ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
জরুরি সংবাদকর্মী আবশ্যক। সবাইকে হান্ডিয়াল নিউজ২৪ পরিবারের পক্ষ থেকে পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা।

তাড়াশের তিন’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী দইয়ের মেলা

তাড়াশের তৎকালীন জমিদার পরম বৈঞ্চব বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর প্রথম দই মেলার প্রচলন করেছিলেন। জনশ্রুতি আছে তৎকালীন পরম বৈঞ্চব জমিদার রাজা রায় বাহাদুর দই ও মিষ্টান্ন পছন্দ করতেন। এ ছাড়া জমিদার বাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নে এ অঞ্চলে ঘোষদের তৈরি দই পরিবেশন করা হতো। আর সে থেকেই জমিদার বাড়ির সম্মুখে রশিক রায় মন্দিরের মাঠে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী দই মেলা বসতো।

 

মেলার দিনগুলোয় এ অঞ্চলের প্রজা সাধারণসহ সবাই অন্তত এক বেলা খাবারের পাতে দইয়ের স্বাদ নিতে পারেন। তখন থেকে প্রতি বছর শীত মৌসুমের মাঘ মাসে সরস্বতী পূজার দিন পঞ্চমী তিথিতে দইমেলা বসে আসছে। যা জমিদার রাজা রায় বাহাদুর, বনমালী রায়, ক্ষিতীশভূষণ ও রাধিকাভূষণ পর্যন্তও মোটামুটি জাঁকজমক ও জৌলুসপূর্ণ ছিল তাড়াশের দইমেলা। পরবর্তী সময়ে জৌলুস কমে এলেও, প্রতি বছর পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজার দিন তাড়াশে ঐতিহ্যবাহী তিন”শ” বছরের দইয়ের মেলা বসেছে। মেলায় বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর থেকে ঘোষেরা দই এনে মেলায় পসরা বসিয়ে আছে।

 

কিন্তু দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে মেলায় দই বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। মেলায় দই বিক্রি করতে আসা বগুড়ার শেরপুরের দই বিক্রিতা নিমাই ঘোষ জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও মেলায় ৫০ মন দই নিয়ে এসেছি। বিক্রি নাই বললেই চলে। মেলায় দই কিনতে আসা তাড়াশ পৌর এলাকার মুশফিকুর রহিম বলেন, মেলা উপলক্ষে দই,চিড়া মুড়ি মুড়কি কিনে থাকি। কিন্তু সবগুলোর দইয়ের দাম বেশি চাচ্ছে। আগে সরার (দইয়ের পাত্র) আকার ছিল বেশ বড় এখন দেখছি আকারে অনেক ছোট। প্রতি কেজি দই বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ কেজিতে। একই দই গতবছর বিক্রি হতো ১৫০-২০০ টাকায়।

 

মেলায় দই বিক্রেতা জীবন ঘোষের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুধের দাম, জ্বালানী, শ্রমিক খরচ, দই পাত্রের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দইয়ের দামও বেড়েছে। তবে মেলা এক দিনব্যাপী হলেও চাহিদা থাকার কারণে কোনো ঘোষের দই অবিক্রিত থাকে না। গরমে চিঁড়া, মুড়ি, খই, দই, আম, কলা, দুধ, ক্ষীর এতেই যা একটু রস, মিষ্টত্ব আর পরিতৃপ্তি। দই আবহমান সময়কাল ধরে বাঙালির জীবনের প্রতিদিনের খাবার, ভোজনরসিকদের অন্যতম আকর্ষণ। এ সবই ঘটে তাড়াশের দই মেলাকে ঘিরে বাঙালি রসনায় দই জুড়িহীন। শেষ পাতে দই হলে তো কথাই নেই। এ ছাড়া বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান ও সামাজিক ভোজে দই পরিবেশন করা হয়ে থাকে। দই থেকেও তৈরি হয় নানা পদ।

 

ব্যবসায়ীদের দাবি, দুধ,চিনি,ও জ্বালানির দাম ও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সরা ছোট করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।অন্যান্য নিত্যপণ্যের সঙ্গে বেড়েছে দুধ ও টক দইয়ের দাম।
কথিত আছে সবচেয়ে ভালো সুস্বাদু দই তৈরিকারক ঘোষকে জমিদারের পক্ষ থেকে উপঢৌকন প্রদান করার রেওয়াজ ছিল। তবে জমিদার আমল থেকে শুরু হওয়া তাড়াশের দইয়ের মেলা এখনো মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে উৎসব আমেজে বসার বার্ষিক রেওয়াজ এখনো আছে।

দইয়ের মেলায় আসা এ অঞ্চলের দইয়ের স্বাদের কারণে নামেরও ভিন্নতা রয়েছে। যেমন- ক্ষীরসা দই, শাহী দই, শেরপুরের দই, বগুড়ার দই, টক দই, শ্রীপুরী দই এ রকম হরেক নামে দামের হেরফেরে বিক্রি হয় দই। বিশেষ করে বগুড়ার শেরপুর, চান্দাইকোনা, শ্রীপুর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশের দই প্রচুর বেচাকেনা হয়।

দইয়ের মেলা প্রসঙ্গে বিশিষ্ট সাংবাদিক প্রভাষক সনাতন দাশ বলেন, ‘খাঁটি দুধের সম্ভার খ্যাত সিরাজগঞ্জ বাসী প্রাচীন আমল হতেই রসনা বিলাসী আর অতিথি পরায়ণ। দইয়ের মেলাটি জেলার আদি ঐতিহ্যের অংশ।’সরস্বতী পূজা উপলক্ষে এ মেলার আয়োজন করা হলেও এখানে হিন্দু মুসলিম সব শ্রেনি পেশার মানুষ দই কিনতে আসেন।

