ঢাকা , শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
জরুরি সংবাদকর্মী আবশ্যক। সবাইকে হান্ডিয়াল নিউজ২৪ পরিবারের পক্ষ থেকে পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা।

চলনবিলে চাঁই ক্রয় বিক্রয়ের ধুম

দেশীয় মাছের জন্য বিখ্যাত চলনবিল। চাটমোহরসহ চলনবিলের মাঠ, নদী ও বিলে নতুন পানি এসে ভরে উঠছে। ফলে খাল, বিল, ডোবা-জলাশয় পানিতে টইটুম্বর। সেই সঙ্গে বিশাল জলরাশিতে প্রায় ৩-৪ মাস পেশাদার ও সৌখিন মৎস্য শিকারীদের মাছ শিকারে জমে উঠবে চলনবিলের বিভিন্ন এলাকা। তাই চাটমোহরসহ চলনবিল অঞ্চলের বিভিন্ন হাটে ছোট মাছ ধরার সরঞ্জাম চাঁই বেচাকেনার ধুম পড়েছে।

এরই মধ্যে শিকারের নানা উপকরণ সহ চাঁই তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বিলপাড়ের মৌসুমি কারিগররা। মূলত, বিলাঞ্চলে ব্যাপক চাহিদার প্রেক্ষিতে চাঁই তৈরির সঙ্গে জড়িত কারিগররা ঘরে বসেই মাছ শিকারের যাবতীয় দেশীয় উপকরন তৈরি করে থাকেন। বিশেষ করে চলনবিল অধ্যুষিত পাবনা জেলার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর, নাটোর জেলার গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম ও সিংড়া, সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ ও উল্লাপাড়া সহ চলনবিলের বিভিন্ন উপজেলার অনেক গ্রামের চাঁই তৈরির কারিগররা ভালো দাম পাওয়ায় বহু বছর ধরে মৌসুমি এ পেশার মাধ্যেমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।

রবিবার (১৬ জুলাই) চাটমোহর রেলবাজার হাটে কথা হয় গুরুদাসপুর উপজেলা থেকে চাঁই বিক্রি করতে আসা কারিগর আব্দুল জলিলের সাথে। তিনি জানান, মাছ ধরার সামগ্রী চাঁই তৈরিতে তোলা বাঁশ, তালের ডাকুর, দা, কাস্তি, আঁশ ছাড়ানোর জন্য বাঁশের চুঙ্গির দরকার হয়। প্রথমত, তালের ডাকুর ৭ থেকে ১০ দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। পরে ওই তাল গাছের ডাকুর গুলো থিতিয়ে আঁশ ছড়ানো হয়। আঁশ ও বাঁশের খিল চাঁই বাঁধার কাজে ব্যবহৃত হয়।

মূলতঃ তোলা বাঁশে কাজ করে বেশি সুবিধা। তাই তোলা বাঁশও পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। ওই ভেজা বাঁশ রোদে শুকিয়ে দা দিয়ে চিরে ভাগ ভাগ করে সুবিধামতো চাঁইয়ের দুই পাশ শক্ত করে আটকানো হয়।

 

চলনবিলের চাঁই বিক্রির জন্য প্রসিদ্ধ চাটমোহর রেল বাজার, চাঁচকৈড়, কাছিকাটা, ছাইকোলা, নওগাঁ, মির্জাপুর, সলঙ্গাসহ ১০ থেকে ১৫ টি হাটে সদ্য তৈরি নতুন চাঁই এ ভরে উঠেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাঁশের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে চাঁইয়ের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে।

চলনবিল এলাকায় তৈরি চাঁইয়ের গুনগতমান ভালো থাকায় বর্ষা মৌসুমে চলনবিল এলাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে যেমন নোয়াখালি, ময়মনসিংহ. গাইবান্ধার পাইকাররা কিনে ট্রাক ভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছেন।
চলতি বছর বর্তমান বাজারে প্রতিটি স্বাভাবিক মাপের চাঁই খুচরা ৪০০ থেকে ৬০০ এবং বড় চাঁই প্রকার ভেদে ৬০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান চাটমোহর রেলবাজার হাঁটে আসা ভাঙ্গুড়া গ্রামের বিক্রেতা কামাল হোসেন।

তিনি আরো জানান, গত কয়েক বছরে চাঁইয়ের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। তবে বর্তমানে নিষিদ্ধ চায়না জাল বাজারে আসায় আগের চেয়ে চাঁই বিক্রি অনেকটাই কম। তারপরও চলনবিলের সৌখিন ও মৎস্য শিকারিরা চাঁই কিনে বাড়ি ফিরছেন।

তাড়াশ, গুরুদাসপুর ও সলঙ্গা থেকে আসা চাঁই কেনার বেপারিরা জানালেন, চলনবিল অঞ্চলে তৈরি চাঁই, খোলসুন, ধুন্দি, ভাইর, বিত্তিসহ নানা রকমের মাছ শিকারের উপকরন, চাটমোহর রেলবাজার ও ছাইকোলা, তাড়াশের নওগাঁ, গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় ও বড়াইগামের নয়াবাজার হাট থেকে কিনে বিভিন্ন এলাকায় পাইকারি বিক্রি করে থাকি।

