ঢাকা , বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
ত্রৈমাসিক চলনবিলের সময় পত্রিকার প্রিন্ট,অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়া  জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

মধ্যপ্রাচ্যের দুই মুসলিম দেশে ব্যাপক হামলা চালাল ইসরায়েল

মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ সিরিয়া ও লেবাননের বিভিন্ন এলাকায় একযোগে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) এসব হামলা চালানো হয় সিরিয়ার সরকারি বাহিনী এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর অবস্থানে। ইসরায়েলের দাবি, উত্তরের সীমান্ত নিরাপদ রাখতে এই অভিযান চালানো হয়েছে।

সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় সুয়েইদা প্রদেশে সম্প্রতি বেদুইন ও দ্রুজ মিলিশিয়াদের মধ্যে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ শুরু হয়, যাতে বহু প্রাণহানি ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সিরিয়ার নতুন সরকার সেখানে সেনা পাঠায়। তবে ওই বাহিনী সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে উল্টো লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে এবং হতাহতের ঘটনা আরও বাড়ে।

উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বর মাসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সরিয়ে ইসলামপন্থি বিদ্রোহীদের একটি জোট নতুন সরকার গঠন করে। এই নতুন সরকারের বিরুদ্ধে এটিই ইসরায়েলের প্রথম সরাসরি হামলা।

ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী একটি সিরীয় ভুখণ্ড সুয়েইদা। এই এলাকার সংখ্যাগরিষ্ঠ দ্রুজ সম্প্রদায়ের সঙ্গে তেলআবিবের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং তারা বরাবরই দ্রুজদের নিরাপত্তার অযুহাতে সেখানে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করে। সুয়েইদা এলাকাটি সিরিয়ার দ্রুজদের প্রধান ঘাঁটি হওয়ায় সেখানে সহিংসতা ছড়ালে ইসরায়েল উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।

সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল ও সিরিয়ার নতুন সরকারের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সীমিত কূটনৈতিক যোগাযোগ শুরু হয়। লক্ষ্য ছিল সীমান্ত উত্তেজনা কমানো। কিন্তু মঙ্গলবারের বিমান হামলা সেই আলোচনার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।

একইদিনে ইসরায়েল লেবাননের বেকা উপত্যকায় হিজবুল্লাহর ঘাঁটিতেও বিমান হামলা চালায়। অঞ্চলটি ইরান-সমর্থিত এ সশস্ত্র গোষ্ঠীর অন্যতম শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

লেবাননের কর্মকর্তারা বলছেন, হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করতে ইসরায়েল ধারাবাহিক চাপ তৈরি করছে। নভেম্বর মাসে লেবাননে সবচেয়ে প্রাণঘাতী যুদ্ধ শেষে একটি হালকা যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার অন্যতম শর্ত ছিল হিজবুল্লাহর নিরস্ত্রীকরণ। কিন্তু এই চুক্তি এখন হুমকির মুখে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, এই হামলা হিজবুল্লাহ এবং লেবাননের সরকার—উভয়ের জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা। ইসরায়েল তার সামরিক শক্তি পুনর্গঠনের যে কোনো চেষ্টার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ প্রতিক্রিয়া জানাবে।

সবমিলিয়ে ইসরায়েল, সিরিয়া এবং লেবাননের মধ্যে জটিল রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি বর্তমানে আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বিশেষত সিরিয়ার দ্রুজ অঞ্চল ও লেবাননে হিজবুল্লাহর ওপর একযোগে হামলা ইঙ্গিত দিচ্ছে, সামনে আরও সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি নিরসনে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা কতটা ফলপ্রসূ হবে, এখন সেটিই দেখার বিষয়।

সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ধারের নামে ঋণের ফাঁদ পা দিলেই মাথায় হাত কেরানীগঞ্জের গ্রামে গ্রামে ঋণজাল

মধ্যপ্রাচ্যের দুই মুসলিম দেশে ব্যাপক হামলা চালাল ইসরায়েল

আপলোড সময় : ০৬:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ সিরিয়া ও লেবাননের বিভিন্ন এলাকায় একযোগে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) এসব হামলা চালানো হয় সিরিয়ার সরকারি বাহিনী এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর অবস্থানে। ইসরায়েলের দাবি, উত্তরের সীমান্ত নিরাপদ রাখতে এই অভিযান চালানো হয়েছে।

সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় সুয়েইদা প্রদেশে সম্প্রতি বেদুইন ও দ্রুজ মিলিশিয়াদের মধ্যে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ শুরু হয়, যাতে বহু প্রাণহানি ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সিরিয়ার নতুন সরকার সেখানে সেনা পাঠায়। তবে ওই বাহিনী সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে উল্টো লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে এবং হতাহতের ঘটনা আরও বাড়ে।

উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বর মাসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সরিয়ে ইসলামপন্থি বিদ্রোহীদের একটি জোট নতুন সরকার গঠন করে। এই নতুন সরকারের বিরুদ্ধে এটিই ইসরায়েলের প্রথম সরাসরি হামলা।

ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী একটি সিরীয় ভুখণ্ড সুয়েইদা। এই এলাকার সংখ্যাগরিষ্ঠ দ্রুজ সম্প্রদায়ের সঙ্গে তেলআবিবের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং তারা বরাবরই দ্রুজদের নিরাপত্তার অযুহাতে সেখানে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করে। সুয়েইদা এলাকাটি সিরিয়ার দ্রুজদের প্রধান ঘাঁটি হওয়ায় সেখানে সহিংসতা ছড়ালে ইসরায়েল উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।

সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল ও সিরিয়ার নতুন সরকারের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সীমিত কূটনৈতিক যোগাযোগ শুরু হয়। লক্ষ্য ছিল সীমান্ত উত্তেজনা কমানো। কিন্তু মঙ্গলবারের বিমান হামলা সেই আলোচনার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।

একইদিনে ইসরায়েল লেবাননের বেকা উপত্যকায় হিজবুল্লাহর ঘাঁটিতেও বিমান হামলা চালায়। অঞ্চলটি ইরান-সমর্থিত এ সশস্ত্র গোষ্ঠীর অন্যতম শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

লেবাননের কর্মকর্তারা বলছেন, হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করতে ইসরায়েল ধারাবাহিক চাপ তৈরি করছে। নভেম্বর মাসে লেবাননে সবচেয়ে প্রাণঘাতী যুদ্ধ শেষে একটি হালকা যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার অন্যতম শর্ত ছিল হিজবুল্লাহর নিরস্ত্রীকরণ। কিন্তু এই চুক্তি এখন হুমকির মুখে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, এই হামলা হিজবুল্লাহ এবং লেবাননের সরকার—উভয়ের জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা। ইসরায়েল তার সামরিক শক্তি পুনর্গঠনের যে কোনো চেষ্টার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ প্রতিক্রিয়া জানাবে।

সবমিলিয়ে ইসরায়েল, সিরিয়া এবং লেবাননের মধ্যে জটিল রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি বর্তমানে আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বিশেষত সিরিয়ার দ্রুজ অঞ্চল ও লেবাননে হিজবুল্লাহর ওপর একযোগে হামলা ইঙ্গিত দিচ্ছে, সামনে আরও সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি নিরসনে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা কতটা ফলপ্রসূ হবে, এখন সেটিই দেখার বিষয়।

সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস