মহররম একটি বরকতময় মাস। এ মাসের দশম দিনকে বলা হয় আশুরা। দিনটিতে রোজা ও তাওবা-ইস্তেগফার করা ছাড়া বিশেষ কোনো আমল নেই। আশুরাকে কেন্দ্র করে রয়েছে অনেক ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার।
আশুরায় বর্জন করতে হবে যেসব কাজ
ইমাম হুসাইনের (রা.) শাহাদাতকে কেন্দ্র করে আশুরা নিয়ে বেশ বাড়াবাড়ি করা হয়ে থাকে। এ নিয়ে রয়েছে অনেক কুসংস্কার। এর মধ্যে অন্যতম হলো মাতম মর্সিয়া গাওয়া। মর্সিয়া মানে নবী দৌহিত্রের শোক প্রকাশে নিজের শরীরে আঘাত করা এবং জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা। ইসলামে এটা নিষিদ্ধ। তাই তা বর্জন করতে হবে।
রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি (শোকে-দুঃখে) চেহারায় চপেটাঘাত করে, জামার বুক ছিঁড়ে ফেলে এবং জাহিলি যুগের মতো হায়-হুতাশ করে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। (বুখারি, হাদিস : ১২৯৭)
দিনটির গুরুত্ব বোঝাতে অনেক মিথ্যা ও জাল হাদিসের আশ্রয় নেওয়া হয়। যেমন- এদিন ইউসুফ (আ.)-এর জেল থেকে মুক্তি। ইয়াকুব (আ.) এর চোখের জ্যোতি ফিরে পাওয়া। ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি লাভ। ইদরিস (আ.)-কে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া ইত্যাদি। আবার এদিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে এমন ধারণা করা। এসব ঘটনা ও ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। তাই, বিষয়গুলো পরিহার করতে হবে। (আল আসারুল মারফুআ, পৃষ্ঠা, ৬৪-১০০) (মা ছাবাহা বিসসুন্নাহ ফি আয়্যামিস সানাহ, পৃষ্ঠা, ২৫৩-২৫৭)
এ দিনে রোজা ও তাওবা-ইস্তেগফার করা ছাড়া বিশেষ কোনো আমল নেই। অথচ আশুরাকেন্দ্রিক মনগড়া আমল ও রসম বিভিন্ন সমাজে প্রচলিত আছে। ধর্মীয় কোনো বিষয়কে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের প্রথা, প্রচলন ও কুসংস্কার বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। কিছু কুসংস্কার শিরকের পর্যায়েও চলে যায়। তাই বিষয়গুলো থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
আশুরা মানে শুধু কারবালার দিবস নয়। আশুরার মর্যাদা ও ঐতিহ্য ইসলাম-পূর্ব যুগ থেকেই স্বীকৃত।
হাদিসে এসেছে, ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) হিজরত করে মদিনায় এলেন এবং তিনি মদিনার ইহুদিদের আশুরার দিন রোজা রাখতে দেখলেন। তাদের এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলল, এটা সেই দিন, যে দিন আল্লাহ মুসা (আ.) ও বনি ইসরাঈলকে মুক্তি দিয়েছেন এবং ফেরাউন ও তার জাতিকে ডুবিয়ে মেরেছেন। তার সম্মানার্থে আমরা রোজা রাখি। তখন রাসুল (সা.) বললেন, আমরা তোমাদের চেয়েও মুসা (আ.)-এর অধিক নিকটবর্তী। এরপর তিনি এ দিনে রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। (মুসলিম, হাদিস : ২৫৪৮)