ঢাকা , শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
ত্রৈমাসিক চলনবিলের সময় পত্রিকার প্রিন্ট,অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়া  জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

পাবনার ফরিদপুরে ৭০০ বছরের আধ্যাত্মিক বাতিঘর

পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলায় অবস্থিত হযরত শেখ শাহ্ ফরিদ মক্কী (রহ:) এর মাজার শরীফ বহু মুসলমানের জন্য এক পবিত্র তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। জনশ্রুতি অনুযায়ী, প্রায় সাড়ে সাতশো বছর পূর্বে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি এ অঞ্চলে আগমন করেন এবং ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক ও মানবিক কার্যক্রমের মাধ্যমে এই জনপদের মানুষের হৃদয় জয় করেন। ফরিদপুর উপজেলার নামকরণটি তার নাম অনুযায়ী হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।

প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী ‎হযরত শেখ শাহ্ ফরিদ গঞ্জে গাফ্ফার আল-মক্কী (রহ:) সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার নামের শেষে “আল-মক্কী” যুক্ত হয়েছে মূলত তার জন্মস্থানের কারণে। ইরাকের বাগদাদে গিয়ে তিনি গাউছে আজম বড়পীর হযরত শেখ সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী (রহ:) এর বংশধর ও সুফি সাধক হযরত শাহ্ মখদুম রূপোশ (রহ:) এর কাছে আধ্যাত্মিক শিক্ষা গ্রহণ করেন।

‎৬৮৭ হিজরি তথা ১২৮৮ খ্রিস্টাব্দে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি বাংলায় আগমন করেন। কথিত আছে, পদ্মা নদী হয়ে কুমিরের পিঠে চড়ে চারঘাট হয়ে বড়াল নদী পেরিয়ে বর্তমান পাবনার ফরিদপুর উপজেলার পার-ফরিদপুর এলাকায় তিনি এসে পৌঁছেন। সে সময় এলাকাটি ছিল ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ।

‎ফরিদপুরে এসে তিনি প্রথমে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, যা আজও তাঁর হুজরা শরীফ হিসেবে পরিচিত। এখান থেকেই তিনি ইসলামের আলো ছড়ান এবং বহু মানুষকে ইসলামের পথে আহ্বান করেন। তার বর্ণিত আধ্যাত্মিক ক্ষমতার বহু নিদর্শন আজও প্রবীণদের মুখে শোনা যায়। বিশেষভাবে পদ্মা নদীর কুমিরেরা তার নির্দেশ পালন করত বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।

‎প্রবীণদের ভাষ্য অনুযায়ী, এক সময় কুমিরেরা নিয়মিতভাবে তাঁর মাজার শরীফ সংলগ্ন নদীতে ভেসে উঠত, তবে এখন আর তাদের দেখা যায়না।


‎হযরত শেখ শাহ্ ফরিদ মক্কী (রহ:) এর প্রতি সম্মান জানিয়ে ভারতের ফুরফুরা শরীফের দাদা হুজুর হযরত আবু বকর সিদ্দিকী (রহ:) ও তাঁর খলিফাগণ, মাদারীপুরের হযরত আলাউদ্দীন বিন নূরী (রহ:) প্রমুখ ওলি-আউলিয়াগণ মাজার জিয়ারতে আসতেন।

‎২০১১ সাল থেকে স্থানীয় উদ্যোগে প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের তৃতীয় বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার তার স্মরণে বাৎসরিক ওরশ শরীফ পালন করা হচ্ছে। এতে কোরআন তিলাওয়াত, মিলাদ মাহফিল, ওয়াজ-নসিহত এবং তবারক বিতরণ করা হয়। ২০১৫ সাল থেকে কাদরীয়া দরবার শরীফের পীর ইসমাইল হোসেন আল-কাদরীও এ আয়োজনে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে আসছেন।

‎এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ইব্রাহীম হোসেন খান ও ডা: আব্দুল কাশেম সরকারসহ অনেকেই জানান তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনার গল্প শুনেছেন।

‎হযরত শেখ শাহ্ ফরিদ মক্কী (রহ:) আজও এলাকাবাসীর নিকট শুধুমাত্র এক ধর্মীয় ব্যক্তিত্বই নন, বরং তারা তাকে আধ্যাত্মিক অভিভাবক হিসেবে বিবেচনা করেন।

