সাড়ে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইসরায়েলি সেনারা। তাদের নির্বিচার হামলায় ইতোমধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে অবরুদ্ধ উপত্যকার বেশিরভাগ অংশ। নিরাপদ পানি, খাদ্য আর ওষুধের অভাবে মানবেতর জীবন পার করছে সেখানকার প্রতিটা বাসিন্দা। এমন পরিস্থিতিতেই মার্কিন নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাবাসীর জন্য সব ধরনের ত্রাণ সহায়তা বন্ধ ঘোষণা করল ৮টি দেশ।
ফিলিস্তিনিদের ত্রাণ সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার তহবিল বন্ধের ঘোষণার পর এ তালিকায় সর্বশেষ নাম লিখিয়েছে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড এবং ফিলন্যান্ড। শুক্র ও শনিবার (২৬-২৭ জানুয়ারি) আলাদা দুটি বিবৃতিতে দেশগুলো ইউএনডব্লিউএ’র ফিলিস্তিন শরণার্থী তহবিলে অর্থ দেবে না বলে ঘোষণা করেছে।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে দেশগুলোর যুক্তি, ইসরায়েলে ৭ অক্টোবরের হামাস যে হামলা চালিয়েছে তাতে ইউএনডব্লিউএ’র কয়েকজন কর্মী সহায়তা করেছে। কিন্তু এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সহায়তা বন্ধের ঘোষণার কোনো যৌক্তিকতা নেই মন্তব্য করে নিন্দা জানিয়েছে ইউএনডব্লিউএ।
১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ গাজায় পরিচালিত জাতিসংঘের বৃহত্তম সংস্থা। সংস্থাটি গাজা, পশ্চিম তীর, জর্ডান, লেবানন এবং সিরিয়ার ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং অন্য মানবিক সহায়তা প্রদান করে। গাজার অভ্যন্তরে সংস্থাটির প্রায় ১৩ হাজার কর্মী রয়েছে।
ফিলিস্তিনিদের ত্রাণ সংস্থায় অর্থ বরাদ্দ স্থগিত করা দেশগুলোকে পুনরায় তাদের সিদ্ধান্ত বিবেচনার আহবান জানিয়েছে জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থা-( ইউএনআরডব্লিউএ)। গাজায় প্রায় ১০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি এই তহবিলের ওপর বেঁচে আছেন বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান ফিলিপ লাজ্জারিনি।
শনিবার ( ২৭ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে ফিলিপ বলেন, ‘মাত্র কয়েকজন মানুষের বিরুদ্ধে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ফিলিস্তিনিদের ত্রাণ সংস্থায় অর্থায়ন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত দু:খজনক। তাছাড়া যুদ্ধময় পরিস্থিতিতে একটি সংস্থার বিরুদ্ধে এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা দেওয়াটা দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয়। এই পরিস্থিতিতে কয়েকজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আনাটাও বিবেচনাপ্রসূত নয়।’
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই জাতিসংঘের এই সংস্থার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে আসছে ইসরায়েল। সর্বশেষ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থাটিতে অর্থায়ন না করার ঘোষণা দিয়ে বসলো যুক্তরাষ্ট্র ও ৮ টি দেশ। যদিও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বরখাস্ত ও একটি সুষ্ঠু তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘের এই সংস্থাটি।