ঢাকা , বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
ত্রৈমাসিক চলনবিলের সময় পত্রিকার প্রিন্ট,অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়া  জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

সোহাগ হত্যাকাণ্ডকে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ বলে প্রচার করছে ভারতীয় গণমাধ্যম

রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে সামনে ৯ জুলাই (বুধবার) সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘিরে ক্ষোভে ফুঁসছে বাংলাদেশ। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ব্যস্ত সড়কে শত শত মানুষের সামনে এক নিরস্ত্র ব্যক্তিকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতের নাম লাল চাঁদ সোহাগ—তিনি একজন বাংলাদেশি মুসলিম ব্যবসায়ী।

ঘাতকেরা ইট, সিমেন্টের ব্লক ও লোহার রড দিয়ে তার ওপর হামলা চালায়। হামলার সময় কয়েকজনকে লাশের ওপর দাঁড়িয়ে উল্লাস করতেও দেখা যায়। মধ্যযুগীয় এই বর্বরতা ঘিরে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।

পুলিশের তথ্যমতে, এই ঘটনায় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের অন্তত ১৯ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিএনপি ইতোমধ্যে অভিযুক্তদের মধ্যে চারজনকে বহিষ্কার করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি একটি রাজনৈতিক কিংবা ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে সংঘটিত পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

তবে ঘটনাটি ঘিরে ভারতীয় কিছু সংবাদমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে ইন্ডিয়া টুডে সোহাগকে ‘হিন্দু ব্যবসায়ী’ হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তারা প্রতিবেদনে হিন্দু সম্প্রদায়ের পুরোনো একটি বিক্ষোভের ছবিও ব্যবহার করেছে, যা এই ঘটনার সঙ্গে আদৌ সংশ্লিষ্ট নয়। বাস্তবে, নিহত সোহাগ মুসলিম ধর্মাবলম্বী ছিলেন এবং ঘটনাটির সঙ্গে সাম্প্রদায়িক কোনো টানাপড়েনের প্রমাণ মেলেনি।

এ ছাড়া WION ও নামস্তে তেলেঙ্গানাসহ একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমও এই হত্যাকাণ্ডকে সংখ্যালঘু নির্যাতনের রূপ দিয়ে সোহাগকে হিন্দু পরিচয়ে তুলে ধরেছে।

ভারতের হিন্দুস্তান টাইমস ও টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া সরাসরি ধর্মীয় পরিচয় না টানলেও, তাদের প্রতিবেদনে সোহাগ হত্যার সঙ্গে সংখ্যালঘু নিপীড়নের প্রসঙ্গ এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের একটি পরিসংখ্যান জুড়ে দেওয়া হয়েছে—যা এই ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে বাস্তবিক অর্থে কোনো সম্পর্ক রাখে না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে সংঘটিত একটি রাজনৈতিক সহিংসতাকে ভারতের কিছু গণমাধ্যম যে ধরনের সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছে, তা তথ্যবিকৃতি এবং দায়িত্বহীন সাংবাদিকতার উদাহরণ। এমন বিভ্রান্তিকর প্রচার কেবল দুই দেশের মানুষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি বাড়ায় না, বরং পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে—এ ধরনের অপপ্রচার থেকে বিরত থেকে সত্য ঘটনা তুলে ধরার জন্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন।

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ধারের নামে ঋণের ফাঁদ পা দিলেই মাথায় হাত কেরানীগঞ্জের গ্রামে গ্রামে ঋণজাল

সোহাগ হত্যাকাণ্ডকে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ বলে প্রচার করছে ভারতীয় গণমাধ্যম

আপলোড সময় : ১১:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে সামনে ৯ জুলাই (বুধবার) সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘিরে ক্ষোভে ফুঁসছে বাংলাদেশ। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ব্যস্ত সড়কে শত শত মানুষের সামনে এক নিরস্ত্র ব্যক্তিকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতের নাম লাল চাঁদ সোহাগ—তিনি একজন বাংলাদেশি মুসলিম ব্যবসায়ী।

ঘাতকেরা ইট, সিমেন্টের ব্লক ও লোহার রড দিয়ে তার ওপর হামলা চালায়। হামলার সময় কয়েকজনকে লাশের ওপর দাঁড়িয়ে উল্লাস করতেও দেখা যায়। মধ্যযুগীয় এই বর্বরতা ঘিরে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।

পুলিশের তথ্যমতে, এই ঘটনায় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের অন্তত ১৯ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিএনপি ইতোমধ্যে অভিযুক্তদের মধ্যে চারজনকে বহিষ্কার করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি একটি রাজনৈতিক কিংবা ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে সংঘটিত পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

তবে ঘটনাটি ঘিরে ভারতীয় কিছু সংবাদমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে ইন্ডিয়া টুডে সোহাগকে ‘হিন্দু ব্যবসায়ী’ হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তারা প্রতিবেদনে হিন্দু সম্প্রদায়ের পুরোনো একটি বিক্ষোভের ছবিও ব্যবহার করেছে, যা এই ঘটনার সঙ্গে আদৌ সংশ্লিষ্ট নয়। বাস্তবে, নিহত সোহাগ মুসলিম ধর্মাবলম্বী ছিলেন এবং ঘটনাটির সঙ্গে সাম্প্রদায়িক কোনো টানাপড়েনের প্রমাণ মেলেনি।

এ ছাড়া WION ও নামস্তে তেলেঙ্গানাসহ একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমও এই হত্যাকাণ্ডকে সংখ্যালঘু নির্যাতনের রূপ দিয়ে সোহাগকে হিন্দু পরিচয়ে তুলে ধরেছে।

ভারতের হিন্দুস্তান টাইমস ও টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া সরাসরি ধর্মীয় পরিচয় না টানলেও, তাদের প্রতিবেদনে সোহাগ হত্যার সঙ্গে সংখ্যালঘু নিপীড়নের প্রসঙ্গ এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের একটি পরিসংখ্যান জুড়ে দেওয়া হয়েছে—যা এই ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে বাস্তবিক অর্থে কোনো সম্পর্ক রাখে না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে সংঘটিত একটি রাজনৈতিক সহিংসতাকে ভারতের কিছু গণমাধ্যম যে ধরনের সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছে, তা তথ্যবিকৃতি এবং দায়িত্বহীন সাংবাদিকতার উদাহরণ। এমন বিভ্রান্তিকর প্রচার কেবল দুই দেশের মানুষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি বাড়ায় না, বরং পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে—এ ধরনের অপপ্রচার থেকে বিরত থেকে সত্য ঘটনা তুলে ধরার জন্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন।