ঢাকা , বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
ত্রৈমাসিক চলনবিলের সময় পত্রিকার প্রিন্ট,অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়া  জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

মা-বাবা জানতেন না, পাইলট তৌকির আর নেই

ঢাকার উদ্দেশে যখন বিমানে উঠেছিলেন, তখনো জানতেন না তাদের স্নেহের সন্তানটি আর নেই। ভেবেছিলেন, গুরুতর আহত তৌকির ইসলাম সাগর চিকিৎসাধীন অবস্থায় লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে। অথচ এর মধ্যেই তার নিথর দেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে—অন্য এক বিমানে।

সোমবার (২১ জুলাই) বিকেল ৫টা ১৮ মিনিটে রাজশাহীর হযরত শাহ মখদুম বিমানবন্দর থেকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন বিমানবাহিনীর বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ বিমানের নিহত পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের মা-বাবা। তাদের সঙ্গে ছিলেন তৌকিরের নববিবাহিত স্ত্রী, ছোট বোন সৃষ্টি খাতুন ও তার স্বামী চিকিৎসক তুহিন ইসলাম।

তবে তখনো মা সালেহা খাতুন ও বাবা তোহরুল ইসলামের জানা ছিল না, ঢাকার আকাশে তাদের স্বপ্নের সন্তান ভেঙে পড়েছেন। জানতেন না, তাদের চোখের মণি, তাদের গর্বের তৌকির আর ফিরে আসবেন না।

বিষয়টি নিশ্চিত করে গাড়িচালক আলী হাসান জানান, ঢাকায় রওনা হওয়ার আগে পরিবারের কাউকে তৌকিরের মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি। হৃদয়বিদারক এমন খবরে পরিবারের মানসিক অবস্থা কী হবে, সেটিই ছিল আশঙ্কার বিষয়।

রাজশাহীর উপশহরের তিন নম্বর সেক্টরের ‘আশ্রয়’ নামে ভাড়া বাসায় তখন নেমেছে শোকের ছায়া। চারদিকে শুধু কান্নার শব্দ। তৌকিরের চাচাতো মামা রফিকুল ইসলাম আর গাড়িচালক আলী হাসান ছিলেন বাড়িতে। দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভিড় জমায় স্বজন ও প্রতিবেশীরা।

বাড়ির মালিক আতিকুল ইসলাম জানান, সোমবার দুপুরে দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লেও সতর্কতার সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের কিছু জানানো হয়নি।

‘তৌকিরের মা-বাবা ভাবছিলেন, ছেলে হাসপাতালে ভর্তি, আমরা দোয়া চাইছি। অথচ তার আগেই সাগর চিরতরে চোখ বুজেছে’—বলেন তিনি।

তৌকির ইসলামের বড় চাচা মতিউর রহমান জানান, গত বছর তার বিয়ে হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন তারা। তৌকিরের স্ত্রী বর্তমানে ঢাকার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করছেন।

সোমবার দুপুর ১টার পর রাজধানীর উত্তরায় দুর্ঘটনায় পড়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান। বিমানটি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে গিয়ে পড়ে এবং বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে বিমান ও স্কুল ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। যে ভবনে এটি বিধ্বস্ত হয় সেখানে বহু স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থী ছিল। যাদের বেশিরভাগই হতাহত হয়।

মর্মান্তিক এ ঘটনায় শোক জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ধারের নামে ঋণের ফাঁদ পা দিলেই মাথায় হাত কেরানীগঞ্জের গ্রামে গ্রামে ঋণজাল

মা-বাবা জানতেন না, পাইলট তৌকির আর নেই

আপলোড সময় : ১১:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫

ঢাকার উদ্দেশে যখন বিমানে উঠেছিলেন, তখনো জানতেন না তাদের স্নেহের সন্তানটি আর নেই। ভেবেছিলেন, গুরুতর আহত তৌকির ইসলাম সাগর চিকিৎসাধীন অবস্থায় লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে। অথচ এর মধ্যেই তার নিথর দেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে—অন্য এক বিমানে।

সোমবার (২১ জুলাই) বিকেল ৫টা ১৮ মিনিটে রাজশাহীর হযরত শাহ মখদুম বিমানবন্দর থেকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন বিমানবাহিনীর বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ বিমানের নিহত পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের মা-বাবা। তাদের সঙ্গে ছিলেন তৌকিরের নববিবাহিত স্ত্রী, ছোট বোন সৃষ্টি খাতুন ও তার স্বামী চিকিৎসক তুহিন ইসলাম।

তবে তখনো মা সালেহা খাতুন ও বাবা তোহরুল ইসলামের জানা ছিল না, ঢাকার আকাশে তাদের স্বপ্নের সন্তান ভেঙে পড়েছেন। জানতেন না, তাদের চোখের মণি, তাদের গর্বের তৌকির আর ফিরে আসবেন না।

বিষয়টি নিশ্চিত করে গাড়িচালক আলী হাসান জানান, ঢাকায় রওনা হওয়ার আগে পরিবারের কাউকে তৌকিরের মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি। হৃদয়বিদারক এমন খবরে পরিবারের মানসিক অবস্থা কী হবে, সেটিই ছিল আশঙ্কার বিষয়।

রাজশাহীর উপশহরের তিন নম্বর সেক্টরের ‘আশ্রয়’ নামে ভাড়া বাসায় তখন নেমেছে শোকের ছায়া। চারদিকে শুধু কান্নার শব্দ। তৌকিরের চাচাতো মামা রফিকুল ইসলাম আর গাড়িচালক আলী হাসান ছিলেন বাড়িতে। দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভিড় জমায় স্বজন ও প্রতিবেশীরা।

বাড়ির মালিক আতিকুল ইসলাম জানান, সোমবার দুপুরে দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লেও সতর্কতার সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের কিছু জানানো হয়নি।

‘তৌকিরের মা-বাবা ভাবছিলেন, ছেলে হাসপাতালে ভর্তি, আমরা দোয়া চাইছি। অথচ তার আগেই সাগর চিরতরে চোখ বুজেছে’—বলেন তিনি।

তৌকির ইসলামের বড় চাচা মতিউর রহমান জানান, গত বছর তার বিয়ে হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন তারা। তৌকিরের স্ত্রী বর্তমানে ঢাকার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করছেন।

সোমবার দুপুর ১টার পর রাজধানীর উত্তরায় দুর্ঘটনায় পড়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান। বিমানটি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে গিয়ে পড়ে এবং বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে বিমান ও স্কুল ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। যে ভবনে এটি বিধ্বস্ত হয় সেখানে বহু স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থী ছিল। যাদের বেশিরভাগই হতাহত হয়।

মর্মান্তিক এ ঘটনায় শোক জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।