1. admin@handiyalnews24.com : admin :
  2. tenfapagci1983@coffeejeans.com.ua : cherielkp04817 :
  3. ivan.ivanovnewwww@gmail.com : leftkisslejour :
   
চাটমোহর,পাবনা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৪ অপরাহ্ন

পানিফল চাষে সাফল্য কৃষকের মুখে হাঁসি

হান্ডিয়াল নিউজ
  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৩ , ১.০৭ পূর্বাহ্ণ
  • ১১৬ বার পড়া হয়েছে

পানিফল চাষে সফলতা অর্জন করেছেন কৃষক। পতিত জমিতে পানিফল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ কৃষক। দেওয়ানগঞ্জ অপেক্ষাকৃত নিচু ভূমি হওয়ায় অল্প পানি বৃদ্ধির কারণে এই অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে ডুবে থাকে।

ফলে এ অঞ্চলের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কাঙ্ক্ষিত ফসল সংগ্রহ করতে পারেন না। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন তারা। আবার অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণেও বিভিন্ন জায়গায় পানি বেধে যায়। যার ফলে কৃষকরা মৌসুমি ফসল উৎপাদন করে পান না সঠিক অর্থ।

তাই এ অঞ্চলের কৃষকরা তাদের পানির নিচে ডুবে থাকা পতিত জমিতে বিকল্প ফসল হিসেবে পানিফল চাষ বেছে নিয়েছে। ফসলে অধিক লাভ হওয়ায় ইতিমধ্যেই এলাকায় পানিফল চাষে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

দীর্ঘদিন থেকে এ অঞ্চলের কৃষকরা পানিফল চাষ করে আসছেন। বর্তমানে অধুনিকতায় কৃষকরা পানিফল বেশি সংগ্রহ করতে পারছেন। কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করেছেন উপজেলার কৃষি অফিস। কৃষকদের যে কোনো প্রয়োজনে সবসময় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তারা। তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে পানিফল চাষ এ অঞ্চলের জনপ্রিয় চাষাবাদ পদ্ধতি হয়ে উঠেছে।

পানিফল সংগ্রহের উত্তম সময় এখন। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর পানিফলের বাম্পার ফলন হয়েছে। পানিফলের বাম্পার ফলনে চাষিদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। অন্যান্য জমির মতই পতিত জমিগুলোতে সমান ফসল উৎপাদন করা যায়। ফলে চাষিদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় না। অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে পানি ফলের চাষ। সুস্বাদু এ ফলটি বাজারজাতকরণ খুবই সহজ। জলাবদ্ধ এলাকায় পতিত জমিতে খুব সহজেই চাষ করা যায় এ ফলটি। অল্প খরচ করে উৎপাদন বেশি। লাভজনক হওয়ায় পানি ফলের চাষে ঝুঁকছে এখানকার চাষিরা।

আগামী ২০২৩ সাল দুর্ভিক্ষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় সামান্য পরিমাণ জমিও যেন খালি পড়ে না থাকে এমন নির্দেশনা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। দেশের যেসব উপজেলার জমিগুলোতে সারাবছর পানি জমে থাকে সেই সব জমিতে নতুন সম্ভাবনাময় ফসল হচ্ছে পানি ফল চাষ। প্রায় ৩ হাজার বছর পূর্বে পানিফল চীনে চাষাবাদ শুরু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। বিগত কয়েক দশক থেকে আমাদের দেশেও পানি ফলের চাষ হচ্ছে। কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় এর চাষাবাদ পদ্ধতি অল্পদিনেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।

দেশে প্রথম পানিফল চাষ শুরু হয় জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে। অল্প সময় ও কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় পানিফল চাষে অনেক আগ্রহী হয়ে উঠেছে চাষিরা। উপজেলায় পানিফল উৎপাদনে সফলতা পাওয়ায় অন্যান্য উপজেলার চাষিরা অনুপ্রাণিত হয়ে চাষাবাদ পদ্ধতি শিখে তাদের পতিত জমিতে পানিফল চাষ শুরু করেছে।

স্থানীয় নাম ‘সিঙ্গারা’, অনেকই চিনেন ‘পানিফল’ হিসেবে। তাছাড়াও নানা জায়গায় বাহারি সব নাম রয়েছে। ওয়াটার কালট্রপ, বাফেলো নাট, ডেভিল পড ইত্যাদি। আবার ইংরাজিতে একে “ওয়াটার চেস্টনাট”ও বলা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘ট্রাপা নাটানস’। এটি কেবল হাঁটু বা কোমর পানিতেই জন্মায়। দেখতে খানিকটা বাজারে তৈরি সিঙ্গারা মতো হওয়ায় অনেকেই সিঙ্গারা বলেও চিনেন।

পানিফল চাষে সার-কীটনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না। ফলে চাষিদের খরচ কম। পতিত জলাশয়ে চারা রোপণ করে শুধুমাত্র ভাল পরিচর্যায় এর ভালো ফলন পাওয়া যায়। প্রতি বিঘা জমি চাষে তিন-চার হাজার টাকা খরচ হয়। আর ফল স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে ২৫-৩০ হাজার টাকা। সুতরাং লাভ প্রায় ৭ গুণ। বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ পানিফলের গাছ ৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পানির নীচে মাটিতে শিকড় থাকে পানির উপর পাতাগুলি ভাসতে থাকে। বিভিন্ন পতিত ডোবা, খাল, পুকুরের অল্প পানিতেই পানিফল চাষ করা যায়। যার কারণে এই চাষে উৎসাহ পাচ্ছে চাষিরা।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় ১০৫ হেক্টর জমিতে পানি ফলের চাষ করেছে কৃষক। বিঘাপ্রতি ১৮-২০ মণ এবং চলিত বছরে প্রায় ৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা বিনিয়োগ হতে পারে এবছর। উপজেলা কৃষি বিভাগ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে পানিফল চাষের বিস্তার ঘটাতে। যে কোনো পতিত খাল, পুকুর, ডোবা অথবা জলাশয়ে চাষ করা সম্ভব এই ফল। এর উৎপাদন খরচ অন্যান্য ফসলের তুলনায় তুলনামূলক কম।

পানিফল চাষি সুরুজ মিয়া বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পানিফলের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিঘা প্রতি তিন থেকে চার হাজার টাকা খরচ করে মণ প্রতি হাজার বারোশ টাকা বিক্রি করে বিঘায় ১৫ হাজার টাকা লাভ পাইছি। সামনের বছর আমার বাকি জমিতেও চাষ করবো।

ফরহাদ হোসেন বলেন, আমি ২ বিঘা জমিতে পানিফল চাষ করে ৩০ মণ ফল পেয়েছি। এতে প্রায় ৩২ হাজার টাকা হাতে পেয়েছি। খরচ হয়েছে ৭ হাজার টাকা। অল্প পুঁজি ব্যয় করে লাভ বেশি। খেতেও সুস্বাদু।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদের পাশের বিলেই চাষ হয় পানিফল। এখানে চাষ করা কৃষক হাফিজুর রহমান বলেন, পানিফল চাষের খরচ হয়েছে বিঘা প্রতি ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা। আশা করি এবার প্রতি বিঘাতে ফল বিক্রি করতে পারবো ১৬ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা। এই ফল চাষে বর্তমানে আমাদের আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলেছে। অঞ্চলে বদ্ধ জলাশয়ে পানিফল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে অনেক হতদরিদ্র পরিবার।

ডোবা আর বদ্ধ জলাশয়ে পানিফল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে এই অঞ্চলের অনেক হতদরিদ্র মানুষ। অল্প পুঁজি ব্যয় করে পানিফল চাষের মাধ্যমে দু’পয়সা বাড়তি আয় করে অভাবের সংসারে সচ্ছলতা এনেছে প্রায় শতাধিক পরিবার। পানিফল যেমন শরীরের জন্য বেশ উপকারী। খেতেও সুস্বাদু। এই ফল শরীরের পুষ্টির অভাব দূর করে, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে করতে সাহায্য করে, রক্ত আমাশা বন্ধ করে, দৈহিক বিশেষ শক্তিবর্ধক, নারীদের মাজুরতার আধিক্যজনিত সমস্যা ঠিক করতে খুবই উপকারী।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, আমাদের কৃষি বিভাগ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে পানিফল চাষের বিস্তার ঘটাতে। যে কোনো পতিত খাল, পুকুর, ডোবা অথবা জলাশয়ে চাষ করা সম্ভব এ ফসল। তুলনামূলক এর উৎপাদন খরচ কম। এবার বন্যার প্রবলতা কম থাকায় পানিফল চাষের আগ্রহ পাচ্ছেন এই উপজেলার চাষিরা।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি। সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২৪ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।