সপ্তাহ দুয়েক বাদেই পবিত্র মাহে রমজান। সংযমের মাস। কিন্তু সিয়াম সাধনার পবিত্র এ মাসটি এলেই যেন বেশি সংযম হারান এদেশের ব্যবসায়ীরা। তাদের ইচ্ছেমতো দাম বেড়ে যায় নিত্যপণ্যের। ব্যতিক্রম চোখে পড়ছে না এবারও। রোজায় যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে, তার সবকিছুর দামেই আগুন লেগে গেছে ইতোমধ্যে। ছুঁতে গেলেই যেন পকেট পুড়ে যায় অবস্থা।
এরই মধ্যে আগামী রোববার পবিত্র শবে বরাতকে কেন্দ্র করে গরুর মাংসের দাম আরেক দফা বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর কোনও বাজারেই ৭৫০ টাকার নিচে মিলছে না গরুর মাংস।
তাল মিলিয়ে মুরগীর দামেও চলছে ডিজিট বাড়ানোর খেলা। একই বাজারে পাশাপাশি দোকানে ১০-২০ টাকার তারতম্য দেখা যাচ্ছে দামে। কোথাও ২০০ টাকা কেজির নিচে মিলছে না ব্রয়লার মুরগীর। শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর শেওড়াপাড়া বাজারে কেজি প্রতি দাম চাওয়া হচ্ছে ২১০-২৩০ টাকা। এছাড়া লেয়ার মুরগি ৩১০ টাকা, পাকিস্তানি মুরগি ৩০০ টাকা ও দেশি মুরগি ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে এ বাজারে।
দামের এই ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, মুরগির দাম বেশ কয়েকদিন ধরেই বেড়েছে। কেনা দাম বেশি পড়ায় বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
এদিকে মাছের বাজার চড়া অনেকদিন ধরেই। তালতলা মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি বড় রুই মাছ ৪০০-৪৫০ টাকা, মাঝারি রুই মাছ ৩০০-৩৫০ টাকা, ছোট কাতলা মাছ ৩০০-৩৫০ টাকা, বড় কাতলা মাছ ৪৫০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমনকি পাঙ্গাশ মাছের দামও হাঁকা হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকা।
এছাড়া আকার ভেদে ইলিশ মাছ ৭০০-১২০০ টাকা, সিলভারকার্প মাছ ২৫০-৩০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৫০০-৭০০ টাকা, আইড় মাছ ৬০০ টাকা, বড় কৈ মাছ ৬০০ টাকা, শিং মাছ ৮৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ছোট মাছের মধ্যে কাচকি মাছ ৪৫০ টাকা, মলা মাছ ৩০০ টাকা, পাবদা মাছ ৫০০-৬০০ টাকা, গলদা চিংড়ি আকারভেদে ৬৫০-৭৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
বেড়েছে সবজির দামও
মৌসুমের এই সময়ে সবজির বাজারে স্বস্তি আসার কথা থাকলেও এবার তা কিনতে গিয়েও হিমশিম খেতে হচ্ছে ক্রেতা সাধারণের।
শীতকালীন সবজির দাম কিছুটা কমলেও গ্রীষ্মকালীন সবজিগুলো ১০০ টাকার নিচে কিনতে পারছেন না ভোক্তারা।
শুক্রবার মিরপুরের কয়েকটি বাজার ঘুরে তুলনামূলক বিচারে দেখা যায়, প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকায়, একেকটি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, ব্রকলি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। এছাড়া মৌসুমের শেষেও এক কেজি গাজর কিনতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, খিরাই কিনতে ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও টমেটো কিনতে ৪০ থেকে ৮০ টাকা গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। প্রায় সব বাজারে আলু ও মুলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
এছাড়া গ্রীষ্মকালীন সবজি কচুরমুখী ১০০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ১৪০ টাকা, ঢেঁড়স ১২০ টাকা, বরবটি ১৪০ টাকায়, শসা ১০০ টাকা, প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৫০ টাকা, ধুন্দুল ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ঝিঙা ১০০ টাকা, পটল ১৪০ টাকা এবং সাজনে ডাঁটা ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
লাগাম টানা যাচ্ছে না পেঁয়াজের দরেও। দেশি পেঁয়াজ ১২০-১৩০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে রাজধানীর সব বাজারে। তাছাড়া রোজার মধ্যে আরেক দফা সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম দেখা যাবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেক ক্রেতা।
খেজুর এখন বিলাসী পণ্য
পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে সরকার সম্প্রতি চিনি ও খেজুরের আমদানি শুল্ক কমালেও বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। রোজায় সর্বসাধারণের ভোগ্যপণ্য খেজুর এখন বিক্রি হচ্ছে বিলাসী পণ্যের দরে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে রোজায় বিঘ্ন ঘটতে পারে চিনি ও খেজুর সরবরাহে। অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে দেশে উৎপাদিত লাল চিনির দাম খুচরা পর্যায়ে কেজি প্রতি ২৫ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন। তবে এ ঘোষণার প্রায় ৬ ঘণ্টা পর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বর্ধিত এ দাম প্রত্যাহার করে নেয় শিল্প মন্ত্রণালয়। ফলে আগের মতোই প্রতি কেজি দেশি খোলা চিনি ১৩২ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ১৪০ টাকায় মিলবে।
এ পরিস্থিতিতে এদিন রাজধানীর মৌলভীবাজারে এক অনুষ্ঠানে আসন্ন রমজানে চিনি ও খেজুরের স্বাভাবিক সরবরাহ পাওয়া নিয়ে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর পরিচালক আবু মোতালেব বলেন, ব্যাংকের সুদহার বেড়ে যাচ্ছে। সুদ না কমালে পণ্যমূল্য কখনোই কমবে না। তা ছাড়া ডলারের সংকটের কারণে ব্যাংক এলসি দিচ্ছে না। এতে আমদানি ব্যাহত হচ্ছে।
ডলারের দর ও শুল্ক বৃদ্ধির কারণে রোজায় খেজুর মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ফল আমদানিকারক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, খেজুরে কখনোই এত বেশি শুল্ক ছিল না। গত অর্থবছর থেকে খেজুরকে বিলাসী পণ্য হিসেবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। বর্তমানে ১২০ টাকার খেজুরে শুল্ক দিতে হচ্ছে ২০৮ টাকা। তাছাড়া গত বছর ডলারের রেট ছিল ১০০ টাকার কিছু বেশি। এখন ডলারের দর ১২০ টাকার বেশি।
তিনি বলেন, কাস্টমসে ১ হাজার ডলারের খেজুরের আমদানি মূল্য আড়াই হাজার ধরে শুল্কায়ন করা হচ্ছে। এতে অনেক বেশি শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। এর সুরাহা করতে হবে। তাঁর অভিযোগ, বন্দর থেকে আগে দু’দিনের মধ্যে খেজুর খালাস করা যেত। এখন ৮ থেকে ১০ দিন লাগে। তাতে চট্টগ্রাম বন্দরে পাঁচ শতাধিক খেজুর বোঝাই কনটেইনার আটকে আছে। দ্রুত খালাস না করলে সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন হতে পারে।