অন্তর্বর্তী সরকারের ‘বেঁধে’ দেওয়া সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি ও বহুল আলোচিত গণভোট নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। এমন প্রেক্ষাপটে সরকারই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে। আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের বিষয়টি রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। রাজনৈতিক ‘অচলাবস্থা’ বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার। বৈঠকের পর এ ইস্যুতে সরকারের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা মিলতে পারে বলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি ও উত্তেজনার মধ্যে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর আজ দুপুরে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি নিউজ ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড সরাসরি সম্প্রচার করবে। গতকাল সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টেও এ তথ্য জানানো হয়। ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ঠিক কোন বিষয় উপস্থাপন করবেন, তা উল্লেখ করা হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ড. ইউনূস তার ভাষণে দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তগুলো জানাতে পারেন।
প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণে জুলাই সনদ ও গণভোট নিয়ে চূড়ান্ত কী কী সিদ্ধান্ত তুলে ধরতে যাচ্ছেন, তা নিয়ে দলগুলোর মধ্যে ও জনমনে চলছে নানান জল্পনা। বিএনপি সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজনের দাবি জানাচ্ছে, তবে জামায়াত এর আগেই গণভোট চায়। অন্যদিকে এনসিপির দাবি, মতভিন্নতা প্রকাশ করে বিএনপির দেওয়া নোট অব ডিসেন্ট ছাড়াই ঐকমত্য কমিশনের সব সুপারিশ বাস্তবায়ন। এমন প্রেক্ষাপটে সব পক্ষকে সন্তুষ্ট করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত আসতে যাচ্ছে বলে কালবেলাকে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র। তা হলো বিএনপির দাবি অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই হবে গণভোট, আর জামায়াতের চাওয়া অনুযায়ী পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে গঠন হবে সংসদের উচ্চকক্ষ। অন্যদিকে এনসিপির শর্ত মেনে নোট অব ডিসেন্ট ছাড়াই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি হবে।
এর আগে গত ৩ নভেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের সভা থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ ও গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতকে সমঝোতার আহ্বান জানিয়েছিল সরকার। এজন্য এক সপ্তাহ সময়ও দেওয়া হয়। কিন্তু সমঝোতায় পৌঁছতে পারেনি দলগুলো। সেদিন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, গণভোট কখন হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে, জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমতগুলো প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে জরুরি ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করে উপদেষ্টা পরিষদ। এ ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজস্ব উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে, সম্ভব হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। দলগুলো একমত হতে না পারলে সরকার নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
এরপর গত শনিবার রাজধানীতে ‘নির্বাচনী ইশতেহারে প্রযুক্তির ব্যবহার’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি ও গণভোট ইস্যুতে যদি রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নিতে না পারে, তাহলে অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। এরপর সবশেষ গত সোমবার সচিবালয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, দলগুলো মতৈক্যে পৌঁছতে না পারায় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকার নিজ থেকেই একটি সিদ্ধান্ত নেবে।
তিনি বলেন, ‘সরকার দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় দিয়েছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসেনি। তারা যেহেতু সাত দিনের মধ্যে আলোচনায় বসেনি, সে ক্ষেত্রে সরকার একটা সিদ্ধান্ত নেবে। আমি তো কাউকে বলতে শুনিনি যে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।’
এমন প্রেক্ষাপটে গত মঙ্গলবার আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের জানান, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তা পরবর্তী তিন-চার দিনের মধ্যে পরিষ্কারভাবে জানা যাবে।
দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিবের বক্তব্য থেকে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে যে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ ও গণভোট নিয়ে সরকারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে। খুব শিগগির এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। ফলে বিষয়টি নিয়ে আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচনা হবে। দলগুলো একমত হবে—এমন সিদ্ধান্তই সরকার নেবে বলে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে।
এদিকে, গতকাল বুধবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং ওই আদেশের ওপর গণভোট আয়োজন করাসহ পাঁচ দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনার সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থানের হুঁশিয়ারি দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ আন্দোলনরত ৮টি দল। তাদের হুঁশিয়ারির পর অন্তর্বর্তী সরকারও এ বিষয়ে বেশ চিন্তিত। একসঙ্গে বিএনপি-জামায়াত ও এনসিপিকে খুশি করতে সরকার দৃশ্যত টানাপোড়েনে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ এবং নির্বাচনের আগে নাকি নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজন করা হবে, তা নিয়ে দ্বন্দ্বে পড়েছে সরকার। তবে আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর বিষয়টি নিয়ে সরকারের অবস্থান সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা মিলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ লুৎফর রহমান হীরা
প্রধান কার্যালয়ঃ শরিফ সুপারমার্কেট হান্ডিয়াল,চাটমোহর, পাবনা।
ঢাকা অফিসঃ ১/জি,আদর্শ ছায়ানীড়,রিংরোড,শ্যামলী,আদাবর ঢাকা-১২০৭।
@2025l হান্ডিয়াল নিউজ২৪ ডটকম