ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশঃ
ত্রৈমাসিক চলনবিলের সময় পত্রিকার প্রিন্ট,অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়া  জরুরি  সংবাদকর্মী আবশ্যক। আবেদন করুন- ই-মেইলে onlynews.calo@gmail.com

চলনবিলের মধু এখন বিদেশে

মৌচাষি মধু সংগ্রহে ব্যস্ত, চলনবিল অঞ্চলের চাটমোহর হান্ডিয়াল দরাপপুর মাঠ থেকে তোলা ছবি

চলনবিলঞ্চে সরিষা জমি এখন মধু উৎপাদনের অন্যতম উৎসে পরিণত হয়েছে। এই উৎস কাজে লাগিয়ে এবার প্রায় ২ হাজার মেট্রিকটন মধু সংগ্রহের সম্ভাবনা রয়েছে।

পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, সলঙ্গা ও উল্লাপাড়া আটটি উপজেলা নিয়ে চলনবিলের বিস্তীর্ণ এলাকায় এই শীত মৌসুমে মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের সমারোহ। এসব সরিষা খেতের পাশেই মৌচাষের বাক্স বসিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ মৌচাষিরা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মৌচাষিরা এভাবে মধু সংগ্রহ করছেন।

চলনবিল এলাকায় এবছর প্রায় দুই লাখ হেক্টর সরিষা আবাদ হয়েছে। যেসব সরিষার জমি থেকে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করেন, সেসব জমির সরিষার ফুলে সঠিকভাবে পরাগায়ন ঘটে। ফলে সরিষার ফলন ২৫-৩০ ভাগ বেড়ে যায়। মধু চাষের মাধ্যমে সরিষার ফলনও ভালো হয় বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

জানা যায়, সরিষা ফুল থেকে প্রতি বছর মধু সংগ্রহ করে লাভবান হন ভ্রাম্যমাণ মৌচাষিরা। এবারও তারা এসেছেন চলনবিলে। এখন মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে অস্থায়ী মধুর খামার গড়ে তুলেছেন। দেড় থেকে দুই হাজার মেট্রিক টন মধু সংগ্রহের লক্ষ্যে প্রায় এক হাজার মৌচাষি (খামারী) এখন বাক্স নিয়ে চলনবিলের বিভিন্ন মাঠে অবস্থান করছেন। গোটা চলনবিলে এক লাখ ২০ হাজারের বেশি মৌমাছির বাক্স স্থাপন করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা শ্যামনগর এলাকা থেকে আসা খামারি নুর হোসেন জানান, এ বছর তিনি ২২০টি মৌ বাক্স বসিয়েছেন। যা থেকে প্রায় ১৫০ মন মধু উৎপাদনের আশা করছেন।

সাতক্ষীরা থেকে আসা মৌচাষি বেল্লাল হোসেন বলেন, তিনিও ১৬০টি বাক্স বসিয়েছেন। আশা করছেন আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার অনেক বেশি মধু পাওয়া যাবে। তাদের সংগৃহীত এসব খাঁটি মধু ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মৌ বক্স

মুন্সীগঞ্জ থেকে আসা পাপিয়া মৌমাছি খামারের স্বতাধিকারী তারক কুমার মন্ডল বলেন, স্থানীয় ক্রেতাদের পাশাপাশি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ মধু কিনে নিয়ে যান। চলনবিল অঞ্চলের সরিষা ফুলের খাঁটি মধু এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও যাচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানি এই মধু কিনে বিদেশে বিক্রি করছেন। প্রবাসীরাও বিদেশে যাওয়ার সময় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। দিন দিন সরিষা ফুলের মধু বিদেশেও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

উত্তরবঙ্গ মৌচাষি সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রতিবছরের মত মৌচাষিরা এবারও চলনবিল থেকে কোটি কোটি টাকার মধু সংগ্রহ করবেন। চলনবিলের খাঁটি মধু সংগ্রহের জন্য প্রাণ, স্কয়ার, এপিসহ বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানির প্রতিনিধিরা ইতোমধ্যেই মধু ক্রয় শুরু করেছেন। এ বছর প্রায় দুই হাজার মেট্রিকটন মধু সংগ্রহ হবে। যার বাজার মুল্য হবে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা।

তিনি জানান, চলতি বছর প্রতি কেজি মধু খুরচা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা ও পাইকারি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ক্ষুদ্র কুটির শিল্প করপোরেশন মৌ চাষে খামারীদের সহজ শর্তে ও সল্প সুদে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করছেন।

