এছাড়া রোপনকৃত রসুনে এক সপ্তাহের মধ্যেই চারা বের হয়। এজন্য বাড়ছে কৃষক পরিবারগুলোতে ব্যস্ততা। এদিকে কৃষকরা বলছেন, রসুনের ন্যায্য মুল্য না পেলেও চলতি বছরে কৃষি উপকরনের দাম বিগত বছর গুলোর তুলনায় বেড়েছে কয়েকগুন। ফলে চলতি মৌসুমে রসুন চাষে প্রতি বিঘায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে তাড়াশ উপজেলায় রসুন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৭৫ হেক্টর জমি। এখন পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৩০৫ হেক্টর। এছাড়া বিনাহালে ২৭০ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদ হয়েছে।
তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের চার এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, রসুন চাষকে ঘিরে কর্মমুখর হয়ে উঠেছে কৃষক পরিবারগুলো। কৃষাণী, কিংবা তাদের নিয়োগ করা মহিলারা রসুন থেকে কোয়া ছড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বাদ যাচ্ছে না বাড়ির কিশোর-কিশোরীরাও। অধিকাংশ পরিবার গ্রামের মহিলাদের রসুন ভাঙ্গার কাজে নিয়োগ করেছেন। এজন্য প্রতিমণ রসুন ভাঙার মুজুরি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা দিতে হচ্ছে। একমণ রসুন ভাংতে সময় লাগে দুই দিন। পাশাপাশি চলছে জমি প্রস্তুতসহ রসুন রোপনের কর্মযজ্ঞ।
কৃষক মিঠু আহমেদ জানান, কৃষি উপকরণ বীজ, সার-কীট নাশক, সেচ, নিড়ানী, শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধির কারনে গত বছরের তুলনায় এবছরে রসুন চাষে প্রতি বিঘায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। মাগুরা বিনোদ ইউনিয়নের চরহামকুড়িয়া গ্রামের কৃষক ফরিদুল ইসলাম জানান, এবছর ৫ বিঘা জমিতে রসুন চাষ করেছেন তিনি। বিঘা প্রতি বীজ, সার-কীটনাশক ও সেচ বাবদ খরচ হয়েছে ৩০হাজার টাকা। এর পরে রসুন রোপণ ও নিড়ানীসহ শ্রমিক খরচ হবে ৯ হাজার টাকা। এতে তার বিঘা প্রতি মোট ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হবে।
বিন্নাবাড়ি গ্রামের কৃষক ইমান আলী জানান, তিনি চলতি বছরে ৪ বিঘা জমিতে রসুন আবাদ করেছেন। রসুনে চাষে খরচ বাড়ায় গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে প্রতি বিঘায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে।
জানা যায়, চলনবিল অঞ্চলে বিগত দুই দশক ধরে বিনাহালে রসুনের আবাদ করে কৃষকেরা অধিক লাভবান হন। তার পথ ধরেই বিনাহালে রসুনচাষ পদ্ধতি ছড়িয়ে পড়ে চলনবিলের তাড়াশ, গুরুদাসপুর, সিংড়া, বড়াইগ্রাম, চাটমোহরসহ আরো অনেক উপজেলায়। বর্তমানে এই পদ্ধতিতে রসুন চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
চাষ পদ্ধতি, আমন কাটার এক দুই দিনের মধ্যে ধানের খড় (লারা) তুলে জমি প্রস্তুত করতে হয়। এরপর প্রয়োজনীয় সার-কীট নাশক দিয়ে কাঁদার ওপরে রসুনের একটি করে কোয়া রোপন করতে হয়। রোপনকৃত রসুনের খেত ধানের খড় বা কচুরী পানা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। ঢেকে দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যই রসুনের চারা গজায়।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রতিবিঘা জমিতে ৩০-৪০ মন হারে রসুন উৎপাদন হয়। খরচ বাদ দিয়েও অনেক লাভবান হন কৃষকরা। কারন একই জমিতে তরমুজ ও বাঙ্গী আবাদ করে। এজন্য বিনাহালে রসুনের আবাদ করে চলনবিলের অধিকাংশ কৃষকরা।