দেশের প্লাস্টিক পণ্যের প্রসার ও রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০ দেশের অংশগ্রহণে ১৬তম আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক ফেয়ার (আইপিএফ) ২০২৪-এর পর্দা উঠেছে। যা চলবে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য এ মেলা উন্মুক্ত থাকবে। প্লাস্টিক ফেয়ারের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ)।
বুধবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরাতে (আসিসিবি) প্লাস্টিক ফেয়ারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমাদের যে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আছেন তিনি বাণিজ্য বিষয়ে খুব পারদর্শী। আমি বিশ্বাস করি, শিল্প এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মিলে এবার যে টিম হয়েছে— তা খুবই ভালো একটি টিম। এর মাধ্যমে আমরা বর্তমান ও আগামীর যে পরিকল্পনা তা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবো।
তিনি আরও বলেন, এই প্লাস্টিক ফেয়ার আমাদেরকে অনেক ভালো দিকনির্দেশনা দেয়। আমাদের প্লাস্টিকের অভ্যন্তরীণ বাজারও খুব বড়। প্লাস্টিক সেক্টরে বিশ্বের মধ্যে যে বিশাল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে সেখানে আমাদেরকে জায়গা করে নিতে হবে।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, দেশে প্লাস্টিক শিল্প নগরী হচ্ছে। প্লাস্টিক সেক্টরকে উন্নয়ন করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। প্লাস্টিকের জন্য আমরা প্লাস্টিক শিল্পনগরী করছি। পাশাপাশি মুদ্রণ শিল্পনগরীও হচ্ছে। আর এগুলোর কাজ চলমান আছে। এ সরকারের আমলে ব্যবসায়ীরা সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাবেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বলেছেন রপ্তানির ক্ষেত্রে শুধু তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। অন্য যে সেক্টরগুলো রয়েছে সেখানেও গুরুত্ব দিতে হবে। প্লাস্টিক সেক্টর আমাদের রপ্তানিতে অনেক ভূমিকা রাখে। একক সেক্টর হিসেবে রপ্তানির দিক থেকে প্লাস্টিক সেক্টর ১২ নম্বর অবস্থানে।
তিনি বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে নীতিগত সহায়তা দেওয়া। প্লাস্টিক সেক্টরের টেকনোলজি কীভাবে আরও বেশি উন্নয়ন করা যায়, সেজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সার্বিক সহায়তা করবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আমরা ৬০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানিতে পৌঁছেছি। এটি আরও বাড়ানো সম্ভব। তাই এই রপ্তানি বহুমুখী করণের মাধ্যমে আমাদের বৈদেশিক আয় বাড়াতে হবে। প্লাস্টিক সেক্টরের মতো অন্যান্য সেক্টরগুলো যদি উন্নয়ন করা যায় তাহলে রপ্তানি আয় বাড়ানো যাবে। পাশাপাশি আমরা যদি উৎপাদন বাড়াতে পারি, তাহলে তখনই পৃথিবীর বাকি দেশগুলো আমাদের সঙ্গে নানা ধরনের বাণিজ্য চুক্তি করবে।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুতকারক এবং রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, বর্তমানে গার্মেন্টস, খাদ্য শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে প্লাস্টিক শিল্প ব্যাপক অবদান রাখছে এবং রপ্তানি হচ্ছে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দেশের শুধুমাত্র তৈরি পোশাক ও নিট শিল্পই নয়, ফ্রোজেন ফিস, জুট টোইয়ান, ফার্মাসিউটিক্যালস আইটেম রপ্তানিসহ বিভিন্ন রপ্তানিকারক শিল্প প্রতিষ্ঠান প্লাস্টিক র্যাপিং বা মোড়কের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। অর্থাৎ বর্তমানে প্লাস্টিক মোড়ক এবং গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ ছাড়া কোনো পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা অসম্ভব।
দেশি-বিদেশি মিলে মোট ৯৬১টি স্টল দেওয়া হয়েছে এবারের প্লাস্টিক ফেয়ারে। এর মধ্যে রয়েছে বিদেশি ৬০০ কোম্পানির ৮০০ স্টল এবং দেশীয় ৫৪টি কোম্পানির ১৬১টি স্টল। বাংলাদেশ ছাড়াও এই ফেয়ারে অংশ নিয়েছেন চীন, তাইওয়ান, ভারত, বেলজিয়াম, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের প্রায় ২০টি দেশের প্রতিনিধিরা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ও এফবিসিসিআই-এর সিনিয়র সহসভাপতি মো. আমিন হিলালী উপস্থিত ছিলেন।