ঢাকা , শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
ত্রৈমাসিক চলনবিলের সময় পত্রিকার প্রিন্ট,অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়া  জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

বাংলাদেশ-জাপান অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি চলতি বছর

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে এ বছরই দুই দেশ একটি অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) সই করবে, এমন ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা।

শুক্রবার (৩০ মে) টোকিওতে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই নেতার মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এই প্রতিশ্রুতি ছাড়াও দুই দেশের মধ্যকার সামগ্রিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয় এবং উভয় নেতা কৌশলগত অংশীদারত্বের প্রতি প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

বাংলাদেশকে দীর্ঘদিনের বন্ধু আখ্যা দিয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবা বলেন, ‘গণতান্ত্রিক উত্তরণে জাপান সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে।

তিনি অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, ‘তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি নতুন যুগে প্রবেশ করবে।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের গুরুত্ব তুলে ধরে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রচেষ্টায় দুই দেশ এ বছরের শেষ নাগাদ একটি অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি সম্পন্ন করবে।

প্রধান উপদেষ্টা গত ১০ মাসে বাংলাদেশের প্রতি জাপানের অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য প্রধানমন্ত্রী ইশিবাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কর্মসূচিতে জাপানের সক্রিয় সহযোগিতা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বাংলাদেশের ‘মুক্ত, উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক’ ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশনের প্রতি জোর দিয়ে বলেন, ‘সামুদ্রিক নিরাপত্তা, নৌ চলাচলের স্বাধীনতা, সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার, উন্নত সংযোগব্যবস্থা এবং আন্তঃদেশীয় সংগঠিত অপরাধ মোকাবিলায় আমরা জাপানের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী।

প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করে বলেন, সম্প্রতি উচ্চ পর্যায়ের সফর ও আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।

২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের পর কমপক্ষে তিন বছরের জন্য জাপানের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের অনুরোধ জানান তিনি। একই সঙ্গে মাতারবাড়িতে স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল এবং মহেশখালীতে এলপিজি আমদানি টার্মিনাল নির্মাণে জাপানের সহায়তা কামনা করেন।

বৈঠকে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ককে ছয় লেনে উন্নীতকরণ, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক উন্নয়ন এবং মেঘনা-গোমতী নদীর ওপর নতুন চার লেনের সেতু নির্মাণে সহজ শর্তে ঋণের জন্য জাপানের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ বাড়াতে, বিশেষ করে অটোমোবাইল, বৈদ্যুতিক যানবাহন, হালকা যন্ত্রপাতি, উচ্চ প্রযুক্তির ইলেকট্রনিকস ও সৌর শক্তি খাতে, জাপানি নির্মাতাদের উৎসাহিত করতে ইশিবার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি জাপানে দক্ষ বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ এবং ‘বাংলাদেশ-জাপান স্কিলড ওয়ার্কফোর্স পার্টনারশিপ প্রোগ্রাম’ চালুরও প্রস্তাব দেন।

শিক্ষাক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে তিনি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির সংখ্যা বৃদ্ধি, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং প্রশিক্ষকদের জাপানে শিক্ষার সুযোগের অনুরোধ জানান।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং একটি সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে টোকিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহায়তা করবে।

বৈঠকে আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমাদের সরকার প্রতিবেশী সব দেশের সঙ্গে সর্বোত্তম সম্পর্ক বজায় রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ। রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে জাপানের আরও সক্রিয় ভূমিকা কামনা করেন প্রধান উপদেষ্টা।

প্রায় ৩৮ বছর আগে যমুনা বহুমুখী সেতুর উদ্বোধনের সময় বাংলাদেশ সফরের স্মৃতিচারণা করে প্রধানমন্ত্রী ইশিবা বলেন, বাংলাদেশ ও এর জনগণের প্রতি জাপানের গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে।

তিনি পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আগ্রহও প্রকাশ করেন।

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ধারের নামে ঋণের ফাঁদ পা দিলেই মাথায় হাত কেরানীগঞ্জের গ্রামে গ্রামে ঋণজাল

বাংলাদেশ-জাপান অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি চলতি বছর

আপলোড সময় : ১০:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫

বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে এ বছরই দুই দেশ একটি অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) সই করবে, এমন ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা।

শুক্রবার (৩০ মে) টোকিওতে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই নেতার মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এই প্রতিশ্রুতি ছাড়াও দুই দেশের মধ্যকার সামগ্রিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয় এবং উভয় নেতা কৌশলগত অংশীদারত্বের প্রতি প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

বাংলাদেশকে দীর্ঘদিনের বন্ধু আখ্যা দিয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবা বলেন, ‘গণতান্ত্রিক উত্তরণে জাপান সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে।

তিনি অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, ‘তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি নতুন যুগে প্রবেশ করবে।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের গুরুত্ব তুলে ধরে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রচেষ্টায় দুই দেশ এ বছরের শেষ নাগাদ একটি অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি সম্পন্ন করবে।

প্রধান উপদেষ্টা গত ১০ মাসে বাংলাদেশের প্রতি জাপানের অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য প্রধানমন্ত্রী ইশিবাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কর্মসূচিতে জাপানের সক্রিয় সহযোগিতা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বাংলাদেশের ‘মুক্ত, উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক’ ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশনের প্রতি জোর দিয়ে বলেন, ‘সামুদ্রিক নিরাপত্তা, নৌ চলাচলের স্বাধীনতা, সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার, উন্নত সংযোগব্যবস্থা এবং আন্তঃদেশীয় সংগঠিত অপরাধ মোকাবিলায় আমরা জাপানের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী।

প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করে বলেন, সম্প্রতি উচ্চ পর্যায়ের সফর ও আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।

২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের পর কমপক্ষে তিন বছরের জন্য জাপানের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের অনুরোধ জানান তিনি। একই সঙ্গে মাতারবাড়িতে স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল এবং মহেশখালীতে এলপিজি আমদানি টার্মিনাল নির্মাণে জাপানের সহায়তা কামনা করেন।

বৈঠকে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ককে ছয় লেনে উন্নীতকরণ, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক উন্নয়ন এবং মেঘনা-গোমতী নদীর ওপর নতুন চার লেনের সেতু নির্মাণে সহজ শর্তে ঋণের জন্য জাপানের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ বাড়াতে, বিশেষ করে অটোমোবাইল, বৈদ্যুতিক যানবাহন, হালকা যন্ত্রপাতি, উচ্চ প্রযুক্তির ইলেকট্রনিকস ও সৌর শক্তি খাতে, জাপানি নির্মাতাদের উৎসাহিত করতে ইশিবার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি জাপানে দক্ষ বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ এবং ‘বাংলাদেশ-জাপান স্কিলড ওয়ার্কফোর্স পার্টনারশিপ প্রোগ্রাম’ চালুরও প্রস্তাব দেন।

শিক্ষাক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে তিনি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির সংখ্যা বৃদ্ধি, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং প্রশিক্ষকদের জাপানে শিক্ষার সুযোগের অনুরোধ জানান।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং একটি সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে টোকিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহায়তা করবে।

বৈঠকে আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমাদের সরকার প্রতিবেশী সব দেশের সঙ্গে সর্বোত্তম সম্পর্ক বজায় রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ। রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে জাপানের আরও সক্রিয় ভূমিকা কামনা করেন প্রধান উপদেষ্টা।

প্রায় ৩৮ বছর আগে যমুনা বহুমুখী সেতুর উদ্বোধনের সময় বাংলাদেশ সফরের স্মৃতিচারণা করে প্রধানমন্ত্রী ইশিবা বলেন, বাংলাদেশ ও এর জনগণের প্রতি জাপানের গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে।

তিনি পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আগ্রহও প্রকাশ করেন।