1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : leftkisslejour :
   
চাটমোহর,পাবনা বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০৬:০৩ অপরাহ্ন

আজ বসন্ত: আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস

অনলাইন ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ , ৮.১৩ অপরাহ্ণ
  • ৫৭ বার পড়া হয়েছে
বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসের আকর্ষণই ফুল। বৃহস্পতিবার ফুলের পসরা সাজিয়ে বসে ছিলেন ব্যবসায়ীরা। প্রিয়জনকে উপহার দিতে ফুল কিনছেন এক তরুণী। ছবিটি রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে তোলা

বসন্ত বাতাসে সই গো, বসন্ত বাতাসে/ বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ, আমার বাড়ি আসে… বন্ধুর বাড়ির ফুল বাগানে, নানান বনের ফুল/ ফুলের গন্ধে মন আনন্দে, ভ্রমরা আকুল… শীতের রিক্ততা মুছে প্রকৃতিজুড়ে আজ যেন কিসের শিহরিত স্পর্শ; সোঁদা মাটি আর বহেড়া ফুলের গন্ধ মেশানো অবাক ছোঁয়া! মন টেনে নিয়ে যায় শিমুল-পলাশ-আশোকের রক্তরাগে-তার ঝরা ফুলের গন্ধে…। আজ পয়লা ফাল্গুন। বিপুল ঐশ্বর্যধারী ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। পাগল হাওয়ার উত্তরীয় উড়িয়ে বনফুলের পলস্নবে, দখিন-বাতাসে শিহরণ জাগানোর দিন। উড়াল মৌমাছিদের ডানায় ডানায়, নিরাভরণ বৃক্ষে কচি কিশলয় জেগে উঠবার আভাস আর বনতলে কোকিলের কুহুতানে জানান দিয়ে যায়- আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে…।

আবহমান বাংলার নৈসর্গিক প্রকৃতিতে আজ সাজ

সাজ রব। হিমেল পরশে বিবর্ণ ধরায় জেগে নবীন জীবনের প্রাণোলস্নাস। নীল আকাশে সোনা ঝরা আলোকের মতোই আজ হৃদয় আপস্নুত প্রাণভরা ভালোবাসায়। ফাগুন হওয়ায় বয়ে যাবে সুর- ‘ভালোবাসি… ভালোবাসি, শুধু ভালোবাসি তোমায়’। আজ শুধুই ভালোবাসার দিন। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।

পর্বতসম ব্যস্ততা উপেক্ষা করে ভালোবাসার পাল তোলা নায়ে আজ ভাসবে সবাই। সারাবিশ্বের মতো তারুণ্যের অনাবিল আনন্দ আর বিশুদ্ধ উচ্ছ্বাসে প্রেমের মাতাল হাওয়া বয়ে যাবে দেশময়। ভালোবাসার উৎসবে মুখর হবে ধনী-গরিব, যুবা-বৃদ্ধা, তরুণ-তরুণী সবাই। রবি ঠাকুরের গানে সুর তুলে আজ লাখো কোটি হৃদয় উঠবে গেয়ে- ভালোবাসি, ভালোবাসি/ এই সুরে কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায় বাঁশি/ আকাশে কার বুকের মাঝে-ব্যথা বাজে/ দিগন্তে কার কালো আঁখি-আঁখির জলে যায় ভাসি… ভুলে-যাওয়া গানের বাণী, ভোলা দিনের কাঁদন-হাসি/ ভালোবাসি, ভালোবাসি।

ভালোবাসার আবেগে আপস্নুত হয়ে প্রেমিক হৃদয় উঠবে গেয়ে- ভালোবেসে সখী নিভৃত যতনে/ আমার নামটি লিখো তোমার মনের মন্দিরে/ আমার পরানে যে গান বাজিছে/ তাহার তালটি শিখো তোমার চরণমঞ্জীরে… আমার আকুল জীবনমরণ/ টুটিয়া লুটিয়া নিয়ো তোমার অতুল গৌরবে।

বিশ্ব ভালোবাসার উৎসবের ছোঁয়া শহরের গন্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়বে সারা গ্রাম-বাংলায়। মুঠোফোনের খুদেবার্তা, অনলাইনের ই-মেইল আর ফেসবুক চ্যাটিংয়ে প্রেমকথার কিশলয়। তীব্র সৌরভ ছড়িয়ে ফুটবে ফুল সৌন্দর্যবিভায়। প্রেমিক-প্রেমিকার সঙ্গে তালে তাল রেখে ভালোবাসার জয়গানে সুর মেলাবে স্বামী-স্ত্রী, মা-বাবা, ভাইবোন সবাই। বন্ধু-বান্ধব, সহপাঠী, এমনকি সহকর্মীর মাঝেও দিনভর হবে ভালোবাসার ভাব বিনিময়।

