নির্বাচনে ভরাডুবির পরও সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসন জাতীয় পার্টির দখলেই থাকছে। ইতোমধ্যে বিরোধী শিবিরের সামনের সারিতে প্রথম আসনটি দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের জন্য বরাদ্দ রেখে সংসদের অধিবেশন কক্ষের আসন বিন্যাস করা হয়েছে। বিরোধীদলীয় উপনেতা হচ্ছেন পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। আর দলটির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু হচ্ছেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পরামর্শ করে দু-তিন দিনের মধ্যে আসন বিন্যাস চূড়ান্ত করা হবে। ৩০ জানুয়ারি বসতে যাচ্ছে নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশন।
৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাত্র ১১টি আসনে জয়লাভ করে জাতীয় পার্টি। স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে জয়ী হয়ে সংসদে জায়গা করে নেন ৬২ জন। আর ২২৩টি আসনে জয়ী হয়ে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
বিগত সংসদ নির্বাচনগুলোর ইতিহাস বলছে, সংসদে বিরোধী দলে বসে দ্বিতীয় বৃহত্তম দলই। শুধু ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কোনো বিরোধীদলীয় নেতা ছিল না। তাই এবারের নির্বাচনের ফলাফলের পর সবচেয়ে বেশি আলোচিত প্রশ্ন ছিল, প্রধান বিরোধী দল হবে কে; স্বতন্ত্ররা জোটবদ্ধ হয়ে বিরোধী দলে বসবেন, না কি কম সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েও তৃতীয়বারের মতো জাতীয় পার্টিই বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে; না কি আবার ‘৭৩ ও ‘৯৬ এর মতো বিরোধী দলশূন্য থাকবে সংসদ?
কিন্তু সব প্রশ্নের অনেকটা সমাধান হয়ে গেলো স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের জোট গঠনে অনাগ্রহ প্রকাশে। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা জোট করে বিরোধী দলের আসনে বসতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাদের নেতা বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারেন। তবে ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ৫৯ জনই আওয়ামী লীগ নেতা। আর তারা বিরোধী দলে বসতে কোনো আগ্রহ দেখাননি।
জোটবদ্ধ হলে আনুপাতিক হারে সংরক্ষিত নারী আসনের মধ্যে ১০টি অবশ্য তারা পাবেন। এই বিতর্কের মধ্যেই ১৮ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে তাদের সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচন করে। দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে উপনেতা এবং মহাসচিব মো. মজিবুল চুন্নুকে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মনোনীত করার কথা জানানো হয়। এর ২ দিন পর বিষয়টি অবহিত করে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে চিঠি দেয় জাতীয় পার্টি।
অবশ্য গত সোমবারই জাতীয় পার্টির প্রধান বিরোধী দল হওয়ার বিষয়টি নিয়ে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছিলেন, ‘জাতীয় পার্টি আবারও সংসদের প্রধান বিরোধী দল হতে যাচ্ছে। স্বতন্ত্র হিসাবে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ নেতারা সংসদে স্বতন্ত্র হিসাবেই থাকবেন।’
প্রসঙ্গত, ভারতের সংসদে প্রধান বিরোধী দল হতে হলে কোনো দলের অন্তত ১০ শতাংশ আসনে জিতে আসতে হয়। তবে, বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী বিরোধী দল বলে কোনো কিছু না থাকলেও বিরোধীদলীয় নেতার বিষয়টি রয়েছে। কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী বিরোধী দলের নেতা কে হবেন, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার স্পিকারের। স্পিকার যাকে বিরোধী দলের নেতা হিসাবে স্বীকৃতি দেবেন, তিনি সংসদে প্রধান বিরোধী দলের নেতা হবেন।
সোমবার রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও রংপুর-৩ (সদর) আসনের সংসদ-সদস্য জিএম কাদের বলেছিলেন, দল হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পাওয়ায় জাতীয় পার্টিই প্রধান বিরোধী দল। ঘোষণা দেওয়া হোক বা না হোক জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে, নিয়ম অনুযায়ী।
আর সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, ৩০ জানুয়ারি অধিবেশনের আগেই এ বিষয়ে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করবেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এরপরই কার্যপ্রণালি বিধির প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তিনি তার সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন। সূত্র বলছে, ১১ আসন নিয়ে জাতীয় পার্টিই প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসতে যাচ্ছে আবারও।