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ধারের নামে ঋণের ফাঁদ পা দিলেই মাথায় হাত কেরানীগঞ্জের গ্রামে গ্রামে ঋণজাল

পাবনার ফরিদপুরে ৭০০ বছরের আধ্যাত্মিক বাতিঘর

আপলোড সময় : ০১:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলায় অবস্থিত হযরত শেখ শাহ্ ফরিদ মক্কী (রহ:) এর মাজার শরীফ বহু মুসলমানের জন্য এক পবিত্র তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। জনশ্রুতি অনুযায়ী, প্রায় সাড়ে সাতশো বছর পূর্বে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি এ অঞ্চলে আগমন করেন এবং ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক ও মানবিক কার্যক্রমের মাধ্যমে এই জনপদের মানুষের হৃদয় জয় করেন। ফরিদপুর উপজেলার নামকরণটি তার নাম অনুযায়ী হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।

প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী ‎হযরত শেখ শাহ্ ফরিদ গঞ্জে গাফ্ফার আল-মক্কী (রহ:) সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার নামের শেষে “আল-মক্কী” যুক্ত হয়েছে মূলত তার জন্মস্থানের কারণে। ইরাকের বাগদাদে গিয়ে তিনি গাউছে আজম বড়পীর হযরত শেখ সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী (রহ:) এর বংশধর ও সুফি সাধক হযরত শাহ্ মখদুম রূপোশ (রহ:) এর কাছে আধ্যাত্মিক শিক্ষা গ্রহণ করেন।

‎৬৮৭ হিজরি তথা ১২৮৮ খ্রিস্টাব্দে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি বাংলায় আগমন করেন। কথিত আছে, পদ্মা নদী হয়ে কুমিরের পিঠে চড়ে চারঘাট হয়ে বড়াল নদী পেরিয়ে বর্তমান পাবনার ফরিদপুর উপজেলার পার-ফরিদপুর এলাকায় তিনি এসে পৌঁছেন। সে সময় এলাকাটি ছিল ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ।

‎ফরিদপুরে এসে তিনি প্রথমে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, যা আজও তাঁর হুজরা শরীফ হিসেবে পরিচিত। এখান থেকেই তিনি ইসলামের আলো ছড়ান এবং বহু মানুষকে ইসলামের পথে আহ্বান করেন। তার বর্ণিত আধ্যাত্মিক ক্ষমতার বহু নিদর্শন আজও প্রবীণদের মুখে শোনা যায়। বিশেষভাবে পদ্মা নদীর কুমিরেরা তার নির্দেশ পালন করত বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।

‎প্রবীণদের ভাষ্য অনুযায়ী, এক সময় কুমিরেরা নিয়মিতভাবে তাঁর মাজার শরীফ সংলগ্ন নদীতে ভেসে উঠত, তবে এখন আর তাদের দেখা যায়না।


‎হযরত শেখ শাহ্ ফরিদ মক্কী (রহ:) এর প্রতি সম্মান জানিয়ে ভারতের ফুরফুরা শরীফের দাদা হুজুর হযরত আবু বকর সিদ্দিকী (রহ:) ও তাঁর খলিফাগণ, মাদারীপুরের হযরত আলাউদ্দীন বিন নূরী (রহ:) প্রমুখ ওলি-আউলিয়াগণ মাজার জিয়ারতে আসতেন।

‎২০১১ সাল থেকে স্থানীয় উদ্যোগে প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের তৃতীয় বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার তার স্মরণে বাৎসরিক ওরশ শরীফ পালন করা হচ্ছে। এতে কোরআন তিলাওয়াত, মিলাদ মাহফিল, ওয়াজ-নসিহত এবং তবারক বিতরণ করা হয়। ২০১৫ সাল থেকে কাদরীয়া দরবার শরীফের পীর ইসমাইল হোসেন আল-কাদরীও এ আয়োজনে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে আসছেন।

‎এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ইব্রাহীম হোসেন খান ও ডা: আব্দুল কাশেম সরকারসহ অনেকেই জানান তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনার গল্প শুনেছেন।

‎হযরত শেখ শাহ্ ফরিদ মক্কী (রহ:) আজও এলাকাবাসীর নিকট শুধুমাত্র এক ধর্মীয় ব্যক্তিত্বই নন, বরং তারা তাকে আধ্যাত্মিক অভিভাবক হিসেবে বিবেচনা করেন।