ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
ত্রৈমাসিক চলনবিলের সময় পত্রিকার প্রিন্ট,অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়া  জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

চা বাগানের ৩৪ শতাংশ নারী শ্রমিক যৌন নির্যাতনের শিকার: গবেষণা

চা বাগানের নারী শ্রমিক। প্রতীকী ছবি

দেশের চা বাগানে কাজ করা ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ নারী শ্রমিক কর্মস্থলে যৌন নির্যাতনের শিকার হন বলে একটি গবেষণার ফলাফলে এ চিত্র উঠে এসেছে।

এ ছাড়া, ৩০ শতাংশ নারী শ্রমিক মৌখিক এবং ১৪ শতাংশ নারী শ্রমিক শারীরিক নির্যাতনের (গৃহে নির্যাতনসহ) শিকার হন বলে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত সম্প্রতি পরিচালিত ‘নারী চা–শ্রমিকদের অধিকার, সেবাপ্রাপ্তিতে প্রবেশগম্যতা: বাস্তবতা ও আইনগত প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়।

বেসরকারি ইনোভেটিভ রিসার্চ অ্যান্ড কনসালট্যান্সি (আইআরসি) এ গবেষণা পরিচালনা করে। সংস্থাটির লিড কনসালট্যান্ট পলিন কুমার সাহা গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।

মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, অক্সফাম ইন বাংলাদেশের সহযোগিতায় ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স সংগঠনের অধীন সিলেট বিভাগের ৩টি জেলার ১১টি উপজেলায় ‘স্ট্রেনদেনিং ইউমেন ভয়েসেস ইন টি গার্ডেন’ প্রকল্পের আওতায় এ গবেষণা করা হয়। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের অক্টোবর মাস থেকে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

চা বাগানের নারী শ্রমিকদের নিয়ে গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ নারী কর্মক্ষেত্রকে নিরাপদ মনে করেন না। চা বাগানে কাজ করা নারী শ্রমিকদের মধ্যে ১৬ দশমিক ১ শতাংশ সহিংসতার কারণে, ১২ দশমিক ৩ শতাংশ মালিকের কাছ থেকে হুমকি, ৮ দশমিক ২ শতাংশ অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, ৪ দশমিক ১ শতাংশ চুরি এবং বাকিরা অন্যান্য কারণে কর্মক্ষেত্রকে অনিরাপদ মনে করেন। তবে ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ নারী এসব ঘটনার প্রতিবাদ করেন বলে জানিয়েছেন গবেষণায় অংশ নেওয়া নারী শ্রমিকেরা।

নারী শ্রমিকদের নিয়ে গবেষণায় অংশ নেওয়া সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন চা–বাগানে কাজ করা ৩ শতাধিক নারী শ্রমিকের মধ্যে ২৩ জন তাদের ওপর হওয়া অপরাধগুলোর প্রকারভেদ বিস্তারিত জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ নারী অশ্লীল বা অপমানজনক কথা ও অঙ্গভঙ্গির শিকার হয়েছেন, এ ছাড়া, ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ, ২৬ দশমিক ১ শতাংশ যৌন হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ নারী শ্রমিক অন্যান্য নির্যাতনের শিকার হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন।

এ ছাড়া, গবেষণায় বাংলাদেশের চা বাগানগুলোয় কাজ করা নারী শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়গুলোর তুলনামূলক বিশ্লেষণে বিদ্যমান আইনের দিকগুলোও তুলে ধরা হয়। সেখানে ভারত, কেনিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও চীনের চা–বাগানগুলোয় কাজ করা নারী শ্রমিকদের জন্য বিদ্যমান আইনগুলো তুলে ধরা হয়েছে।

এই গবেষণার ফলাফলে কম মজুরি, মজুরিসংক্রান্ত বৈষম্য, বকেয়া, চাকরির ধরন, বাসস্থান, শিক্ষার সুযোগ, স্যানিটেশন, যোগাযোগ, নিরাপদ ও সুপেয় পানির নিশ্চয়তা, ছুটিসহ অন্যান্য সংকট তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি এসব সংকট সমাধানেও নানা প্রস্তাবও তুলে ধরা হয়েছে।

এর মধ্যে চা বাগানগুলোয় কাজ করা ইউনিয়নগুলোয় নারীর অংশগ্রহণ এবং নেতৃত্ব বাড়ানো, আইনি পরামর্শ বৃদ্ধি, আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা এবং নারীদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজের পরামর্শ তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া, সামাজিক সুরক্ষা, সচেতনতা বৃদ্ধি, গৃহের অধিকারের স্বীকৃতি, জোরপূর্বক উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপসহ নানা সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

‘নারী চা–শ্রমিকদের অধিকার, সেবাপ্রাপ্তিতে প্রবেশগম্যতা: বাস্তবতা ও আইনগত প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, অক্সফাম ইন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাহমুদা সুলতানা প্রমুখ।

 

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ধারের নামে ঋণের ফাঁদ পা দিলেই মাথায় হাত কেরানীগঞ্জের গ্রামে গ্রামে ঋণজাল

চা বাগানের ৩৪ শতাংশ নারী শ্রমিক যৌন নির্যাতনের শিকার: গবেষণা

আপলোড সময় : ০৪:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫

দেশের চা বাগানে কাজ করা ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ নারী শ্রমিক কর্মস্থলে যৌন নির্যাতনের শিকার হন বলে একটি গবেষণার ফলাফলে এ চিত্র উঠে এসেছে।

এ ছাড়া, ৩০ শতাংশ নারী শ্রমিক মৌখিক এবং ১৪ শতাংশ নারী শ্রমিক শারীরিক নির্যাতনের (গৃহে নির্যাতনসহ) শিকার হন বলে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত সম্প্রতি পরিচালিত ‘নারী চা–শ্রমিকদের অধিকার, সেবাপ্রাপ্তিতে প্রবেশগম্যতা: বাস্তবতা ও আইনগত প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়।

বেসরকারি ইনোভেটিভ রিসার্চ অ্যান্ড কনসালট্যান্সি (আইআরসি) এ গবেষণা পরিচালনা করে। সংস্থাটির লিড কনসালট্যান্ট পলিন কুমার সাহা গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।

মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, অক্সফাম ইন বাংলাদেশের সহযোগিতায় ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স সংগঠনের অধীন সিলেট বিভাগের ৩টি জেলার ১১টি উপজেলায় ‘স্ট্রেনদেনিং ইউমেন ভয়েসেস ইন টি গার্ডেন’ প্রকল্পের আওতায় এ গবেষণা করা হয়। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের অক্টোবর মাস থেকে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

চা বাগানের নারী শ্রমিকদের নিয়ে গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ নারী কর্মক্ষেত্রকে নিরাপদ মনে করেন না। চা বাগানে কাজ করা নারী শ্রমিকদের মধ্যে ১৬ দশমিক ১ শতাংশ সহিংসতার কারণে, ১২ দশমিক ৩ শতাংশ মালিকের কাছ থেকে হুমকি, ৮ দশমিক ২ শতাংশ অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, ৪ দশমিক ১ শতাংশ চুরি এবং বাকিরা অন্যান্য কারণে কর্মক্ষেত্রকে অনিরাপদ মনে করেন। তবে ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ নারী এসব ঘটনার প্রতিবাদ করেন বলে জানিয়েছেন গবেষণায় অংশ নেওয়া নারী শ্রমিকেরা।

নারী শ্রমিকদের নিয়ে গবেষণায় অংশ নেওয়া সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন চা–বাগানে কাজ করা ৩ শতাধিক নারী শ্রমিকের মধ্যে ২৩ জন তাদের ওপর হওয়া অপরাধগুলোর প্রকারভেদ বিস্তারিত জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ নারী অশ্লীল বা অপমানজনক কথা ও অঙ্গভঙ্গির শিকার হয়েছেন, এ ছাড়া, ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ, ২৬ দশমিক ১ শতাংশ যৌন হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ নারী শ্রমিক অন্যান্য নির্যাতনের শিকার হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন।

এ ছাড়া, গবেষণায় বাংলাদেশের চা বাগানগুলোয় কাজ করা নারী শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়গুলোর তুলনামূলক বিশ্লেষণে বিদ্যমান আইনের দিকগুলোও তুলে ধরা হয়। সেখানে ভারত, কেনিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও চীনের চা–বাগানগুলোয় কাজ করা নারী শ্রমিকদের জন্য বিদ্যমান আইনগুলো তুলে ধরা হয়েছে।

এই গবেষণার ফলাফলে কম মজুরি, মজুরিসংক্রান্ত বৈষম্য, বকেয়া, চাকরির ধরন, বাসস্থান, শিক্ষার সুযোগ, স্যানিটেশন, যোগাযোগ, নিরাপদ ও সুপেয় পানির নিশ্চয়তা, ছুটিসহ অন্যান্য সংকট তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি এসব সংকট সমাধানেও নানা প্রস্তাবও তুলে ধরা হয়েছে।

এর মধ্যে চা বাগানগুলোয় কাজ করা ইউনিয়নগুলোয় নারীর অংশগ্রহণ এবং নেতৃত্ব বাড়ানো, আইনি পরামর্শ বৃদ্ধি, আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা এবং নারীদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজের পরামর্শ তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া, সামাজিক সুরক্ষা, সচেতনতা বৃদ্ধি, গৃহের অধিকারের স্বীকৃতি, জোরপূর্বক উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপসহ নানা সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

‘নারী চা–শ্রমিকদের অধিকার, সেবাপ্রাপ্তিতে প্রবেশগম্যতা: বাস্তবতা ও আইনগত প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, অক্সফাম ইন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাহমুদা সুলতানা প্রমুখ।