ভালোবাসা দিবস উদযাপনের ইতিহাস বেশ পুরানো। এ নিয়ে একাধিক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি যে গল্পটি প্রচলিত সেটি হচ্ছে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন রোমান ক্যাথলিক ধর্মযাজকের ২৬৯ খ্রিষ্টাব্দের একটি ঘটনা নিয়ে। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে ওই ধর্মযাজক একইসঙ্গে চিকিৎসক ছিলেন। তখন রোমান সম্রাট ছিলেন দ্বিতীয় ক্লডিয়াস। বিশ্বজয়ী রোমানরা একের পর এক রাষ্ট্র জয় করে চলেছে। যুদ্ধের জন্য রাষ্ট্রে বিশাল সৈন্যবাহিনী গড়ে তোলা দরকার। কিন্তু লোকজন বিশেষ করে তরুণরা এতে উৎসাহী নয়। সম্রাটের ধারণা হলো, পুরুষরা বিয়ে করতে না পারলে যুদ্ধে যেতে রাজি হবে। তিনি তরুণদের জন্য বিয়ে নিষিদ্ধ করলেন। কিন্তু প্রেমপিয়াসী তারুণ্যকে কী নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ করা যায়! এগিয়ে এলেন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। ভ্যালেন্টাইন প্রেমাসক্ত তরুণ-তরুণীদের বিয়ের ব্যবস্থা করলেন। কিন্তু একদিন ধরা পড়ে গেলেন ভ্যালেন্টাইন। তাকে জেলে পোরা হলো। দেশজুড়ে এই খবর ছড়িয়ে পড়লে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিল। অনেকেই ভ্যালেন্টাইনকে জেলখানায় দেখতে যান। ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে আসেন। কারাগারের জেলারের একজন অন্ধ মেয়েও ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে যেত। চিকিৎসক ভ্যালেন্টাইন মেয়েটির অন্ধত্ব দূর করলেন। তাদের মধ্যেও সৃষ্টি হলো হৃদয়ের বন্ধন। ধর্মযাজক হয়েও নিয়ম ভেঙে তিনি প্রেম করেন। আইন ভেঙে তিনিও বিয়ে করেন। খবর যায় সম্রাটের কানে। তিনি ভ্যালেন্টাইনের মৃতু্যদন্ড দেন। সে তারিখটি ছিল ২৬৯ খ্রিষ্টাব্দের আজকের এই ১৪ ফেব্রম্নয়ারি। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে তার প্রিয় বধূকে যে চিঠিটি লিখেন তা শেষ হয়েছিল এভাবে- লাভ ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন। অতঃপর এই ভালোবাসার স্বীকৃতি পেতে দুই শতাব্দী নীরবে-নিভৃতে পালন করতে হয়েছে ১৪ ফেব্রম্নয়ারি। ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে রোমের রাজা পপ জেলুসিয়াস এই দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।

দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্ব পাওয়ার পেছনে আরও একটি কারণ রয়েছে। সেন্ট ভ্যালেনটাইনের মৃতু্যর আগে প্রতি বছর রোমানরা ১৪ ফেব্রম্নয়ারি পালন করত ‘জুনো’ উৎসব। রোমান পুরাণের বিয়ে ও সন্তানের দেবী জুনোর নামানুসারে এর নামকরণ। এ দিন অবিবাহিত তরুণরা কাগজে নাম লিখে লটারির মাধ্যমে তার নাচের সঙ্গীকে বেছে নিত। ৪০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে রোমানরা যখন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীতে পরিণত হয় তখন ‘জুনো’ উৎসব আর সেন্ট ভ্যালেনটাইনের আত্মত্যাগের দিনটিকে একই সূত্রে গেঁথে ১৪ ফেব্রম্নয়ারি ‘ভ্যালেনটাইনস ডে’ হিসেবে উদযাপন শুরু হয়। কালক্রমে এটি সমগ্র ইউরোপ এবং ইউরোপ থেকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে এবারের বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পয়লা ফাল্গুন সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারে হওয়ায় এ উৎসব আনন্দ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কেননা চাকরিজীবীসহ অনেক পেশাজীবীকে এ দিন আর কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে ছুটতে হচ্ছে না। বন্ধ থাকছে স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে মন চাইলেই কর্মজীবী ও শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে ভালোবাসা দিবস ও পয়লা ফাল্গুনের উৎসবে হারিয়ে যাওয়ার নিশ্চিত সুযোগ পাবে।

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন উদ্যান, বাংলা একাডেমির বইমেলা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, কফিশপ, ফাস্টফুড শপ, লং ড্রাইভ অথবা নির্জন গৃহকোণে একান্ত নিভৃতে চলবে প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসার অভিসার। দিনভর চলবে চকোলেট, পারফিউম, শুভেচ্ছা কার্ড, আংটি, প্রিয় পোশাক, বই কিংবা রক্তগোলাপ বিনিময়। ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে আজ ‘গাঁটছড়া’ বাঁধবে অনেকেই।

এদিকে ফাগুনের প্রথম তেজোদীপ্ত রবির আলোর নাচনে লাগবে দোলা উৎসবপ্রিয় বাঙালির সহজ-সরল মনে। বিপুল তরঙ্গ প্রাণে আন্দোলিত হবে সবাই। বাঙালি জীবনে বসন্তের আগমন বার্তা নিয়ে আসে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রম্নয়ারি’র। এ বসন্তেই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। বসন্তেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিল বীর বাঙালি সেনারা। তাই কেবল প্রকৃতি আর মনে নয়, বাঙালির জাতীয় ইতিহাসেও বসন্ত আসে এক বিশেষ মাহাত্ম্য নিয়ে। বসন্ত পরিণত হবে এক অনন্য উৎসবে। বাসন্তী শাড়ি আর সফেদ-শুভ্র পাঞ্জাবিতে তরুণ-তরুণীরা বইমেলা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, উদ্যানমালা, ক্যাফেতে বসন্ত আবাহন করবে নানা নৈবদ্যে, নানা অনুষঙ্গে।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি। সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২২-২০২৩ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।
error: Content is protected !!