
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক তারকা ইমরুল কায়েস এখনো মেহেরপুরের উজলপুর ডাকঘরের কর্মচারী। তার মাসিক সম্মানী মাত্র ৪ হাজার ৪৯০ টাকা। কিন্তু যে ডাকঘরে তিনি কর্মরত বলে সরকারি রেকর্ডে দেখা যায়, সেই অফিসের অস্তিত্বই মেলেনি বাস্তবে। ইমরুল কায়েস বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার একটি ক্রিকেট একাডেমিতে প্রশিক্ষক হিসেবে আছেন।
ইমরুল কায়েস এখনো ডাকঘরের কর্মচারী—বিষয়টি জানাজানি হতেই মেহেরপুরজুড়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। অনেকে অবাক হয়ে বলছেন, জাতীয় দলের ক্রিকেটার কি সত্যিই সাড়ে ৪ হাজার টাকার সরকারি চাকরিজীবী, নাকি এটি প্রভাব খাটিয়ে নেওয়া এক নামমাত্র নিয়োগ!
উজলপুর গ্রামে সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক চিঠি ও নথিপত্র ফেরত যাচ্ছে প্রেরকের কাছে। ফয়সাল নামের এক ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ভিসা সংক্রান্ত কাগজ পাননি, সে চিঠি আবার যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত গেছে। আবার কেউ চাকরির সাক্ষাৎকারের ডাক হারিয়েছেন। এমন অভিযোগ পেয়ে সরেজমিন উজলপুর গ্রামে গেলে দেখা যায়, গ্রামটিতে ডাকঘরের কোনো অস্তিত্বই নেই। কোথাও কোনো সাইনবোর্ড নেই, নেই পোস্ট অফিসের কোনো চিহ্ন।
চায়ের দোকানে জিজ্ঞেস করতেই উপস্থিত একজন বললেন, এই এলাকায় তো কোনো পোস্ট অফিস নেই।’ আরেকজন বললেন, ‘ইমরুল কায়েসের বাবা ও দাদা নাকি আগে কাজ করতেন। সে সময় তাদের বাড়িতেই ডাকঘর ছিল। এখন কে বা কারা কাজ করছে, সে সম্পর্কে এলাকাবাসীর কোনো ধারণা নেই।
স্থানীয়রা বলছেন, ইমরুল কায়েস দেশের একজন সফল ক্রিকেটার, তার পরিবারও প্রভাবশালী। তাদের অনেকেরই প্রশ্ন, গ্রামের কোনো দরিদ্র ছেলেকে এই পদে সুযোগ না দিয়ে এমন একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়াটা কতটা ন্যায্য?
উল্লেখ্য, ইমরুল কায়েসের দাদা কায়েম বিশ্বাস পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া থেকে পঞ্চাশের দশকে মেহেরপুরে এসে বসতি গড়েছিলেন। তার দাদা ও বাবা দুজনই দুপুরবে গ্রাম পোস্ট মাস্টার হিসেবে কাজ করেছেন। ইমরুল কায়েসের বাবা বনি আমিন বিশ্বাস ২০২০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান।
মেহেরপুর প্রধান ডাকঘরের রেকর্ডে দেখা যায়, উজলপুর ডাকঘরে ইমরুল কায়েস ও আব্দুল জলিল ইডিএ পদে এবং রাজু আহমেদ ইডিএমসি পদে কর্মরত আছেন। কিন্তু গ্রামের মানুষ জানে না তারা কারা বা কোথায় আছেন। জলিল নামে একজন চিঠি বিলি করতেন, পরে তিনি বিদেশে চলে গেছেন বলে জানা যায়।
মেহেরপুর প্রধান ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘চার-পাঁচ বছর হলো ইমরুল কায়েস ডাক বিভাগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। বিস্তারিত জানতে হলে বিভাগীয় ডাক পরিদর্শকের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘ইমরুল আমাদের এলাকার ছেলে, তারকা ক্রিকেটার, মেহেরপুরের গর্ব। তাকে নিয়ে নেতিবাচক কিছু না লিখলেই ভালো।
বিভাগীয় ডাক পরিদর্শক অলক কুমার বিশ্বাস মোবাইল ফোনে কালবেলাকে বলেন,২০২১ সালে তৎকালীন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের ডিও অনুযায়ী ইমরুল কায়েসকে উজলপুর ডাকঘরের ইডিএ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। মাসিক সম্মানী ৪ হাজার ৫০০ টাকা। এটি লাভজনক কোনো পদ নয়।’ কিন্তু যে ডাকঘর বাস্তবে নেই, সেখানে কীভাবে সরকারি নিয়োগ কার্যকর থাকে—এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর মেলেনি।
অস্ট্রেলিয়া থেকে মোবাইল ফোনে ইমরুল কায়েস বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। তিনি ডাক বিভাগে তার সম্পৃক্ততা এবং সাম্প্রতিক সময়ে চিঠি ফেরত যাওয়ার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেন।
ইমরুল বলেন,গ্রাম পোস্ট মাস্টারদের কাজ চিঠি বিলি করা না। আমি পোস্ট অফিসের অনুরোধে তাদের সঙ্গে আমার নামটি যুক্ত করেছি, যাতে বাংলাদেশের ডাক বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি চিঠি ফেরত যাওয়ার বিষয়টি পোস্টম্যানের ভুল, আমার নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘জলিল সাহেব (ইডিএ আব্দুল জলিলÑএখন ওমরাহ করতে সৌদি আরব অবস্থান করছেন। দেশে ফিরলেই সমস্যা সমাধান করবেন।
মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ আবদুল সালাম বলেন,বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে দেখব, সত্যতা মিললে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অবশ্যই নেব।

সনদ-গণভোট নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত হতে পারে আজ
হান্ডিয়াল নিউজ ডেস্ক 














