প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাস করেও অদম্য ইচ্ছা শক্তি নিয়ে বাগানে বিভিন্ন ফলের চাষ করে সফলতার পাশাপাশি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ভারাহুত গ্রামের রবিউল ইসলাম নামে এক যুবক। তার সফলতায় এখন অনেক বেকার যুবক মিশ্র ফল বাগান করার দিকে ঝুঁকছেন।
রবিউলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুরুটা বারোমাসি তরমুজ দিয়ে তার বাগান শুরু করেন পরে একে একে কুল, আম, জামরুল, কমলা, কদবেল, লেবু ও লিচুসহ ৪৬ প্রকারের ফলের বাগান করে সফলতা পেয়েছেন রবিউল। এ মিশ্র ফলের বাগান থেকে লাখ লাখ টাকার ফল বিক্রি করে এলাকায় সফল বাগানী ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছেন।
পাঁচবিবি উপজেলার ভারাহুত গ্রামের আব্দুল আলীমের বড় ছেলে রবিউল ইসলাম (৩৫)। ২০০৯ সালে ভালোবেসে বিয়ে করার কারণে প্রথম দিকে তার পরিবার মেনে না নেওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েন রবিউল।
জীবিকার তাগিদে ঈশ্বরদীতে একটি দোকানে কাজ করার পর তার দাদা ডেকে এনে বাড়ির এলাকায় একটি মুদি দোকান করে দেন। এক সময় দুর্বৃত্তরা সেই দোকান আগুনে পুড়িয়ে দিলে অথৈই জলে ভাসতে থাকা রবিউল নানা কাজ করে কোনো মতে খেয়ে না খেয়ে চালাতেন সংসার।
এরমধ্যে ২০১৯ সালে ‘এসো’ নামে স্থানীয় একটি বেরসকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণসহ বীজ, মালচিং ও উপকরণ সহায়তা নিয়ে ১৪ শতাংশ জমিতে তরমুজ চাষ করেন।
তরমুজের সফলতা পেয়ে রবিউলকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। নয় মাসে তিন বারে সাড়ে ৩ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেন রবিউল। ২০২০ সালে বর্গা নেওয়া আরও দুই বিঘা জমিতে তরমুজের চাষ করেন রবিউল। সেখানে সব খরচ বাদে প্রায় ৮ লাখ টাকা লাভ থাকে। পরের বছরও তরমুজ চাষ করে লাভবান হন রবিউল।
২০২১ সালে তিন বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন বরইয়ের বাগান পাশাপাশি আরও তিন বিঘা জমিতে বিভিন্ন ফলের চাষ শুরু করেন। বাগানে রয়েছে বল সুন্দরী , ভারত সুন্দরী, কাশ্মীরি আপেল কুল, সিডলেস লেবু, টক-মিষ্টি বাউকুল।
এ ছাড়াও রয়েছে দার্জিলিং কমলা, চায়না কমলা, বারি-১ জাতের মাল্টা, কাটিমন আম, ব্যানানা ম্যাংঙ্গো, বারি-৪ আম, গৌড়মতি আম, ব্ল্যাক ম্যাংঙ্গো, আম্র পালি, সূর্য ডিম, থাই সফেদা, মিষ্টি জলপাই, মিষ্টি তেঁতুল, রাম বুটান, লিচু, জামরুল, কদবেল, জামসহ ৪৬ প্রকারের ফল। বাগানে বিভিন্ন গাছে দেখা গেল নানান ফলের সমাহার।
বিষমুক্ত ভাবে ফলের চাষ করতে পোকা দমনের জন্য বাগানে ফেরোমন ফাঁদ ও কালার টেপ ব্যবহার করা হয়েছে। এক সময় নিজে কর্মচারী হয়ে কাজ করলেও এখন তার বাগানে কাজ করে ৫/৬ জন শ্রমিক।
কথা হয় বাগানের শ্রমিক মিন্টু দেবনাথ, সোহাগ ও সিরাজুলের সঙ্গে। তারা মাসে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা করে বেতন পান, যা দিয়ে সংসারের খরচ চালান।
রবিউল জানান, ২০২২ সালে তিন লাখ টাকার শুধু বরই বিক্রি করেন। ইতোমধ্যে কাটামন জাতের আম ও পেয়ারা এক লাখ টাকা বিক্রি হলেও বাগানে থাকা ফল আরও পাঁচ লাখ টাকা বিক্রি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন রবিউল।
তিনি আরও বলেন, জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে বাগান থেকে ফল কিনে নিয়ে যায়।
রবিউলের সাফল্য দেখে স্থানীয় যুবক মিলন হোসেন ১৫ কাঠা জমিতে পেয়ারা ও বরইয়ের বাগান গড়ে তুলেছেন। ইতোমধ্যে ২৫ হাজার টাকার বরই বিক্রি হলেও আরও লাখ টাকার বরই ও পেয়ারা বিক্রি করার আশা প্রকাশ করেন মিলন।
রবিউল ইসলামের স্ত্রী মাছুরা ইসলাম সখি জানান, স্বামীর সফলতায় আগের দিনের সকল কষ্ট ভুলে গেছি। দূরদূরান্ত থেকে রবিউলের কাছে মিশ্র বাগান করার পরামর্শ নিতে আসেন অনেকেই। এতে খুব ভাল লাগে।
এ বিষয়ে পাঁচবিবি উপজেলা কৃষি অফিসার লুৎফর রহমান বলেন, প্রথমে তরমুজ চাষ করলেও বর্তমানে রবিউল বিভিন্ন জাতের ফল বাগান করে সফলতা পেয়েছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।