গাইবান্ধা পৌরসভার এক প্রকৌশলীর ঘুষ চাওয়ার অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এদিকে ওই প্রকৌশলী বিরুদ্ধে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এক ভুক্তভোগী। এনিয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) রাতে ওই প্রকৌশলীর ঘুষ চাওয়ার অডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি ১০ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের ওই অডিওতে একটি প্রকল্পের কাজের টাকা (ঘুষ) চাইছেন। কত টাকার বরাদ্দ সেই অনুসারে তিনি ৬ পার্সেন্ট টাকা দাবি করছেন। ঘুষ কম দিতে চাইলে প্রকৌশলী বলেন, একটি টাকাও কম দেওয়া যাবে না। টাকা কম দিলে বিল পার করা যাবে না। এছাড়া ওই অডিওতে ঘুষ নিয়ে অনেক কথোপকথন শোনা যায়।
অভিযুক্ত প্রকৌশলীর নাম শফিউল ইসলাম। তিনি গাইবান্ধা পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) হিসেবে কর্মরত।
এদিকে গত ১৫ জানুয়ারি ওই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে ঘুষ চাওয়ার একটি অডিওসহ (অডিওটি দেন পেনড্রাইভে) অভিযোগ দিয়েছেন ফিরোজ কবির নামের এক ভুক্তভোগী ঠিকাদার। অভিযোগের অনুলিপি গাইবান্ধা জেলা প্রশাসককে দেওয়া হয়।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি সরেজমিনে তদন্ত করেন গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আল মামুন। তদন্তের একমাস পেরিয়ে গেলেও প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি। অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন কিনা, জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আল মামুন বলেন, তদন্ত চলমান রয়েছে। প্রতিবেদন দাখিল করার আগে কিছু বলা যাবে না।
উপদেষ্টাকে দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপুষ্ট প্রকৌশলী শফিউল ইসলাম প্রায় ১৩ বছর ধরে গাইবান্ধা পৌরসভা কার্যালয়ে চাকরি করছেন। দীর্ঘদিন থেকে অনিয়ম করলেও ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা নিতে পারেননি। ওই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য ছাড়াও দুর্ব্যবহার, অনিয়ম-দুর্নীতির আরও অভিযোগ রয়েছে। প্রকল্পের বরাদ্দ টাকার শতকরা ৬ ভাগ ঘুষ দিয়ে ফাইল ছাড় করতে হয়।
আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, যোগদানের পর থেকে তিনি পৌরসভার নকশা অনুমোদনের দায়িত্ব পালন করেন। বাড়ি নির্মাণে নকশা অনুমোদনের জন্য তিনি চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ নিতেন। টাকা না দিলে নানাভাবে হয়রানি করতেন সেবাগ্রহীতাকে। এসব অবৈধ ভাবে টাকা আয় করে হয়েছেন অঢেল সম্পদের মালিক। জেলা ও ঢাকা শহরে জমিসহ বাড়ি কিনেছেন।
অভিযোগকারী ঠিকাদার দাবি করেন, আমি নিজেও ওই প্রকৌশলীকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে বিল তুলতে বাধ্য হয়েছি। কেউ প্রতিবাদ করলে, তার কাজে নানাভাবে হয়রানি করতেন। এমনকি একটি সড়কের কাজ দুই থেকে তিনবার করে নিতেন। তার কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
ঘুষ চাওয়ার অডিও ফাঁস এবং অভিযোগটি কতটুকু সত্য জানতে চাইলে, অভিযুক্ত প্রকৌশলী শফিউল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, অভিযোগটি তদন্ত প্রক্রিয়াধীন। তাই এবিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করবো না।