প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সমূহ দেশের অমূল্য সম্পদ। বাংলাদেশের প্রত্যকটি অঞ্চল ঘুরলেই চোখে পড়বে এসব প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন। বহু বছর পরেও তার অবকাটামোসহ নির্মাণ শৈলী আধুনিক প্রত্ন শৈলীকেও হার মানায়। বিশেষতঃ
তখনকার সমাজ—সংস্কৃতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা চিন্তা করলে বিষয়টি আরো পরিস্কার হবে, যে সময়ে ঐ সব নির্দশন তৈরি হয়েছিল তখনকার সমাজ এতটা শিক্ষিত ছিলনা,সহজলভ্য ছিলনা এর নির্মাণ শিল্পী ও নির্মান সামগ্রী। এর জন্যে প্রয়োজনীয় অর্থ ও তার ব্যয়ের মানসিকতার বিষয়টি ভাবনার। কিšু‘ এসব রুচিশীল প্রত্ন নির্দশন আমাদের দেশের বভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে—ছিটিয়ে আছে তা নিয়ে অনেক কিছু ভাবনার আছে।
এমনি বহু প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহসিক নির্দশনের লীলাভূমি পাবনার চাটমোহর উপজেলা। এ উপজেলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বহু ঐতিহাসিক স্থাপনা। এসব স্থাপনা বা নির্দশনের মধ্যে হান্ডিয়ালের শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের মন্দির উলে¬খযোগ্য। চাটমোহর পৌরসদর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তরে হান্ডিয়াল ইউনিয়নের হান্ডিয়াল বাজারের পূর্ব পার্শ্বে এই জগন্নাথদেবের মন্দিরটি অবস্থিত। যা জগন্নাথ মন্দির নামেই পরিচিত।
ঠিক কবে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত তা সঠিকভাবে জনা না গেলেও মন্দিরের প্রস্থরগাত্রে খোদিত লিপিদৃষ্টে জানা যায়,১১১২ শকাব্দে জনৈক ভবানী প্রসাদ দাস কতৃর্ক এই মন্দিরের একবার জীর্ন সংস্কার হয়েছিল।এতে অনুমান হয় ১১১২ শকাব্দে বহুপূর্বে এই মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল । একমাত্র সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশের মন্দির ব্যতিত এটির তুল্য প্রাচীন দেবমন্দির পাবনা জেলায় আর কুত্রাপি সহসা দৃষ্টিগোচর হয় না। প্রায় সাড়ে তিনশত বৎসর পূর্বে ক্ষদ্র ইটে নির্মিত এই মন্দিরটি উচ্চতা প্রায় ২৫ হাত বা ৩৭.৫ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ উভায় দিকে ৭ হাত।
মন্দিরের গায়ে পলি ভাষায় লিখিত আছেঃ
শাকে পক্ষেন্দু বানুঞ্জগনিতে
শ্রীজগৎপতে শ্রীমৎ ভবানী
প্রসাদেন ভগ্নপ্রসাদঃ উদ্বৃতঃ
।
অর্থাৎ ১১১২শকাব্দে ভবানী প্রসাদ কতৃর্ক এই মন্দিরের জীর্ণ সংস্কার হয়।অতএব মন্দিরটি নির্মাণকাল সংস্কারের অন্ততঃ সত্তর/আশি বৎসর পূর্বে অনুমান করা যাইতে পারে।এই হিসাবে মন্দিরটির বর্তমান বয়স দাড়ায় প্রায় সাড়ে তিন শত বৎসর। মন্দিরটির সর্বশেষ ২০১০ সালের জানুয়ারিতে সরকারের প্রত্ত্বতত্ব বিভাগ থেকে সংস্কার করা হয়।এই মন্দিরের বিগ্রহটি কোন এক হিন্দু তšত্তরায় কতৃর্ক প্রতিষ্ঠিত বলিয়া জানা যায়।
এককালে এই বিগ্রহের সেবার জন্য ১৭৫ বিঘা দেবোত্তর সম্পত্তি ছিল। এই সম্পাত্তি এখন আর মন্দিরের নাই।এই মন্দিরের পার্শ্বে আর একটি প্রাচীন মন্দির ছিল তা ১৮৯৭—৯৮ খৃষ্টাব্দের ভূমিকম্পে ধ্বংস প্রাপ্ত হয়।
১৮৬০ শতাব্দের ২২শে অগ্রহায়ন বর্তমান মন্দিরটি পুনরায় সংস্কার করা হইয়াছে। এখন এ মন্দিরটি ভগ্ন অবস্থায় রয়েছে এটা সংস্কার করা দরকার। জগন্নাথ মন্দিরের সন্মুখে জগন্নাথ দেববিগ্রহের স্নানমন্দির অবন্থিত। প্রাচিন স্নানমন্দিরটি ধবংস প্রাপ্ত হওয়ার পর ১৩৪৫ বঙ্গাব্দে নতুন স্নানমন্দিরটি নির্মিত করা হয়।এই মন্দিরের প্রস্থও লিপিতে উলি¬খিত আছেঃ হান্ডিয়াল নিবাসিনী ধর্মপ্রান ভূমধ্যাকারিণী শ্রীযুক্তা অন্নদাময়ী দেবী মহাশয়ার প্রেরণায় শ্রীযুক্ত পূর্ণচন্দ্র চক্রবর্তী মহাশয়ে ঐকান্তিক যত্ন—প্রচেষ্টায় এবং ভক্ত যাত্রীগণের অর্থানুকুল্যে এই স্নানমন্দির পুনঃনির্মিত হয় ১৩৪৫ সালে । হরিশচন্দ্র ব্রক্ষচারীর নিকট সম্রাট আকবরের আমলে দলিল পত্রও রহিয়াছে বলে জানা যায়।মন্দিরের বর্তমানে কোন জমিজমা নাই।
ভক্তদের অর্থায়নে প্রতি বছর পুষ্পরথ, স্নানযাত্রা, বড় রথযাত্রা, উল্টারথ ও পূজাপার্বণ, প্রভৃতি অনুষ্ঠানাদি হয়ে থাকে। বর্তমানে মন্দিরের কিছু উন্নয়ন হয়েছে। ভক্তদের অর্থায়নে এমন উন্নয়ন করা হচ্ছে বলে জানান শ্রী দিলীপ ব্রক্ষচারী ।
তিনি আরো জানান— এ মিন্দিরের সঠিক উন্নয়ন ও সেবাকার্য সম্পূর্ণ ভক্তদের অনুদানে প্ররিচালিত হচ্ছে। যদি সরকারি অনুদান পাওয়া যায় তবে আমাদের হরি নাম প্রচারে সহযোগীতা করা হবে বলে মনে করি। এতে দেশ জাতি ও সমাজের মঙ্গল হবে । বর্তমানে মুন্দিরের সেবায় আছেন তপন ব্রক্ষচারী । বিভিন্ন পূজায় দুরদুরান্ত থেকে ভক্তরা এখানে আসেন। পূজা অর্চনা করেন। ভক্তদের থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। রয়েছে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থাও ।