ঢাকা , বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
ত্রৈমাসিক চলনবিলের সময় পত্রিকার প্রিন্ট,অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়া  জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

৫০ কোটি টাকার মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা চলনবিলে

বর্তমান সময়ে মধুর বিলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের বৃহত্তম বিল চলনবিল। পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জের চলনবিল অধ্যুষিত এলাকার মাঠগুলোতে এখন মাঘী সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ। হলুদ ফুলে যেন নেচে-নেচে, ছুটে-ছুটে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে বিভিন্ন এলাকা থেকে চলনবিলে আসা খামারীদের মৌমাছি। সরিষা ক্ষেতের পাশে খামার স্থাপন করে মধু সংগ্রহের অপেক্ষায় আছেন খামারীরা। শীঘ্রই শুরু হবে মধু সংগ্রহের কাজ। খামারীরা আশা করছেন এবার চলনবিল এলাকায় ৫০ কোটি টাকার মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

চলনবিল এলাকার কৃষি অফিস গুলোর তথ্য মতে চলনবিল এলাকার উপজেলাসমূহে প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল বারি-৯, ১৪, ১৫, ১৭, ১৮ ও বীনা- ৪, ১১সহ স্থানীয় জাতের সরিষা চাষ হয়। ব্যাপক এলাকা জুড়ে সরিষা চাষ হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকার মৌ খামারীরা মধু সংগ্রহের উদ্দেশ্যে অগ্রহায়নের শেষ ভাগে চলে আসেন চলনবিল এলাকায়।

জানা গেছে, প্রতি বছর অগ্রহায়ন মাসের শেষ দিকে চলনবিল এলাকার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, তাড়াশ, সিংড়া, উল্লাপাড়ার পশ্চিমাংশসহ এর আশপাশ এলাকার মাঠগুলো ছেয়ে যায় হলুদ সরিষা ফুলে। এসময় পাবনা নাটোর সিরাজগঞ্জের খামারীদের পাশাপাশি সাতক্ষিরা, খুলনা, বাগেরহাট, নড়াইল, গাজীপুর, রংপুর, দিনাজপুর, চাপাইনবাবগঞ্জ, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাও, নীলফামারীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায় আট শতাধিক মৌ খামারী মধু সংগ্রহের জন্য চলনবিল এলাকার মাঠ গুলোতে এসে অস্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন। সরিষা খেতের পাশে মৌবক্স স্থাপন করে কয়েক দিন পর পর মধু সংগ্রহ করেন।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার হরিনগর গ্রামের মৌ খামারী জাহাঙ্গীর আলম জানান, “চলনবিল এলাকায় প্রচুর পরিমানে সরিষা চাষ হওয়ায় প্রতি বছর এসময় আমরা মধু সংগ্রহের জন্য আসি। চাটমোহর-মান্নাননগর সড়কের নিমাইচড়া এলাকায় রাস্তার পাশে ৩০০ টি মৌবক্স স্থাপন করেছি। আশা করছি আগামি সপ্তাহে মধু সংগ্রহ করতে পারবো। আমরা সাত-আট দিন পর পর মৌবক্স থেকে মধু সংগ্রহ করি।” তিনি আরো জানান, পুরাতন মধু ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্র হচ্ছে। নতুন মধুর দাম এখনও নির্ধারণ হয়নি। পাইকারদের পাশাপাশি অনলাইনের মাধ্যমে মধু বিক্রি করেন তারা।

নর্থবেঙ্গল হানি কমিউনিটি এন্টারপ্রাইজ লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জানান, চলনবিলে প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়। প্রতি বছর আটশতাধিক খামারী চলনবিলের বিভিন্ন মাঠে সরিষার মধু সংগ্রহ করেন। আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে মধুর উৎপাদন। অধিক শীত, কুয়াশা, বৃষ্টি হলে মধুর উৎপাদন কমে যায়। ধারণা করা হচ্ছে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে চলনবিল এলাকায় প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ করা যাবে যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। চলনবিলের মধু জাতীয় অর্থনীতিতে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলেও জানান তিনি।

চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন জানান, চলতি মৌসুমে কেবল মাত্র চাটমোহরেই ৮,৩০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। প্রনোদনা কর্মসূচীর আওতায় ৫,৫০০ কৃষককে বীনামূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌবক্স স্থাপন করলে একদিকে যেমন মধু সংগ্রহ করা যায় তেমনি পরাগায়ন ভাল হওয়ায় সরিষার উৎপাদনও ভাল হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মধু সরিষা দুটিই ভাল হবে। লাভবান হবেন কৃষক ও মৌ খামারীরা।

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ধারের নামে ঋণের ফাঁদ পা দিলেই মাথায় হাত কেরানীগঞ্জের গ্রামে গ্রামে ঋণজাল

৫০ কোটি টাকার মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা চলনবিলে

আপলোড সময় : ১০:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪

বর্তমান সময়ে মধুর বিলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের বৃহত্তম বিল চলনবিল। পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জের চলনবিল অধ্যুষিত এলাকার মাঠগুলোতে এখন মাঘী সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ। হলুদ ফুলে যেন নেচে-নেচে, ছুটে-ছুটে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে বিভিন্ন এলাকা থেকে চলনবিলে আসা খামারীদের মৌমাছি। সরিষা ক্ষেতের পাশে খামার স্থাপন করে মধু সংগ্রহের অপেক্ষায় আছেন খামারীরা। শীঘ্রই শুরু হবে মধু সংগ্রহের কাজ। খামারীরা আশা করছেন এবার চলনবিল এলাকায় ৫০ কোটি টাকার মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

চলনবিল এলাকার কৃষি অফিস গুলোর তথ্য মতে চলনবিল এলাকার উপজেলাসমূহে প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল বারি-৯, ১৪, ১৫, ১৭, ১৮ ও বীনা- ৪, ১১সহ স্থানীয় জাতের সরিষা চাষ হয়। ব্যাপক এলাকা জুড়ে সরিষা চাষ হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকার মৌ খামারীরা মধু সংগ্রহের উদ্দেশ্যে অগ্রহায়নের শেষ ভাগে চলে আসেন চলনবিল এলাকায়।

জানা গেছে, প্রতি বছর অগ্রহায়ন মাসের শেষ দিকে চলনবিল এলাকার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, তাড়াশ, সিংড়া, উল্লাপাড়ার পশ্চিমাংশসহ এর আশপাশ এলাকার মাঠগুলো ছেয়ে যায় হলুদ সরিষা ফুলে। এসময় পাবনা নাটোর সিরাজগঞ্জের খামারীদের পাশাপাশি সাতক্ষিরা, খুলনা, বাগেরহাট, নড়াইল, গাজীপুর, রংপুর, দিনাজপুর, চাপাইনবাবগঞ্জ, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাও, নীলফামারীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায় আট শতাধিক মৌ খামারী মধু সংগ্রহের জন্য চলনবিল এলাকার মাঠ গুলোতে এসে অস্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন। সরিষা খেতের পাশে মৌবক্স স্থাপন করে কয়েক দিন পর পর মধু সংগ্রহ করেন।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার হরিনগর গ্রামের মৌ খামারী জাহাঙ্গীর আলম জানান, “চলনবিল এলাকায় প্রচুর পরিমানে সরিষা চাষ হওয়ায় প্রতি বছর এসময় আমরা মধু সংগ্রহের জন্য আসি। চাটমোহর-মান্নাননগর সড়কের নিমাইচড়া এলাকায় রাস্তার পাশে ৩০০ টি মৌবক্স স্থাপন করেছি। আশা করছি আগামি সপ্তাহে মধু সংগ্রহ করতে পারবো। আমরা সাত-আট দিন পর পর মৌবক্স থেকে মধু সংগ্রহ করি।” তিনি আরো জানান, পুরাতন মধু ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্র হচ্ছে। নতুন মধুর দাম এখনও নির্ধারণ হয়নি। পাইকারদের পাশাপাশি অনলাইনের মাধ্যমে মধু বিক্রি করেন তারা।

নর্থবেঙ্গল হানি কমিউনিটি এন্টারপ্রাইজ লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জানান, চলনবিলে প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়। প্রতি বছর আটশতাধিক খামারী চলনবিলের বিভিন্ন মাঠে সরিষার মধু সংগ্রহ করেন। আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে মধুর উৎপাদন। অধিক শীত, কুয়াশা, বৃষ্টি হলে মধুর উৎপাদন কমে যায়। ধারণা করা হচ্ছে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে চলনবিল এলাকায় প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ করা যাবে যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। চলনবিলের মধু জাতীয় অর্থনীতিতে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলেও জানান তিনি।

চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন জানান, চলতি মৌসুমে কেবল মাত্র চাটমোহরেই ৮,৩০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। প্রনোদনা কর্মসূচীর আওতায় ৫,৫০০ কৃষককে বীনামূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌবক্স স্থাপন করলে একদিকে যেমন মধু সংগ্রহ করা যায় তেমনি পরাগায়ন ভাল হওয়ায় সরিষার উৎপাদনও ভাল হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মধু সরিষা দুটিই ভাল হবে। লাভবান হবেন কৃষক ও মৌ খামারীরা।