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

তাড়াশের তিন’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী দইয়ের মেলা

আপলোড সময় : ১১:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

তাড়াশের তৎকালীন জমিদার পরম বৈঞ্চব বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর প্রথম দই মেলার প্রচলন করেছিলেন। জনশ্রুতি আছে তৎকালীন পরম বৈঞ্চব জমিদার রাজা রায় বাহাদুর দই ও মিষ্টান্ন পছন্দ করতেন। এ ছাড়া জমিদার বাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নে এ অঞ্চলে ঘোষদের তৈরি দই পরিবেশন করা হতো। আর সে থেকেই জমিদার বাড়ির সম্মুখে রশিক রায় মন্দিরের মাঠে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী দই মেলা বসতো।

 

মেলার দিনগুলোয় এ অঞ্চলের প্রজা সাধারণসহ সবাই অন্তত এক বেলা খাবারের পাতে দইয়ের স্বাদ নিতে পারেন। তখন থেকে প্রতি বছর শীত মৌসুমের মাঘ মাসে সরস্বতী পূজার দিন পঞ্চমী তিথিতে দইমেলা বসে আসছে। যা জমিদার রাজা রায় বাহাদুর, বনমালী রায়, ক্ষিতীশভূষণ ও রাধিকাভূষণ পর্যন্তও মোটামুটি জাঁকজমক ও জৌলুসপূর্ণ ছিল তাড়াশের দইমেলা। পরবর্তী সময়ে জৌলুস কমে এলেও, প্রতি বছর পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজার দিন তাড়াশে ঐতিহ্যবাহী তিন”শ” বছরের দইয়ের মেলা বসেছে। মেলায় বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর থেকে ঘোষেরা দই এনে মেলায় পসরা বসিয়ে আছে।

 

কিন্তু দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে মেলায় দই বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। মেলায় দই বিক্রি করতে আসা বগুড়ার শেরপুরের দই বিক্রিতা নিমাই ঘোষ জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও মেলায় ৫০ মন দই নিয়ে এসেছি। বিক্রি নাই বললেই চলে। মেলায় দই কিনতে আসা তাড়াশ পৌর এলাকার মুশফিকুর রহিম বলেন, মেলা উপলক্ষে দই,চিড়া মুড়ি মুড়কি কিনে থাকি। কিন্তু সবগুলোর দইয়ের দাম বেশি চাচ্ছে। আগে সরার (দইয়ের পাত্র) আকার ছিল বেশ বড় এখন দেখছি আকারে অনেক ছোট। প্রতি কেজি দই বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ কেজিতে। একই দই গতবছর বিক্রি হতো ১৫০-২০০ টাকায়।

 

মেলায় দই বিক্রেতা জীবন ঘোষের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুধের দাম, জ্বালানী, শ্রমিক খরচ, দই পাত্রের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দইয়ের দামও বেড়েছে। তবে মেলা এক দিনব্যাপী হলেও চাহিদা থাকার কারণে কোনো ঘোষের দই অবিক্রিত থাকে না। গরমে চিঁড়া, মুড়ি, খই, দই, আম, কলা, দুধ, ক্ষীর এতেই যা একটু রস, মিষ্টত্ব আর পরিতৃপ্তি। দই আবহমান সময়কাল ধরে বাঙালির জীবনের প্রতিদিনের খাবার, ভোজনরসিকদের অন্যতম আকর্ষণ। এ সবই ঘটে তাড়াশের দই মেলাকে ঘিরে বাঙালি রসনায় দই জুড়িহীন। শেষ পাতে দই হলে তো কথাই নেই। এ ছাড়া বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান ও সামাজিক ভোজে দই পরিবেশন করা হয়ে থাকে। দই থেকেও তৈরি হয় নানা পদ।

 

ব্যবসায়ীদের দাবি, দুধ,চিনি,ও জ্বালানির দাম ও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সরা ছোট করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।অন্যান্য নিত্যপণ্যের সঙ্গে বেড়েছে দুধ ও টক দইয়ের দাম।
কথিত আছে সবচেয়ে ভালো সুস্বাদু দই তৈরিকারক ঘোষকে জমিদারের পক্ষ থেকে উপঢৌকন প্রদান করার রেওয়াজ ছিল। তবে জমিদার আমল থেকে শুরু হওয়া তাড়াশের দইয়ের মেলা এখনো মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে উৎসব আমেজে বসার বার্ষিক রেওয়াজ এখনো আছে।

দইয়ের মেলায় আসা এ অঞ্চলের দইয়ের স্বাদের কারণে নামেরও ভিন্নতা রয়েছে। যেমন- ক্ষীরসা দই, শাহী দই, শেরপুরের দই, বগুড়ার দই, টক দই, শ্রীপুরী দই এ রকম হরেক নামে দামের হেরফেরে বিক্রি হয় দই। বিশেষ করে বগুড়ার শেরপুর, চান্দাইকোনা, শ্রীপুর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশের দই প্রচুর বেচাকেনা হয়।

দইয়ের মেলা প্রসঙ্গে বিশিষ্ট সাংবাদিক প্রভাষক সনাতন দাশ বলেন, ‘খাঁটি দুধের সম্ভার খ্যাত সিরাজগঞ্জ বাসী প্রাচীন আমল হতেই রসনা বিলাসী আর অতিথি পরায়ণ। দইয়ের মেলাটি জেলার আদি ঐতিহ্যের অংশ।’সরস্বতী পূজা উপলক্ষে এ মেলার আয়োজন করা হলেও এখানে হিন্দু মুসলিম সব শ্রেনি পেশার মানুষ দই কিনতে আসেন।