ঢাকা , শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
ত্রৈমাসিক চলনবিলের সময় পত্রিকার প্রিন্ট,অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়া  জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রথমবারের মতো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি খালাস

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় খালাস পেয়েছেন জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি আপিল বিভাগের রায়ে খালাস পেলেন।

মঙ্গলবার (২৭ মে) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে এ রায় দেন।

আদালতে জামায়াত নেতা আজহারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন।

রায় ঘোষণার পর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আজকের এ রায়ের জন্য আমরা সর্বপ্রথম আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। এখন থেকে এটিএম আজহারুল ইসলাম নির্দোষ।

তিনি আরও বলেন, এ রায়ের মাধ্যমে সত্য জয়ী এবং মিথ্যা পরাজিত হয়েছে। জামায়াত ও বিএনপির শীর্ষস্থানীয় ছয়জন নেতার মৃত্যদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। পাঁচজন নেতা কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। দুনিয়ার ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন নির্যাতন। এটিএম আজহার সৌভাগ্যবান…।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (০৮ মে) সকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের আপিলের ওপর দ্বিতীয় দিনের শুনানি শুরু হয়। মঙ্গলবার (০৬ মে) হয় প্রথম দিনের শুনানি।

আইনজীবী শিশির মনির বলেন, যে যুক্তিতর্ক তারা তুলে ধরেছেন তাতে খালাস পাবেন এই জামায়াত নেতা। এর আগে গত ৮ মে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের এ দিন ধার্য করেছিলেন আপিল বিভাগ।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা-হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতন ও গুরুতর জখম এবং বাড়িঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মতো নয় ধরনের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে।

২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ে দুই নম্বর, তিন নম্বর এবং চার নম্বর অভিযোগে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পান জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আজহারুল ইসলাম।

এ ছাড়া পাঁচ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অমানবিক অপরাধের দায়ে ২৫ বছর ও ছয় নম্বর অভিযোগে নির্যাতনের দায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে শুনানির পর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। আপিল বিভাগের রায়ে ২, ৩, ৪ (সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে) ও ছয় নম্বর অভিযোগের দণ্ড বহাল রাখা হয়। আর পাঁচ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়।

২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। ওই রায়ের রিভিউ চেয়ে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট আবেদন করেছিলেন এটিএম আজহারুল ইসলাম। ২৩ পৃষ্ঠার পুনর্বিবেচনার এ আবেদনে মোট ১৪টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়।

ওই পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষে ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে এটিএম আজহারুল ইসলামকে আপিলের অনুমতি দেন। এরপর তিনি আপিল করেন।

এদিকে রায়ের পর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। মঙ্গলবার (২৭ মে) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে তিনি লিখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ।

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ধারের নামে ঋণের ফাঁদ পা দিলেই মাথায় হাত কেরানীগঞ্জের গ্রামে গ্রামে ঋণজাল

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রথমবারের মতো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি খালাস

আপলোড সময় : ০৫:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় খালাস পেয়েছেন জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি আপিল বিভাগের রায়ে খালাস পেলেন।

মঙ্গলবার (২৭ মে) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে এ রায় দেন।

আদালতে জামায়াত নেতা আজহারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন।

রায় ঘোষণার পর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আজকের এ রায়ের জন্য আমরা সর্বপ্রথম আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। এখন থেকে এটিএম আজহারুল ইসলাম নির্দোষ।

তিনি আরও বলেন, এ রায়ের মাধ্যমে সত্য জয়ী এবং মিথ্যা পরাজিত হয়েছে। জামায়াত ও বিএনপির শীর্ষস্থানীয় ছয়জন নেতার মৃত্যদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। পাঁচজন নেতা কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। দুনিয়ার ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন নির্যাতন। এটিএম আজহার সৌভাগ্যবান…।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (০৮ মে) সকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের আপিলের ওপর দ্বিতীয় দিনের শুনানি শুরু হয়। মঙ্গলবার (০৬ মে) হয় প্রথম দিনের শুনানি।

আইনজীবী শিশির মনির বলেন, যে যুক্তিতর্ক তারা তুলে ধরেছেন তাতে খালাস পাবেন এই জামায়াত নেতা। এর আগে গত ৮ মে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের এ দিন ধার্য করেছিলেন আপিল বিভাগ।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা-হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতন ও গুরুতর জখম এবং বাড়িঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মতো নয় ধরনের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে।

২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ে দুই নম্বর, তিন নম্বর এবং চার নম্বর অভিযোগে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পান জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আজহারুল ইসলাম।

এ ছাড়া পাঁচ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অমানবিক অপরাধের দায়ে ২৫ বছর ও ছয় নম্বর অভিযোগে নির্যাতনের দায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে শুনানির পর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। আপিল বিভাগের রায়ে ২, ৩, ৪ (সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে) ও ছয় নম্বর অভিযোগের দণ্ড বহাল রাখা হয়। আর পাঁচ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়।

২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। ওই রায়ের রিভিউ চেয়ে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট আবেদন করেছিলেন এটিএম আজহারুল ইসলাম। ২৩ পৃষ্ঠার পুনর্বিবেচনার এ আবেদনে মোট ১৪টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়।

ওই পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষে ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে এটিএম আজহারুল ইসলামকে আপিলের অনুমতি দেন। এরপর তিনি আপিল করেন।

এদিকে রায়ের পর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। মঙ্গলবার (২৭ মে) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে তিনি লিখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ।