গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলার কোনও অধিকার বিএনপির নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে গণভবনে আয়োজিত আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় এ মন্তব্য করেছেন তিনি।
এসময় ভোটচুরির সংস্কৃতি বিএনপি শুরু করেছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে ভোটচুরি করে ক্ষমতায় এসেছিল বিএনপি। এরপর ২০০৬ সালেও ভোটচুরি করে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করেছিল তারা। নির্বাচনকে কলুষিত করা শুরু হয় জিয়াউর রহমানের সময় থেকেই। এবার তাদের চক্রান্ত ছিল জাতীয় নির্বাচনটা যাতে না হয়। অনির্বাচিত সরকার চায়। যারা নিজেরাই ভোটচুরি করে ক্ষমতায় ছিল, মানুষের ভোটের অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছিল, গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে কথা বলার অধিকার নেই তাদের।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি তো আলোচনা-সমালোচনার সব পথ উন্মুক্ত করে রেখেছি। আমাদের ৫২টা টেলিভিশন; ৩৪টা চালু আছে। সব টিভি চ্যানেলে টক শো হয়। টক-ঝাল অনেক কথা হয়। ভালো কাজ করতে গেলে কিছু সমালোচনা আসবেই। তবে, কোনও সমালোচনায় আমাদের মনোবল ভাঙবে না।
কারচুপি ছাড়া নিরপেক্ষ নির্বাচন করার সৎ সাহস একমাত্র আওয়ামী লীগেরই আছে দাবি করে তিনি বলেন, ভোটের আগে স্যাংশনের ভয় দেখানো হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনকে কেউ প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেনি। আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন চাইনি বলেই সার্চ কমিটি গঠন করে নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের ব্যবস্থা করি। যে সাহস শুধু দল হিসেবে আওয়ামী লীগেরই আছে। নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রজাতন্ত্রের সবাই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছে। তবুও যারা বলছেন, অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়নি। তাদেরকে সুনির্দিষ্ট করে বলতে হবে, কোথায় সমস্যা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ কোনও ভেসে আসা রাজনৈতিক দল নয় জানিয়ে দলের সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে বিএনপি বিদেশি কিছু প্রভুদের কথা শুনে লম্ফঝম্ফ করে। এখনো করে যাচ্ছে। করতে থাকুক।
ভোট ও ভাতের অধিকার আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেছে দাবি করে তিনি বলেন, ’৭৬ থেকে ’৯৬ পর্যন্ত দেশ কোনো খাতেই এগোতে পারেনি। ভোট ও ভাতের অধিকার আওয়ামী লীগই প্রতিষ্ঠা করেছে। টানা চার মেয়াদে জনগণের মন জয় করে ক্ষমতায় থাকা সহজ কোনো কাজ নয়। মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি বলেই সম্ভব হচ্ছে। কারণ উন্নয়ন হয়েছে তৃণমূল পর্যন্ত।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ২০০৮ সালে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার। সেই লক্ষ্য আমরা পূরণ করেছি। এবার আমাদের ঘোষণা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বো। সেই লক্ষ্য পূরণে সব বাধা মোকাবেলা করতে প্রস্তুত আমরা।
এদিকে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে সারাদেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতারা ঢাকা এসেছেন। সকাল থেকে তারা গণভবনে প্রবেশ করতে শুরু করেন। বিশেষ এই সভা থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের দুটি বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- তৃনমূল পর্যায় পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও বিভেদ মিটিয়ে ফেলা এবং আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এমপি বলয় তৈরি না করা।
সভায় আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, জেলা/মহানগর ও উপজেলা/থানা/পৌর (জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা) আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সংসদের দলীয় ও স্বতন্ত্র সদস্য, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যান, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার দলীয় মেয়র এবং সহযোগী সংগঠনসমূহের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত হয়েছেন।
এছাড়া বিশেষ এ সভা উপলক্ষে ঢাকা মহানগরের যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।