সূত্র জনকণ্ঠ

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

চলনবিলে চাঁই ক্রয় বিক্রয়ের ধুম

আপলোড সময় : ০৬:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই ২০২৩

দেশীয় মাছের জন্য বিখ্যাত চলনবিল। চাটমোহরসহ চলনবিলের মাঠ, নদী ও বিলে নতুন পানি এসে ভরে উঠছে। ফলে খাল, বিল, ডোবা-জলাশয় পানিতে টইটুম্বর। সেই সঙ্গে বিশাল জলরাশিতে প্রায় ৩-৪ মাস পেশাদার ও সৌখিন মৎস্য শিকারীদের মাছ শিকারে জমে উঠবে চলনবিলের বিভিন্ন এলাকা। তাই চাটমোহরসহ চলনবিল অঞ্চলের বিভিন্ন হাটে ছোট মাছ ধরার সরঞ্জাম চাঁই বেচাকেনার ধুম পড়েছে।

এরই মধ্যে শিকারের নানা উপকরণ সহ চাঁই তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বিলপাড়ের মৌসুমি কারিগররা। মূলত, বিলাঞ্চলে ব্যাপক চাহিদার প্রেক্ষিতে চাঁই তৈরির সঙ্গে জড়িত কারিগররা ঘরে বসেই মাছ শিকারের যাবতীয় দেশীয় উপকরন তৈরি করে থাকেন। বিশেষ করে চলনবিল অধ্যুষিত পাবনা জেলার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর, নাটোর জেলার গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম ও সিংড়া, সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ ও উল্লাপাড়া সহ চলনবিলের বিভিন্ন উপজেলার অনেক গ্রামের চাঁই তৈরির কারিগররা ভালো দাম পাওয়ায় বহু বছর ধরে মৌসুমি এ পেশার মাধ্যেমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।

রবিবার (১৬ জুলাই) চাটমোহর রেলবাজার হাটে কথা হয় গুরুদাসপুর উপজেলা থেকে চাঁই বিক্রি করতে আসা কারিগর আব্দুল জলিলের সাথে। তিনি জানান, মাছ ধরার সামগ্রী চাঁই তৈরিতে তোলা বাঁশ, তালের ডাকুর, দা, কাস্তি, আঁশ ছাড়ানোর জন্য বাঁশের চুঙ্গির দরকার হয়। প্রথমত, তালের ডাকুর ৭ থেকে ১০ দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। পরে ওই তাল গাছের ডাকুর গুলো থিতিয়ে আঁশ ছড়ানো হয়। আঁশ ও বাঁশের খিল চাঁই বাঁধার কাজে ব্যবহৃত হয়।

মূলতঃ তোলা বাঁশে কাজ করে বেশি সুবিধা। তাই তোলা বাঁশও পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। ওই ভেজা বাঁশ রোদে শুকিয়ে দা দিয়ে চিরে ভাগ ভাগ করে সুবিধামতো চাঁইয়ের দুই পাশ শক্ত করে আটকানো হয়।

 

চলনবিলের চাঁই বিক্রির জন্য প্রসিদ্ধ চাটমোহর রেল বাজার, চাঁচকৈড়, কাছিকাটা, ছাইকোলা, নওগাঁ, মির্জাপুর, সলঙ্গাসহ ১০ থেকে ১৫ টি হাটে সদ্য তৈরি নতুন চাঁই এ ভরে উঠেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাঁশের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে চাঁইয়ের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে।

চলনবিল এলাকায় তৈরি চাঁইয়ের গুনগতমান ভালো থাকায় বর্ষা মৌসুমে চলনবিল এলাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে যেমন নোয়াখালি, ময়মনসিংহ. গাইবান্ধার পাইকাররা কিনে ট্রাক ভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছেন।
চলতি বছর বর্তমান বাজারে প্রতিটি স্বাভাবিক মাপের চাঁই খুচরা ৪০০ থেকে ৬০০ এবং বড় চাঁই প্রকার ভেদে ৬০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান চাটমোহর রেলবাজার হাঁটে আসা ভাঙ্গুড়া গ্রামের বিক্রেতা কামাল হোসেন।

তিনি আরো জানান, গত কয়েক বছরে চাঁইয়ের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। তবে বর্তমানে নিষিদ্ধ চায়না জাল বাজারে আসায় আগের চেয়ে চাঁই বিক্রি অনেকটাই কম। তারপরও চলনবিলের সৌখিন ও মৎস্য শিকারিরা চাঁই কিনে বাড়ি ফিরছেন।

তাড়াশ, গুরুদাসপুর ও সলঙ্গা থেকে আসা চাঁই কেনার বেপারিরা জানালেন, চলনবিল অঞ্চলে তৈরি চাঁই, খোলসুন, ধুন্দি, ভাইর, বিত্তিসহ নানা রকমের মাছ শিকারের উপকরন, চাটমোহর রেলবাজার ও ছাইকোলা, তাড়াশের নওগাঁ, গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় ও বড়াইগামের নয়াবাজার হাট থেকে কিনে বিভিন্ন এলাকায় পাইকারি বিক্রি করে থাকি।

সূত্র জনকণ্ঠ