নিউজ ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ধারের নামে ঋণের ফাঁদ পা দিলেই মাথায় হাত কেরানীগঞ্জের গ্রামে গ্রামে ঋণজাল

চলনবিলের মধু এখন বিদেশে

আপলোড সময় : ০৬:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২২

চলনবিলঞ্চে সরিষা জমি এখন মধু উৎপাদনের অন্যতম উৎসে পরিণত হয়েছে। এই উৎস কাজে লাগিয়ে এবার প্রায় ২ হাজার মেট্রিকটন মধু সংগ্রহের সম্ভাবনা রয়েছে।

পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, সলঙ্গা ও উল্লাপাড়া আটটি উপজেলা নিয়ে চলনবিলের বিস্তীর্ণ এলাকায় এই শীত মৌসুমে মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের সমারোহ। এসব সরিষা খেতের পাশেই মৌচাষের বাক্স বসিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ মৌচাষিরা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মৌচাষিরা এভাবে মধু সংগ্রহ করছেন।

চলনবিল এলাকায় এবছর প্রায় দুই লাখ হেক্টর সরিষা আবাদ হয়েছে। যেসব সরিষার জমি থেকে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করেন, সেসব জমির সরিষার ফুলে সঠিকভাবে পরাগায়ন ঘটে। ফলে সরিষার ফলন ২৫-৩০ ভাগ বেড়ে যায়। মধু চাষের মাধ্যমে সরিষার ফলনও ভালো হয় বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

জানা যায়, সরিষা ফুল থেকে প্রতি বছর মধু সংগ্রহ করে লাভবান হন ভ্রাম্যমাণ মৌচাষিরা। এবারও তারা এসেছেন চলনবিলে। এখন মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে অস্থায়ী মধুর খামার গড়ে তুলেছেন। দেড় থেকে দুই হাজার মেট্রিক টন মধু সংগ্রহের লক্ষ্যে প্রায় এক হাজার মৌচাষি (খামারী) এখন বাক্স নিয়ে চলনবিলের বিভিন্ন মাঠে অবস্থান করছেন। গোটা চলনবিলে এক লাখ ২০ হাজারের বেশি মৌমাছির বাক্স স্থাপন করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা শ্যামনগর এলাকা থেকে আসা খামারি নুর হোসেন জানান, এ বছর তিনি ২২০টি মৌ বাক্স বসিয়েছেন। যা থেকে প্রায় ১৫০ মন মধু উৎপাদনের আশা করছেন।

সাতক্ষীরা থেকে আসা মৌচাষি বেল্লাল হোসেন বলেন, তিনিও ১৬০টি বাক্স বসিয়েছেন। আশা করছেন আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার অনেক বেশি মধু পাওয়া যাবে। তাদের সংগৃহীত এসব খাঁটি মধু ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মৌ বক্স

মুন্সীগঞ্জ থেকে আসা পাপিয়া মৌমাছি খামারের স্বতাধিকারী তারক কুমার মন্ডল বলেন, স্থানীয় ক্রেতাদের পাশাপাশি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ মধু কিনে নিয়ে যান। চলনবিল অঞ্চলের সরিষা ফুলের খাঁটি মধু এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও যাচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানি এই মধু কিনে বিদেশে বিক্রি করছেন। প্রবাসীরাও বিদেশে যাওয়ার সময় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। দিন দিন সরিষা ফুলের মধু বিদেশেও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

উত্তরবঙ্গ মৌচাষি সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রতিবছরের মত মৌচাষিরা এবারও চলনবিল থেকে কোটি কোটি টাকার মধু সংগ্রহ করবেন। চলনবিলের খাঁটি মধু সংগ্রহের জন্য প্রাণ, স্কয়ার, এপিসহ বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানির প্রতিনিধিরা ইতোমধ্যেই মধু ক্রয় শুরু করেছেন। এ বছর প্রায় দুই হাজার মেট্রিকটন মধু সংগ্রহ হবে। যার বাজার মুল্য হবে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা।

তিনি জানান, চলতি বছর প্রতি কেজি মধু খুরচা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা ও পাইকারি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ক্ষুদ্র কুটির শিল্প করপোরেশন মৌ চাষে খামারীদের সহজ শর্তে ও সল্প সুদে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করছেন।