রাতের আঁধার সরতে শুরু করেছে, পুব আকাশে আলোর রেখা ফুঁটতেই কুমড়ো বড়ির গ্রামের নারী শ্রমিকদের ঘুম ভেঙে যায়। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন, কুমড়ো বড়ি তৈরি ও শুকোতে। রোদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সবাই টিন ও নেট জালের পাতে দেয়া কুমড়ো বড়ি নিয়ে ছুটছেন বাগানে, উঠোনের ফাঁকা জায়গায়।
চাটমোহরের দোলং গ্রাম, হান্ডিয়াল মাশকাটা ও টিবাপাড়া বর্তমানে কুমড়ো বড়ির গ্রাম নামে পরিচিত। এসব গ্রামের নারী-পুরুষ এখন মহাব্যস্ত কুমড়ো বড়ি বানাতে। শীতের শুরুতেই বেশি দামে বড়ি বেচা চাই এটাই কুমড়ো বড়ি গ্রামের নারী পুরুষের লক্ষ্য। শীতের শুরুতেই চাটমোহরের ঐতিহ্যবাহী এই সুস্বাদু তরকারিটি গৃহকোণে বানানো শুরু হয়।
চাটমোহরে প্রায় ৬০টি পরিবারের গৃহিনীরা কুমড়ো বড়ির ব্যবসা করে বাড়তি আয় করে সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন। বছরের ছয় মাসে এ ব্যবসায় এখন পরিবারগুলোর চালচিত্র বদলে গেছে।
প্রতিটি পরিবারের ছেলেমেয়ে স্কুল-কলেজে পড়ছে। এক সময়ে ভূমিহীন অনেক পরিবার জমি কিনে নতুন টিনের আধাপাকা ঘর তুলে বাড়ি করেছেন। এক সময় অভাবী বিদ্যুৎহীন মহল্লাটি এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়েছে। সেই সঙ্গে নারী শ্রমিকরা স্বচ্ছলতার আলো এনেছেন সংসারে।
চাটমোহর-হামকুড়িয়া সড়কের পাশে হান্ডিয়াল মাশকাটা গ্রামটিতে শিতের সকালে গিয়ে কথা হয় এ পেশার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন নারী-পুরুষের সাথে। কুমড়ো বড়ির গ্রামে দেখা যায়, সবাই কুমড়ো বড়ি বানিয়ে নেট জালের পাত ও টিনের পাত ও টিনের চালে বাড়ির আঙ্গিনায় বা বাগানের ফাঁকা জায়গায় রোদে শুকাতে দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে কুমড়ো বড়ি গ্রামের আলেয়া বেগমের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি অ্যাংকর ডাল ৭০ টাকা, খেসারি ডাল ৭৫ টাকা ও ছোলার ডাল ৯০ টাকায় কিনছেন তারা। এক কেজি এ্যাংকর বড়ি বানাতে সব মিলিয়ে খরচ হয় প্রায় ৮০ টাকা, পাইকারী বিক্রি হয় ১০০-১১০ টাকা কেজি দরে। তবে ডাউল ও বড়ির মানভেদে খুচরা বিক্রি হয় হাটে-বাজারে ১২০-১৫০ টাকা কেজি।
দোলং গ্রামের কারিগর উষা রাণীর সঙ্গে কথা হলে সে জানান, এই কুমড়ো বড়ি বানানোর জন্য ডাউল (ডাল) বেটে বেসন বানানো, কুমড়ো বড়ি তৈরি ও শুকানোসহ সব কাজ আমরা মেয়েরা করি। তবে বর্তমানে ডাউল ভাঙানো মেশিনে এ কাজটি বেশি করা হচ্ছে। এতে সময় বাঁচে বেশি।
এ পেশা ছোট হলেও পরিশ্রম বেশী, তবে মেয়েরা ঘরে বসেই এ কাজ করতে পারে। কুমড়ো বড়ি ব্যবসায় তুলনামূলক লাভ অনেক। আগে সব রকম ডালের বড়ি বানানো হতো। ডালের দাম বেশি হওয়ায় এখন শুধু অ্যাকর ডাউলের বড়ি বানানো হচ্ছে। কুমড়ো বড়ি তৈরি বিশেষ করে বাংলা শ্রাবণ থেকে শুরু হয়ে মাঘ বা ফালগুন মাসে গিয়ে শেষ হয়। বাকি সময় গ্রামের নারীরা অন্য কাজ করেন।
টিবাপাড়া গ্রামের কারিগর নুরুন্নাহার জানান, স্থানীয় ক্রেতাদের পাশাপাশি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ কুমড়ো বড়ি কিনে নিয়ে যান। এমনকি চাটমোহরে তৈরি সুস্বাদু কুমড়ো বড়ি প্রবাসীরাও বিদেশে যাওয়ার সময় কিনে নিয়ে যান। দিন দিন এ তরকারি বিদেশেও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।