1. admin@handiyalnews24.com : admin :
  2. tenfapagci1983@coffeejeans.com.ua : cherielkp04817 :
  3. ivan.ivanovnewwww@gmail.com : leftkisslejour :
   
চাটমোহর,পাবনা রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৪ পূর্বাহ্ন

নারীদের বাড়তি আয়, গোবরের জ্বালানিতে

হান্ডিয়াল নিউজ ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : শুক্রবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২৪ , ৪.২৭ অপরাহ্ণ
  • ১০০ বার পড়া হয়েছে

সকাল থেকেই গোবর সংগ্রহে ছুটে চলছেন গ্রামাঞ্চলের নারীরা। এরপর খাদি বা ডালি ভর্তি গোবর, বালতি ভর্তি পানি, পাটখড়ি, ধানের তুষ বা কুড়া নিয়ে রাস্তার পাশে, বাড়ির উঠানে বা খোলা জায়গায় রোদে বসে গোবর দিয়ে কেউ তৈরি করছেন গোবরের ঘুঁটি।

আবার কেউ বাঁশের কাঠির সঙ্গে ধানের গুঁড়া মিশিয়ে তৈরি করছেন লম্বা আকৃতির জ্বালানি কাঠি। আবার অনেকে ওইসব জ্বালানি রোদে শুকিয়ে বস্তায় রাখছেন। এমন এক দৃশ্য দেখা দেখা যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের তারাগন এলাকায়।

জ্বালানি বিকল্প পথ খুঁজে নিয়েছেন গ্রামাঞ্চলের নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া নারীরা। তারা গরু-মহিষের গোবর দিয়ে জ্বালানি তৈরি করছেন। সেই সঙ্গে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে তারা বাড়তি টাকা আয় করছেন। স্থানীয় পর্যায়ে ভালো চাহিদা থাকায় অনেক নারী গোবরের তৈরি জ্বালানি তৈরি করে আর্থিক সচ্ছলতার মুখ দেখেছেন। তুলনামূলকভাবে গোবরের তৈরি জ্বালানির কম খরচ হওয়ায় চাহিদা ও দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই গ্রামাঞ্চলের অসহায় নারীরা গোবরের জ্বালানি তৈরিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে।

স্থানীয় লোকজনরা জানান, গ্রামাঞ্চলের অনেক পরিবারের লোকজনরা শখের বসে কম বেশি গরু পালন করছেন। আবার কেউ কেউ বাণিজ্যিকভাবে খামার গড়ে তুলে গরু-মহিষ পালন করছেন। ওইসব জায়গাতে গরু-মহিষের গোবর পাওয়া যাচ্ছে। সকালে নারীরা ওইসব জায়গা থেকে গরু-মহিষের গোবর সংগ্রহ করে তৈরি হচ্ছে জ্বালানি। এতে বাড়তি কোনো খরচ নেই। ফেলারও কিছু নেই। তাছাড়া এর ছাই পর্যন্ত কাজে লাগায় এর চাহিদাও রয়েছে বেশ।

