চুয়াডাঙ্গায় খাদ্যগুদামে চালান নিয়ে আসা গম ভর্তি ট্রাকে মিলেছে বালুর বস্তা আর পাথর। ইতোমধ্যে ঘটনাটি তদন্তে আলমডাঙ্গা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল হামিদকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে তদন্ত কমিটিকে।
রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা জেলা খাদ্যগুদামে ট্রাক থেকে গমের বস্তা নামানোর সময় বালুর বস্তার সন্ধান পাওয়া যায়। এ সময় মিলেছে ইট ও সিমেন্টের জমানো পাথর। ওই ঘটনায় পরস্পর বিরোধী কথা বলছেন ট্রাকচালক ও খাদ্য কর্মকর্তা।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনার সরকার এন্টারপ্রাইজ, জোনাকি এন্টারপ্রাইজ ও সানরাইজ এন্টারপ্রাইজের পরিবহন ঠিকাদারের মাধ্যমে চুক্তি অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গা খাদ্যগুদামে মোট ৩০০ টন গম পাঠানোর কথা ছিল। গত শুক্রবার গমের প্রথম চালানে ১০০ মেট্রিক টন আসে। রোববার ভোরে দ্বিতীয় চালানের ১০০ মেট্রিক টন গম চুয়াডাঙ্গা খাদ্যগুদামে আসে। গমের বস্তা নামানোর সময় একটি ট্রাকে বালুভর্তি সাতটি বস্তা পাওয়া যায়। পরে একে একে সন্ধান মেলে বালুবোঝাই ২৮টি বস্তার।
এদিকে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ওই ছয় ট্রাকের চালক ও সহকারী। তাদের দাবি, রাস্তার মধ্যে কোথাও মালামাল নামানো-ওঠানোর ঘটনা ঘটেনি। খুলনা থেকে ট্রাক নিয়ে সরাসরি চুয়াডাঙ্গায় এসেছেন তারা।
ট্রাকচালক রাব্বী হোসেন ও সহকারী মেহেদী হাসান জানান, খুলনায় চালান অনুযায়ী গমের বস্তা ট্রাকে তোলা হয়। এরপর ট্রাক সরাসরি চুয়াডাঙ্গায় নিয়ে এসেছি। ইট-পাথর বা বালু কীভাবে ট্রাকে উঠেছে তা আমরা জানি না।
চুয়াডাঙ্গা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, সরকারি বিভিন্ন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৩০০ টন গম চুয়াডাঙ্গায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই চালানে ১০০ টন গম নিয়ে খুলনা থেকে ভোর রাতে ছয়টি ট্রাক এসে পৌঁছায় চুয়াডাঙ্গা খাদ্য গুদামে। দুপুরে ট্রাক থেকে গমের বস্তা নামানোর সময় প্রথমে একটি ট্রাকে পাওয়া যায় ছয়টি বালুর বস্তা। বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় প্রতিটি ট্রাক তল্লাশি করে খুঁজে বের করা হয় ২৮টি বালুর বস্তা। পাওয়া যায় চারটি বড় পাথরের টুকরো। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাক থেকে গম চুরি করে ওজন ঠিক রাখতে বালু আর পাথর দিয়ে তা সমন্বয় করার চেষ্টা করা হয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক একেএম শহীদুল ইসলাম জানান, খুলনার চার নম্বর ঘাট থেকে ট্রাকগুলোতে গম লোড হয়েছিল। সেখান থেকে বালুর বস্তা ট্রাকে তোলার কোনো সুযোগ নেই। রাস্তার মধ্যে এমন কোনো কারসাজি হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছি। ঘটনাটি তদন্তে আলমডাঙ্গা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আব্দুল হামিদকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কর্ম দিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম এবং জেলা কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক সানজিদা বানু। যদি তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হয় তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।