1. admin@handiyalnews24.com : admin :
  2. tenfapagci1983@coffeejeans.com.ua : cherielkp04817 :
  3. ivan.ivanovnewwww@gmail.com : leftkisslejour :
   
চাটমোহর,পাবনা শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৬ পূর্বাহ্ন

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং : হাতিয়ায় এখনও খোলা আকাশের নিচে অনেকে

হান্ডিয়াল নিউজ ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২ , ১১.৩৪ পূর্বাহ্ণ
  • ১৪৬ বার পড়া হয়েছে

কন কনে শীত। শূন্য ভিটার ওপর ত্রিপল দিয়ে তাঁবু তৈরি করে বসবাস করছে মানুষ। উঠানে এখনও এলোমেলোভাবে পড়ে আছে জোয়ারের পানিতে কুড়িয়ে পাওয়া ঘরের আসবাবপত্র। পাশে কয়েকটি নারকেল গাছ দাঁড়িয়ে আছে ঝড়ের চিহ্ন বহন করে। তীব্র ঝড়ে কয়েকটি গাছের মাঝখানে ভেঙে যাওয়া অংশ শুকিয়ে গেছে। বাড়ির ভিটা মাটিতে এখনও বড় বড় গর্তের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। পাশে জোড়াতালি দিয়ে তৈরি করা চালবিহিন ঘরে চলছে রান্নার কাজ।

এভাবেই পরিবার নিয়ে দিনানিপাত করছেন নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপের ৯নং ওয়ার্ডের জেলে আবুল কালাম।

গত অক্টোবরে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে ভিটামাটি হারায় পরিবারটি। রাতে জোয়ারের তীব্রতা বেশি দেখে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গিয়েছিলেন সবাই। সকালে বাড়ি এসে দেখেন শূন্য ভিটা পড়ে আছে। পরে কুড়িয়ে পেয়েছেন কিছু আসবাবপত্র পেয়েছেন।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও মেরামত করতে পারেননি ঘরটি। আর্থিক অবস্থা দুর্বল থাকায় শূন্য ভিটার ওপর নৌকায় ব্যবহার করা ত্রিপল লাগিয়ে কোনোমতে বসবাস করছেন ৭ সদস্যের পরিবারটি। শুধু আবুল কালামের পরিবার নয়, নিঝুম দ্বীপ ৯নং ওয়ার্ডের মুন্সি গ্রামের অনেকের চিত্র একই ধরনের।
২৪ ডিসেম্বর সকালে জেলে আবুল কালামের সঙ্গে তার বাড়িতে কথা হয় প্রতিবেদকের। আবুল কালাম জানান, তিন ছেলে, এক নাতি, এক পুত্রবধূ ও স্ত্রীকে নিয়ে সাত সদস্যের পরিবার তার। ছেলেরা সবাই নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ঘূর্ণিঝড়ের পর নদীতে তেমন মাছ পাওয়া যায়নি। উপার্জন না থাকায় ঘরটি মেরামত করতে পারেননি। নিজেদের নৌকায় ব্যবহার করা দুটি ত্রিপল এনে কোনোভাবে শূন্য ভিটার ওপর বসবাস করতে হচ্ছে। রাতে প্রচণ্ড শীতে থাকা যায় না। কুড়িয়ে পাওয়া কয়েকটি কাঠের অংশ মাটিতে পেতে তার ওপর কাঁথা বিছিয়ে শুতে হয়। সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পাননি তিনি।

শুধু আবুল কালাম নয়, একই চিত্র মুন্সি গ্রামে বসবাস করা অনেকের। কালামের বাড়ির পাশে বসবাস করেন জেলে জাহার হোসেন (৬০)। জোয়ারের পানিতে ভেসে যাওয়া ঘরের মেরামতের কাজ করছেন তিনি।

জাহার হোসেন বলেন, জোয়ারে তার ঘরটিও ভেসে যায়। বাজারের পাশে বড় ছেলের বাড়ি থেকে গাছ কেটে কিছু কাঠ এনে ঘর মেরামতের কাজ করছেন। ঘরের ভিটার ওপর কাঠের পালা ও চাল লাগিয়ে রেখেছেন। ১৫ দিন ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। অর্থের অভাবে টিন লাগানো যাচ্ছে না। এখনও এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে বড় ছেলের বাড়িতে বসবাস করছেন।

ঝড়ের পর সরকারের দেওয়া ১০ কেজি চাল ছাড়া কিছুই পাননি বলে জানান জাহার।

মুন্সি গ্রামের অনেকে জানান, ঝড়ে নিঝুম দ্বীপে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই গ্রামে বসবাস করা বাসিন্দারা। নদীর একবারে তীরে হওয়ায় বাতাস ও জোয়ারের প্রথম ধাক্কাটা লাগে তাদের। বেড়িবাঁধ না থাকায় অস্বাভাবিক জোয়ারের ৬ থেকে ৭ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায় পুরো গ্রাম। একদিকে জোয়ার, অন্যদিকে বাতাসের তীব্রতা বেশি থাকায় নিজের ভিটায় টিকে থাকা যায়নি।

নিঝুম দ্বীপ বন্দরটিলা বাজার থেকে পূর্বদিকে গেলে দেখা যায় অনেকে ঘর মেরামত করছেন। কেউ ভিটার ওপর দোচালা ঘর তৈরি করছেন। এখানে বেশির ভাগ মানুষ নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ঘূর্ণিঝড়ের পর নদীতে তেমন কোনো মাছ পাওয়া যায়নি। এ জন্য ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি এখানকার বাসিন্দারা।

নিঝুম দ্বীপ ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য চাঁন মিয়া জানান, সিত্রাংয়ে এই গ্রামটি একেবারে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। অনেকে এখনও ঘরবাড়ি মেরামত করতে পারেনি। নদীতে এখন মাছ ধরার মৌসুম চলে এসেছে। ছোট-বড় সবাই এই কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সরকারিভাবে সিত্রাংয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আর্থিক কোনো সহযোগিতা আসেনি। তবে অনেককে রেসন কার্ড, মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের প্রণোদনার চাল দেওয়া হয়েছে।

নিঝুম দ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান দিনাজ উদ্দিন বলেন, সিত্রাংয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসা পরিবারগুলোকে শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে। এ জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে মাত্র ১৪ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নিঝুম দ্বীপে ১০টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৫ হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছিল। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের পর ৬০০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। তবে একাধিকবার বলার পরও ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত পরিবারের জন্য কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজনকে শুকনা খাবার খাওয়ানোর জন্য তাৎক্ষণিকভাবে দুই লাখ টাকা বরাদ্ধ দেওয় হয়। যা প্রতিটি ইউনিয়নে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পরে দেওয়া ২৫ টান চাল বিভিন্ন ইউনিয়নে বণ্টন করা হয়েছে। তবে ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতির একটি তালিকা পাঠানো হলেও কোনো বরাদ্ধ দেওয়া হয়নি। তবে নিঝুম দ্বীপ মুন্সি গ্রামে জেলেপল্লিতে ব্যাপক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার বিষয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি। সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২৪ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।