মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েও সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার নূর ইসলামের কপালে চিন্তার ভাঁজ। তার চিকিৎসক হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ। ছেলের মেডিকেলে ভর্তি হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শ্রমিক বাবা মোসলেম খানও।
নূর ইসলাম উপজেলার রায়দৌলতপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের মোসলেম খান ও নাসিমা বেগম দম্পত্তির দ্বিতীয় সন্তান।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, নূর ইসলামের বাবা মোসলেম খান পেশায় একজন জুটমিল শ্রমিক। তিনি খুলনায় সরকারি একটি জুটমিলে কাজ করতেন। কিন্তু সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে তিনি খুবই স্বল্প বেতনে গাজীপুরের একটি বেসরকারি জুটমিলে কর্মরত রয়েছেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে নূর ইসলাম মেজো। তার বড় বোন মুক্তার বিয়ে হয়েছে অনেক ছোট বয়সেই। আর ছোট ভাই আকাশ অষ্টম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে।
নূর ইসলাম খুলনার স্টার জুটমিলস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পান। আর চলতি বছরে কামারখন্দ উপজেলার সরকারি হাজী কোরপ আলী মেমোরিয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পান। এরপর তিনি মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করেন। এরপর গত ১০ মার্চ পরীক্ষা দিয়ে সেখানেও কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান।
নূর ইসলাম বলেন, বাবা সরকারি জুটমিলে কাজ করতেন। কিন্তু বেতন কম থাকায় সংসার চালানোর পাশাপাশি খুব কষ্টে আমাদের তিন ভাই-বোনকে লেখাপড়া করিয়েছেন। ঋণ নিয়ে আমাদের স্কুল ও প্রাইভেটের ফি দিয়েছেন। আমি এখন মেডিকেল কলেজে লেখাপড়ার সুযোগ পেলেও টাকার অভাবে সেখানে ভর্তি হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। মেডিকেলে ভর্তি হতে শুরুতে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকার প্রয়োজন। আমার বাবার পক্ষে এতো টাকা দিয়ে লেখাপড়া করানো মোটেই সম্ভব নয়। তাই মেডিকেলে ভর্তি হওয়া নিয়ে খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছি। এই মুহূর্তে কেউ আমাকে আর্থিক সহায়তা করলে খুব উপকার হতো। কেউ চাইলে আমার ফোন নম্বরে (০১৩১৫৭৪০৫৮৬) যোগাযোগ করতে পারেন।
নূর ইসলামের মা নাসিমা বেগম বলেন, তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে মেয়ে সবার বড়। মেয়ে মেধাবী হলেও টাকার অভাবে লেখাপড়া করাতে না পেরে দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে দিয়ে দেই। তারপর থেকে তার আর লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি। মেজো ছেলে নূর ইসলামের লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকায় অনেক কষ্টে ঋণ নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়িয়েছি। কিন্তু তার বাবা সরকারি জুটমিলের চাকরি হারানোর পর বর্তমানে একটি বেসরকারি জুটমিলে মাত্র ৬ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করছেন। বর্তমান বাজারে ৬ হাজার টাকায় সংসার চালানোই দায়, তারপর আবার ছেলেকে মেডিকেল ভর্তি করব কিভাবে? নূর ইসলাম এতো কষ্টে লেখাপড়া করে সরকারি মেডিকেলে চান্স পেলেও টাকার অভাবে ভর্তি করাতে পারছি না। একজন মায়ের কাছে এর চেয়ে কষ্ট আর কী হতে পারে।
কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেরিনা সুলতানা বলেন, নূর ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থীর মেডিকেল কলেজে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তার ভর্তির জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।