এক সময়ে গ্রামাঞ্চলের গৃহবধূরা আড়া-জঙ্গলের লতা-পাতা কুড়িয়ে জ্বালানি হিসেবে রান্নার কাজ করতেন। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে গ্রামের আড়া-জঙ্গল নিধন করে ঘর বাড়ি তৈরি ও ফসল উৎপাদন শুরু করেছে। এ কারণে বিলুপ্তির পথে বনাঞ্চল বা আড়া-জঙ্গল। এর ফলে নিম্ন আয়ের লোকদের রান্না কাজে দেখা দেয় জ্বালানি খড়ির সংকট। তাই তারা সাশ্রয়ী জ্বালানী ব্যবহার করতে গরু-মহিষের গোবর দিয়ে জ্বালানি তৈরি করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি আয় করছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পৌর শহরের তারাগন, দেবগ্রাম, শান্তিনগর, বাগানবাড়ি, উপজেলার ধাতুরপহেলা, টানপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অসচ্ছল পরিবারের নারীরা নিজ বাড়িসহ অন্যের বাড়ি, রাস্তার পাশ, মাঠঘাট থেকে গরু-মহিষের গোবর সংগ্রহ করে জ্বালানি তৈরি করছেন। এরমধ্যে কেউ কেউ বাঁশের লাকড়ির সঙ্গে ধানের গুঁড়া মিশিয়ে লম্বা আকৃতির জ্বালানি কাঠি তৈরি করছে। আবার কেউবা শুধু গোবর দিয়ে হাতের মুঠোর মাধ্যমে গোলাকৃতির জ্বালানি তৈরি করছেন। এরপর রোদে শুকিয়ে ব্যবহারের উপযোগী করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে এলাকার বিভিন্ন নিম্ন আয়ের লোকজন ও চায়ের দোকানে আবার বিক্রি করছেন।
প্রতি বস্তা শুকনো গোবরের জ্বালানি আড়াইশ থেকে ৩শ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এতে অনেক গৃহবধূ প্রতিমাসে গড়ে দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকা বাড়তি আয় করছেন। বাড়ির সব কর্ম সেরে অবসর সময়ে এই জ্বালানি তৈরি করে একদিকে যেমন জ্বালানি সংকট দূর করছেন অন্যদিকে  বাড়তি আয় করে সংসারে সচ্ছলতা আনছেন।
গৃহবধূ মিনারা বেগম জানান, ৩ বছর আগে তার স্বামী অসুস্থ হয়ে মারা যায়। পরিবারে ২ ছেলে ১ মেয়েসহ ৬ জন রয়েছে। ছেলে দৈনিক মজুরিতে কাজ করেন। সামান্য আয়ে সংসার চালাতে তাদের খুবই কষ্ট হয়। গত ২ বছর ধরে আশপাশের বাড়ি থেকে গরুর গোবর সংগ্রহ করে জ্বালানি তৈরি করছেন। রান্নায় নিজ ব্যবহার পাশাপাশি অবশিষ্টগুলো বিক্রি করে প্রতিমাসে দেড় হাজার থেকে সাড়ে ২ হাজার টাকা আয় করছেন। এই টাকা দিয়ে সংসারের অনেক খরচের জোগান দেওয়া হয়।
গৃহবধূ ফারজানা আক্তার জানান, শখের বশে বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি গরু পালন করছেন। বর্তমানে ৪টি গরু রয়েছে। প্রতিদিন সকালে গোবর সংগ্রহ করে জ্বালানি  তৈরি করা হচ্ছে। রোদে শুকানোর পর নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাকীগুলো বিক্রি করছেন। গোবরের তৈরি জ্বালানি বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা আয় করছেন। স্থানীয় পর্যায়ে এর চাহিদা ভালো থাকায় নিম্ন আয়ের লোকজনরা বাড়ি থেকে ক্রয় করে নিয়ে যায়।

গৃহবধূ জরিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী অটোরিকশা চালক। সংসারে ৬ জন সদস্য রয়েছে। সামান্য আয়ে সংসার চালানো খুবই কষ্ট। তাই দুই বছর ধরে বাড়ি সংলগ্ন একটি খামার থেকে গোবর সংগ্রহ করে জ্বালানি তৈরি করছি। এ কাজে এক মেয়ে সহযোগিতা করছে। ওই জ্বালানিতে নিজে রান্নার পাশাপাশি বিক্রি করে ভালো টাকা আয় করছি। গত মাসে ৩ হাজার টাকা হয়েছে।

মো. ইউসুফ মিয়া বলেন, গরুর গোবরের জ্বালানী ক্রয় করে রান্নার কাজ করা হচ্ছে। এক বস্তা গোবরের জ্বালানি ৩শ টাকায় কেনা হয়। প্রতি মাসে ২ বস্তা জ্বালানি লেগে যায়। গোবরের জ্বালানি দিয়ে রান্না করায় আর্থিকভাবে অনেক টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া তাবাসসুম বলেন, গরু-মহিষের গোবর দিয়ে জ্বালানি তৈরি করা খুবই সহজ এবং খরচ কম। এটি এক প্রকার পরিবেশ বান্ধব। উপকরণ হিসেবে প্রয়োজন গরু বা মহিষের গোবর, ধানের তুষ (কুড়া)। তবে এসব জ্বালানি দিয়ে আগুন ভালো জ্বলে। জ্বালানি শেষে এ থেকে বের হওয়া ছাই ফসলের জমিতে ব্যবহার করা হয়। এটি একই সঙ্গে উৎকৃষ্ট সার ও পোকা দমনেও ভূমিকা রাখে। গ্রামাঞ্চলের অনেক গৃহবধূরা গোবর দিয়ে তৈরি জ্বালানি ব্যবহার ও বিক্রি করে ভালো টাকা আয় করছেন।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি। সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২৪ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।