থেকে উপঢৌকন প্রদান করার রেওয়াজ ছিল। তবে জমিদার আমল থেকে শুরু হওয়া তাড়াশের দইয়ের মেলা এখনো মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে উৎসব আমেজে বসার বার্ষিক রেওয়াজ এখনো আছে।

দইয়ের মেলায় আসা এ অঞ্চলের দইয়ের স্বাদের কারণে নামেরও ভিন্নতা রয়েছে। যেমন- ক্ষীরসা দই, শাহী দই, শেরপুরের দই, বগুড়ার দই, টক দই, শ্রীপুরী দই এ রকম হরেক নামে দামের হেরফেরে বিক্রি হয় দই। বিশেষ করে বগুড়ার শেরপুর, চান্দাইকোনা, শ্রীপুর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশের দই প্রচুর বেচাকেনা হয়।

মেলায় দই বিক্রি করতে আশা আনন্দ ঘোষের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুধের দাম, জ্বালানী, শ্রমিক খরচ, দই পাত্রের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দইয়ের দামও বেড়েছে। তবে মেলা এক দিনব্যাপী হলেও চাহিদা থাকার কারণে কোনো ঘোষের দই অবিক্রিত থাকে না। যার কারণে মেলার আগেই ঘোষেরা দই তৈরীতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

দই মেলা নিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক তপন গোস্বামী নয়াদিগন্তকে বলেন, ‘খাঁটি দুধের সম্ভার খ্যাত সিরাজগঞ্জবাসী প্রাচীন আমল হতেই রসনা বিলাসী আর অতিথি পরায়ণ। দইয়ের মেলাটি জেলার আদি ঐতিহ্যের অংশ।’সরস্বতী পূজা উপলক্ষে এ মেলার আয়োজন করা হলেও এখানে হিন্দু মুসলিম সব শ্রেনি পেশার মানুষ আসেন।