ঢাকা , বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
ত্রৈমাসিক চলনবিলের সময় পত্রিকার প্রিন্ট,অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়া  জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

গাইবান্ধায় সরকারি হাসপাতালে অ্যানথ্রাক্সের চিকিৎসায় অনীহা দূর থেকে দেখে প্রেসক্রিপশন

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে রোগীরা সরকারি হাসপাতালে গিয়ে যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ আশপাশের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা অ্যানথ্রাক্স উপসর্গের রোগীর কাছে আসতে ভয় পান। ভর্তি হতে চাইলে চিকিৎসক দূর থেকে দেখে ওষুধ লিখে দিয়ে (ব্যবস্থাপত্র বা প্রেসক্রিপশন) বিদায় করে দেন। চিকিৎসকরা রোগীকে স্পর্শ না করে বা সরাসরি পরীক্ষা না করে শুধু দূর থেকে দেখে, কথা বলে এবং বর্ণনা শুনে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে দায় সারছেন। হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয় না কোনো ওষুধও। বাধ্য হয়ে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে বহু রোগী নিজ বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের কেউ চোখে ফোলা নিয়ে, আবার কেউ হাতে ফোসকা নিয়ে বাড়িতেই অবস্থান করছেন। তাদের কারও এক হাতে, কারও আবার দুই হাতেই ফোসকা পড়েছে। আবার জোরাজুরির মুখে কাউকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পাননি কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা। অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণ আতঙ্কে নার্সরা আসেননি দেখতে। সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে চিকিৎসক ও নার্সরা রোগীর কাছে আসতে ভয় পান। তারা বেসরকারি অন্য কোনো ক্লিনিক বা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন।

এদিকে সুন্দরগঞ্জের অ্যানথ্রাক্স উপসর্গের রোগীরা চিকিৎসার খরচ জোগাতেও হিমশিম খাচ্ছেন। তারা সরকারি হাসপাতালে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে বাধ্য হয়ে বেসরকারি কোনো হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করছেন। যাদের অনেকেই ধারদেনা করে ওষুধ কিনছেন। এমনকি কেউ কেউ চড়া সুদে ঋণ নিয়েও চিকিৎসা ব্যয়ের জোগান দিচ্ছেন।

তবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দাবি, অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে যারা হাসপাতালে এসেছিলেন, তাদের মধ্যে কেউ গুরুতরভাবে আক্রান্ত ছিলেন না। সেজন্য ভর্তি রাখারও প্রয়োজন হয়নি। এ ছাড়া অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন।

সুন্দরগঞ্জের বেলকা ইউনিয়নের কিশামত সদর গ্রামে গত ২৭ আগস্ট অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত একটি গরু জবাই করা হয়। যার মাংস কাটাকাটিতে অংশ নেওয়া ১১ জনের শরীরে দুই দিন পর ফোসকা পড়াসহ অ্যানথ্রাক্সের নানা উপসর্গ দেখা যায়। তারা হলেন মোজাফফর আলী (৫০), মোজাহার আলী (৬০), শফিউল ইসলাম (৩৫), গোলজার মিয়া (২৫), খতিব মিয়া (৩৫), হাসান আলী (১৫), নুরুন্নবী মিয়া (১৬), ফরিদুল মিয়া (২০), মারুফ মিয়া (১৬), কুদ্দুস মিয়া (১৬) ও মিঠু মিয়া (১৬)। তাদের মধ্যে মোজাফফর আলী বা চোখে ১০ দিন ধরে দেখছেন না বলে জানান।

ওই ঘটনার কয়েকদিন পর পাশের পশ্চিম বেলকা গ্রামের গৃহবধূ রোজিনা বেগম (৪৫) একটি অসুস্থ ছাগল জবাই করে মাংস কাটাকাটি করেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। এরপর নতুন করে গত সোম ও মঙ্গলবার আরও ছয়জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দেয়। এ নিয়ে এ উপজেলায় মোট ২২ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ শনাক্ত হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১ অক্টোবর থেকে গত বুধবার দুপুর পর্যন্ত এই হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিয়েছেন তারা হলেন—মধ্যে বেলকা গ্রামের সামিউল ইসলাম, সাহাদৎ হোসেন, সবুজ মিয়া, বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের আজিজল হক, পশ্চিম বেলকা গ্রামের ভুট্টো মিয়া, আতিকুর রহমান, শহিদুল ইসলাম, বেলকা গ্রামের মোজাহার আলী, মোজাফ্ফর হোসেন, খতিব মিয়া, ফরিদুল হক, রুজিনা বেগম, কিসামত সদর গ্রামের মোজা মিয়া, মাহবুর রহমান, শাফিকুল ইসলাম, স্বাধীন মিয়া, সকিনা বেগম, তাইজল মিয়া, শিশু ছায়ফান, আফরিন বেগম, ছালদিয়া ইসলাম ও রইসুল মিয়া।

তাদের মধ্যে মোজাফফর আলী চিকিৎসা নিতে গিয়ে নিজের দুর্ভোগে পড়ার চিত্র তুলে ধরেন কালবেলার কাছে। তিনি বলেন, অসুস্থ হওয়ার পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে ভর্তি হতে চাইলে চিকিৎসক ওষুধ লিখে বিদায় করে দেন। বাড়িতে ফিরে দুই দিন ওষুধ খেলেও ফোসকা ভালো হয়নি। পরে গত শুক্রবার রংপুর থেকে গাইবান্ধার রাবেয়া ক্লিনিকে আসা এক চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাই। তার দেওয়া প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী এখন ওষুধ খাচ্ছি। কিন্তু ১০ দিন ধরে বা চোখে দেখতে পাচ্ছি না।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার চোখের জন্য উন্নত চিকিৎসা দরকার। কিন্তু সেই টাকা নেই, কী করে চিকিৎসা করব? এখন পর্যন্ত চিকিৎসার পেছনে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার টাকা ধার করা। চিকিৎসক দুই মাস ওষুধ খেতে বলেছেন। প্রতিদিন ওষুধ খেতে হয়, ওষুধের অনেক দাম।

অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গে আক্রান্ত কৃষক মোজাহার আলী বলেন, দুই হাতের ফোসকা এখনো ভালো হয়নি। এ পর্যন্ত ৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে চড়া সুদে ৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। সেই টাকা পরিশোধ করব নাকি ওষুধ কিনব, তা নিয়ে চিন্তায় আছি। দেড় বিঘা জমি বর্গা চাষ করে কোনোমতে সংসার চলে। মাঝেমধ্যে অন্য জেলায় গিয়ে রিকশা চালাই। এখন অসুস্থ হয়ে সেটাও পারছি না। খুব বিপদে আছি।

খতিব মিয়া নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, দিনমজুরের কাজ করে সংসার চলে। এ পর্যন্ত দেনা করে ৩ হাজার টাকা চিকিৎসার পেছনে খরচ করেছি। প্রতিদিন ওষুধ কিনতে হচ্ছে। একদিকে বাজার খরচ, আরেক দিকে ওষুধ কেনা—কোনটা আগে করব চিন্তা করে কোলায়ে উঠতে পারছি না। সরকারি হাসপাতালের ওষুধ কোনো কাজে লাগে না। তাই ক্লিনিকের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ কিনে খাচ্ছি।

বেলকা গ্রামের অসুস্থ গরু জবাইয়ে অংশ নেওয়া নুরুন্নবীর মা নূরননাহার বেগম (৫৬) জানান, তার ছেলের ডান হাতে ফোসকা পড়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে ভর্তি নেয়নি। দূর থেকে দেখে চিকিৎসক ওষুধ লিখে দিয়েছেন। পরে গাইবান্ধায় গিয়ে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সে অনুযায়ী চিকিৎসা চলছে। ছেলে এখন অনেকটাই সুস্থ। নূরননাহার বলেন, ‘জীবন আগে, তারপর টাকা।

গোলজার মিয়া নামে আরেক ভুক্তভোগী নিজের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে বলেন, দিনমজুরের কাজ করে সংসার চলে। এ পর্যন্ত দেনা করে ৯ হাজার টাকা চিকিৎসার পেছনে খরচ করেছি। প্রতিদিন ওষুধ কিনতে হচ্ছে। একদিকে বাজার খরচ, আরেক দিকে ওষুধ কেনা—কোনটা আগে করব চিন্তা করে পারছি না।

তবে রোগীদের বিস্তর এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সুন্দরগঞ্জের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দিবাকর বসাক। তিনি কালবেলাকে বলেন, অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে যারা হাসপাতালে এসেছিলেন, তাদের মধ্যে কেউ গুরুতরভাবে আক্রান্ত ছিলেন না। তাই ভর্তি রাখার প্রয়োজন হয়নি। গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে আজ (গতকাল) বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত নতুন কোনো রোগী আসেননি অ্যানথ্রাক্সের। অ্যানথ্রাক্সের রোগীদের জন্য বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ সবসময় সজাগ আছে। এ ছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে মেডিকেল টিম কাজ করছে। রোগীরা আসলে ওষুধ নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছে।

অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণ রোধে সচেতনতামূলক বিভিন্ন প্রচার চলছে বলেও দাবি করেন তিনি। দিবাকর বসাক বলেন, ‘এলাকায় অসুস্থ গবাদি পশু জবাই বন্ধ রাখার জন্য মাইক দিয়ে প্রচারণা ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ধারের নামে ঋণের ফাঁদ পা দিলেই মাথায় হাত কেরানীগঞ্জের গ্রামে গ্রামে ঋণজাল

গাইবান্ধায় সরকারি হাসপাতালে অ্যানথ্রাক্সের চিকিৎসায় অনীহা দূর থেকে দেখে প্রেসক্রিপশন

আপলোড সময় : ০৯:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে রোগীরা সরকারি হাসপাতালে গিয়ে যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ আশপাশের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা অ্যানথ্রাক্স উপসর্গের রোগীর কাছে আসতে ভয় পান। ভর্তি হতে চাইলে চিকিৎসক দূর থেকে দেখে ওষুধ লিখে দিয়ে (ব্যবস্থাপত্র বা প্রেসক্রিপশন) বিদায় করে দেন। চিকিৎসকরা রোগীকে স্পর্শ না করে বা সরাসরি পরীক্ষা না করে শুধু দূর থেকে দেখে, কথা বলে এবং বর্ণনা শুনে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে দায় সারছেন। হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয় না কোনো ওষুধও। বাধ্য হয়ে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে বহু রোগী নিজ বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের কেউ চোখে ফোলা নিয়ে, আবার কেউ হাতে ফোসকা নিয়ে বাড়িতেই অবস্থান করছেন। তাদের কারও এক হাতে, কারও আবার দুই হাতেই ফোসকা পড়েছে। আবার জোরাজুরির মুখে কাউকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পাননি কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা। অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণ আতঙ্কে নার্সরা আসেননি দেখতে। সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে চিকিৎসক ও নার্সরা রোগীর কাছে আসতে ভয় পান। তারা বেসরকারি অন্য কোনো ক্লিনিক বা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন।

এদিকে সুন্দরগঞ্জের অ্যানথ্রাক্স উপসর্গের রোগীরা চিকিৎসার খরচ জোগাতেও হিমশিম খাচ্ছেন। তারা সরকারি হাসপাতালে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে বাধ্য হয়ে বেসরকারি কোনো হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করছেন। যাদের অনেকেই ধারদেনা করে ওষুধ কিনছেন। এমনকি কেউ কেউ চড়া সুদে ঋণ নিয়েও চিকিৎসা ব্যয়ের জোগান দিচ্ছেন।

তবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দাবি, অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে যারা হাসপাতালে এসেছিলেন, তাদের মধ্যে কেউ গুরুতরভাবে আক্রান্ত ছিলেন না। সেজন্য ভর্তি রাখারও প্রয়োজন হয়নি। এ ছাড়া অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন।

সুন্দরগঞ্জের বেলকা ইউনিয়নের কিশামত সদর গ্রামে গত ২৭ আগস্ট অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত একটি গরু জবাই করা হয়। যার মাংস কাটাকাটিতে অংশ নেওয়া ১১ জনের শরীরে দুই দিন পর ফোসকা পড়াসহ অ্যানথ্রাক্সের নানা উপসর্গ দেখা যায়। তারা হলেন মোজাফফর আলী (৫০), মোজাহার আলী (৬০), শফিউল ইসলাম (৩৫), গোলজার মিয়া (২৫), খতিব মিয়া (৩৫), হাসান আলী (১৫), নুরুন্নবী মিয়া (১৬), ফরিদুল মিয়া (২০), মারুফ মিয়া (১৬), কুদ্দুস মিয়া (১৬) ও মিঠু মিয়া (১৬)। তাদের মধ্যে মোজাফফর আলী বা চোখে ১০ দিন ধরে দেখছেন না বলে জানান।

ওই ঘটনার কয়েকদিন পর পাশের পশ্চিম বেলকা গ্রামের গৃহবধূ রোজিনা বেগম (৪৫) একটি অসুস্থ ছাগল জবাই করে মাংস কাটাকাটি করেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। এরপর নতুন করে গত সোম ও মঙ্গলবার আরও ছয়জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দেয়। এ নিয়ে এ উপজেলায় মোট ২২ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ শনাক্ত হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১ অক্টোবর থেকে গত বুধবার দুপুর পর্যন্ত এই হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিয়েছেন তারা হলেন—মধ্যে বেলকা গ্রামের সামিউল ইসলাম, সাহাদৎ হোসেন, সবুজ মিয়া, বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের আজিজল হক, পশ্চিম বেলকা গ্রামের ভুট্টো মিয়া, আতিকুর রহমান, শহিদুল ইসলাম, বেলকা গ্রামের মোজাহার আলী, মোজাফ্ফর হোসেন, খতিব মিয়া, ফরিদুল হক, রুজিনা বেগম, কিসামত সদর গ্রামের মোজা মিয়া, মাহবুর রহমান, শাফিকুল ইসলাম, স্বাধীন মিয়া, সকিনা বেগম, তাইজল মিয়া, শিশু ছায়ফান, আফরিন বেগম, ছালদিয়া ইসলাম ও রইসুল মিয়া।

তাদের মধ্যে মোজাফফর আলী চিকিৎসা নিতে গিয়ে নিজের দুর্ভোগে পড়ার চিত্র তুলে ধরেন কালবেলার কাছে। তিনি বলেন, অসুস্থ হওয়ার পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে ভর্তি হতে চাইলে চিকিৎসক ওষুধ লিখে বিদায় করে দেন। বাড়িতে ফিরে দুই দিন ওষুধ খেলেও ফোসকা ভালো হয়নি। পরে গত শুক্রবার রংপুর থেকে গাইবান্ধার রাবেয়া ক্লিনিকে আসা এক চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাই। তার দেওয়া প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী এখন ওষুধ খাচ্ছি। কিন্তু ১০ দিন ধরে বা চোখে দেখতে পাচ্ছি না।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার চোখের জন্য উন্নত চিকিৎসা দরকার। কিন্তু সেই টাকা নেই, কী করে চিকিৎসা করব? এখন পর্যন্ত চিকিৎসার পেছনে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার টাকা ধার করা। চিকিৎসক দুই মাস ওষুধ খেতে বলেছেন। প্রতিদিন ওষুধ খেতে হয়, ওষুধের অনেক দাম।

অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গে আক্রান্ত কৃষক মোজাহার আলী বলেন, দুই হাতের ফোসকা এখনো ভালো হয়নি। এ পর্যন্ত ৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে চড়া সুদে ৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। সেই টাকা পরিশোধ করব নাকি ওষুধ কিনব, তা নিয়ে চিন্তায় আছি। দেড় বিঘা জমি বর্গা চাষ করে কোনোমতে সংসার চলে। মাঝেমধ্যে অন্য জেলায় গিয়ে রিকশা চালাই। এখন অসুস্থ হয়ে সেটাও পারছি না। খুব বিপদে আছি।

খতিব মিয়া নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, দিনমজুরের কাজ করে সংসার চলে। এ পর্যন্ত দেনা করে ৩ হাজার টাকা চিকিৎসার পেছনে খরচ করেছি। প্রতিদিন ওষুধ কিনতে হচ্ছে। একদিকে বাজার খরচ, আরেক দিকে ওষুধ কেনা—কোনটা আগে করব চিন্তা করে কোলায়ে উঠতে পারছি না। সরকারি হাসপাতালের ওষুধ কোনো কাজে লাগে না। তাই ক্লিনিকের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ কিনে খাচ্ছি।

বেলকা গ্রামের অসুস্থ গরু জবাইয়ে অংশ নেওয়া নুরুন্নবীর মা নূরননাহার বেগম (৫৬) জানান, তার ছেলের ডান হাতে ফোসকা পড়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে ভর্তি নেয়নি। দূর থেকে দেখে চিকিৎসক ওষুধ লিখে দিয়েছেন। পরে গাইবান্ধায় গিয়ে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সে অনুযায়ী চিকিৎসা চলছে। ছেলে এখন অনেকটাই সুস্থ। নূরননাহার বলেন, ‘জীবন আগে, তারপর টাকা।

গোলজার মিয়া নামে আরেক ভুক্তভোগী নিজের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে বলেন, দিনমজুরের কাজ করে সংসার চলে। এ পর্যন্ত দেনা করে ৯ হাজার টাকা চিকিৎসার পেছনে খরচ করেছি। প্রতিদিন ওষুধ কিনতে হচ্ছে। একদিকে বাজার খরচ, আরেক দিকে ওষুধ কেনা—কোনটা আগে করব চিন্তা করে পারছি না।

তবে রোগীদের বিস্তর এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সুন্দরগঞ্জের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দিবাকর বসাক। তিনি কালবেলাকে বলেন, অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে যারা হাসপাতালে এসেছিলেন, তাদের মধ্যে কেউ গুরুতরভাবে আক্রান্ত ছিলেন না। তাই ভর্তি রাখার প্রয়োজন হয়নি। গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে আজ (গতকাল) বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত নতুন কোনো রোগী আসেননি অ্যানথ্রাক্সের। অ্যানথ্রাক্সের রোগীদের জন্য বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ সবসময় সজাগ আছে। এ ছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে মেডিকেল টিম কাজ করছে। রোগীরা আসলে ওষুধ নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছে।

অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণ রোধে সচেতনতামূলক বিভিন্ন প্রচার চলছে বলেও দাবি করেন তিনি। দিবাকর বসাক বলেন, ‘এলাকায় অসুস্থ গবাদি পশু জবাই বন্ধ রাখার জন্য মাইক দিয়ে প্রচারণা ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।