তেমনি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার গাঁড়াদহ ইউনিয়নের তালগাছী গ্রামের জাহানারা খাতুন বলেন, এলাকার শত শত নারী কুমড়ো বড়ি তৈরির কাজে এখন ব্যস্ত। শীত আসার সাথে সাথে কুমড়ো বড়ি তৈরির ব্যস্ততা বেড়ে যায়।
আরেক ব্যবসায়ী মনোয়ারা তিনি বলেন, আশ্বিন মাস থেকে ফাল্গুন এই ৬ মাস কুমড়ো বড়ি তৈরির ধুম পড়ে যায়। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা বাজারে বিক্রি করা হয়। শীতের চাহিদা থাকায় গ্রামগঞ্জের নারীরা বাড়তি আয়ের জন্য কুমড়ো বড়ি তৈরি করেছেন।
উপজেলার গাঁড়াদহ ইউনিয়নের তালগাছি গ্রামের জহুরুল বলেন, এক কেজি কুমড়ো বড়ি তৈরি করতে প্রায় ৮০ টাকার মতো খরচ হয়। আমরা সেই কুমড়ো বড়ি পাইকারি ওয়ালার কাছে বিক্রি করি প্রতি কেজি ১০০ টাকা। আর বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়।
আরেক ব্যবসায়ী মো. মোস্তফা হোসেন বলেন, এখানকার কুমড়ো বড়ি সারা বছরই তৈরি হয়। তবে শীতকালে কদর বেশি। কারণ, শীতের সময় রান্না করে খেতে বেশি মজা। বিশেষ করে দেশি মাছের সাথে। কুমড়ো বড়ি বানানো থেকে শুরু করে সব কাজই বাড়ির মেয়ে বা নারীরা করে থাকে।
জাহানারা খাতুন বলেন, কুমড়ো বড়ি বানাতে আগে অনেক কষ্ট হতো মাসকলাই পানিতে ভিজিয়ে রেখে চাল কুমড়ো দিয়ে পাটায় পিষে সেটা মিশ্রণ করে রোদে শুকিয়ে তৈরি হত কুমড়ো বড়ি। এখন আর আগের মত কষ্ট হয়না মাসকলাই মেশিনের নিয়ে মাড়াই করে চাল কুমড়ো মিশ্রণ করে রোদে শুকিয়ে তৈরি হয় কুমড়ো বড়ি।
কুমড়ো বড়ি তৈরির প্রধান উপকরণ মাসকলাইয়ের ডাল আর চাল কুমড়া আর সামান্য মসলা। স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি মাসকলাই ১০০ থেকে ১২০ টাকা আর চাল কুমড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।পাঁচ কেজি চাল কুমড়ার সাথে ২ কেজি মাসকলাইয়ের মিশ্রণে কুমড়ো বড়ি ভাল হয়। প্রথমে মাসকলাই রৌদ্রে শুকিয়ে যাতায় ভেঙে পরিষ্কার করে পানিতে ভিজিয়ে রেখে খোসা ছাড়িয়ে নেয়া হয়।
প্রায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা মাসকলাই পানিতে ভেজাতে হয়। তারপর মেশিনে বা পাটায় পিষে কুমড়ো বড়ির মিশ্রণ তৈরি করা হয়। এরপর ২টির মিশ্রণে কুমড়ো বড়ির উপকরণ তৈরি হয়। রৌদ্র উজ্জ্বল ফাঁকা স্থান, বাড়ির আঙ্গিনা, ছাদ বা খোলা জায়গায় ভোর থেকে বড়ি তৈরি করা শুরু হয়। পাতলা কাপড় বা টিনের উপর সারি সারি বড়ি রোদে রাখা হয় শুকানোর জন্য। কুমড়ো বড়ি বানানোর পর ২ থেকে ৩ দিন টানা রোদে শুকাতে হয়। সূর্যের আলো কম হলে ৩ থেকে ৪ দিন পর্যন্ত লাগে।
জাহানারা খাতুন বলেন, আমি ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে এই কুমড়ো বড়ি তৈরি করি। আমার বাড়ির চাহিদা মিটিয়ে জেলা উপজেলাসহ সারা বাংলাদেশে রপ্তানি করি। আমি কুমড়ো বড়ি বিক্রি করে আমার সংসার চালিয়ে যে টাকা আয় হতো সেই টাকা দিয়ে আমি তিন ছেলে মেয়েকে সুশিক্ষকায় শিক্ষত করেছি।
আমি কুমড়ো বড়ি বিক্রি করে উপজেলার তালগাছী বুকে ১২ শতাংশ জায়গা কিনে বাড়ি করেছি। গরুর খামার করেছি। আল্লাহর কৃপায় স্বামী ছেলেমেয়েকে নিয়ে আমি এখন পরিপূর্ণ সুখি।
স্থানীয়রা জানান, জাহানারা খাতুন একদম গরিব ছিলেন, তিনি হঠাৎ করে এই কুমড়ো বড়ি তৈরি করা কাজ শুরু করলো সেখান থেকেই তার ভাগ্য খুলে যায়। তিনি দীর্ঘ ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে কুমড়ো বড়ি তৈরি করে জেলা উপজেলায় রপ্তানি করেন। এবং তালগাছীর বুকে ১২ শতাংশ জায়গা কিনে বাড়ি করেছে। গরুর খামার করেছে। ছেলেমেয়েকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে এখন জাহানারা খাতুন পরিপূর্ণ সুখী। জাহানারা খাতুন এর পরিবর্তন দেখে এলাকার নারীরা এই কুমড়ো বড়ির পতি অগ্রসর হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান বলেন, জাহানারা খাতুন নামে তালগাছিতে বসবাস একজন নারী কুমড়ো বড়ির মাধ্যমে নিজের স্বাবলম্বী হয়েছে। আশা করি তার এই স্বাবলম্বী কার্যক্রম চলমান রাখবে। তার যদি সরকারি সহায়তা দরকার পরে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে।